রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মুড়ির সাদা ঠোঙায় গল্প লিখে পাঠান মানিক

সাইফুর রহমান

মুড়ির সাদা ঠোঙায় গল্প লিখে পাঠান মানিক

মানিকের বয়স তখন কত হবে? এই ধরুন মেরেকেটে ১৪ কিংবা ১৫। একদিন হঠাৎই বাড়ি থেকে নিখোঁজ! কয়েক দিন পেরিয়ে গেল মানিকের কোনো খোঁজ নেই। বাড়ির সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন। মা নীরা সুন্দরী দেবী তো কেঁদেকেটে অস্থির। অনেক খোঁজার পর মানিককে পাওয়া গেল টাঙ্গাইলের একটি নদীর ধারে যে নৌকোগুলো নোঙর করা থাকে, সেখানকার মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে। দুই বেলা তাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, গল্পগুজব ও গানবাজনা করে দিব্যি রয়েছেন মানিক। অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তবেই বাড়ি পাঠানো গেল তাকে। সেদিন হয়তো কেউই বুঝতে পারেনি মাঝির সঙ্গে, নদীর সঙ্গে ছেলেটির এই যে সম্পর্ক এ সম্পর্কের কারণেই একদিন জন্ম দেবেন ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ নামে বিখ্যাত এক উপন্যাসের।

এর ১১ কিংবা ১২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৩৬ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন তাঁর অন্যতম কালজয়ী উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। সম্পূর্ণ উপন্যাসটি মানিক অবশ্য স্মৃতি থেকেই লিখেছিলেন। আরেক বিখ্যাত লেখক তারাপদ রায় অবশ্য তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, পদ্মা নদী নয় বরং ধলেশ্বরীর জেলে-মাঝিদেরই মানিক কাছ থেকে দেখেছিলেন। তারাপদ রায়ের বাবা ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহপাঠী। এজন্যই হয়তো এ কথা জোর দিয়ে বলতে পেরেছেন তারাপদ রায়।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের বর্তমান লৌহজংয়ে। আমার মতে, পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের রসদ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীর মাঝিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করলেও উপন্যাসের চরিত্রদের মুখের ভাষা কিন্তু বিক্রমপুরের মানুষের। কারণ আমার মায়ের বাবার বাড়িও বিক্রমপুর কি না সেজন্য বলছি। মানিকের বাবা-মা নিজেদের মধ্যে কথোপকথন নিশ্চয়ই বিক্রমপুরের আঞ্চলিক ভাষায়ই করতেন। আমরা দেখি পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের গোড়াতেই কুবের খবর পায় তার একটি পুত্রসন্তান হয়েছে কিন্তু সে ঝাঁজিয়ে উঠে বলে, ‘পোলা দিয়া করুম কী, নিজগোর খাওন জোটে না, পোলা!’

দুই চোখ দিয়ে প্রকৃতি ও মানুষকে প্রগাঢ় করে দেখার শক্তি ও সামর্থ্য সবার থাকে না; কিন্তু মানিকের সেই শক্তি ও সামর্থ্য দুটোই ছিল। লেখালেখির জগতে মানিক কীভাবে এলেন সে গল্প হয়তো অনেকেরই জানা। তবে যেসব পাঠকের সেই কাহিনিটি অজানা তাদের জন্য সংক্ষেপে বলছি।

কলেজ ক্যান্টিনে একদিন মানিক ও তাঁর কতিপয় বন্ধু বসে আড্ডাবাজিতে মশগুল ছিলেন। তাদের মধ্যে হঠাৎ একজন বললেন, আজকাল পত্রিকার সম্পাদকরা নামিদামি লেখক ছাড়া কারও লেখা ছাপেন না। মানিক তাঁর সেই বন্ধুর কথায় একমত হলেন না। বললেন, ভালো লেখা হলে তাঁরা নিশ্চয়ই ছাপেন। তারপর সেই বন্ধুর সঙ্গে মানিক বাজি ধরলেন যে তিনি তাঁর লেখা গল্প ‘বিচিত্রা’য় ছাপাবেন। সে সময় কলকাতায় বিচিত্রা পত্রিকা ছিল অত্যন্ত বিখ্যাত এবং কেবল নামকরা লেখকরাই তাতে লিখতেন। বন্ধুর সঙ্গে বাজি ধরে মানিক লিখে ফেললেন তাঁর প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’ এবং সেটি বিচিত্রার সম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দেন। গল্পের শেষে নাম স্বাক্ষর করেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবে। সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় লেখাটি পাঠানোর চার মাস পর বিচিত্রায় ছাপেন। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গল্পটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামটি পরিচিত হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে। এর পর থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা পাঠাতে শুরু করেন তিনি। সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশের ফলে একাডেমিক পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল তাঁর। শেষাবধি শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে। সাহিত্য রচনাকেই তিনি তাঁর মূল পেশা হিসেবে বেছে নেন।

পরীক্ষায় বরাবর ভালো রেজাল্ট। কিন্তু কলেজে পড়ার সময়ই জড়িয়ে পড়লেন সক্রিয় বাম রাজনীতিতে। সেই সঙ্গে দিনরাত সাহিত্যচর্চা। কলেজের লেখাপড়া শিকেয় উঠল। যে ছেলে আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সেই ছেলে কি না বিএসসিতে পরপর দুবার ফেল! তখন পড়াশোনার যাবতীয় খরচ চালাতেন তাঁর বড় ভাই। ছোট ভাইয়ের রাজনীতি করার খবর পেয়ে বড় ভাই চিঠিতে লিখলেন, ‘তোমাকে ওখানে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়েছে, ফেল কেন করেছ, তার কৈফিয়ত দাও।’ উত্তরে মানিক লিখলেন, ‘গল্প উপন্যাস পড়া, লেখা এবং রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে দাদা লিখলেন, ‘তোমার সাহিত্যচর্চার জন্য খরচ পাঠানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়, নিজের পথ নিজে দেখ।’ টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলেন দাদা। উত্তরে মানিক লিখলেন, ‘আপনি দেখে নেবেন, কালে কালে লেখার মাধ্যমেই আমি বাংলার লেখকদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে স্থান করে নেব। রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের সমপর্যায়ে আমার নাম ঘোষিত হবে।’

১৬ বছর বয়সে মাকে হারানোর পর এমনিই জীবন হয়ে উঠেছিল ছন্নছাড়া, এবার বড় ভাই টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ায় শুরু হলো প্রকৃত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই। চলে এলেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের একটি মেসে। বাবা রইলেন মুঙ্গেরে ছোট ভাই সুবোধের কাছে। দিনরাত এক করে নাওয়াখাওয়া ভুলে তখন মানিক শুধু লিখছেন আর প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

১৯৩৫ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রান্ত হলেন মৃগীরোগে। অত্যধিক শারীরিক মানসিক পরিশ্রম ও অতিরিক্ত উত্তেজনাই ছিল এর প্রধান কারণ। তবু তাঁকে লিখে যেতে হয়েছে, কারণ ‘আজ এখন ওষুধ খেয়ে ঘুমালে কাল উনুনে হাঁড়ি চড়বে না।’ এ রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই শুরু করলেন অপরিমিত মদ্যপান। অতিরিক্ত এ মদ খাওয়াই একসময় তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এর মধ্যেই বিখ্যাত চিকিৎসক বিধান রায়ের পরামর্শে বিয়ে করলেন। ছেলেমেয়ে হলো। বাবাকে নিয়ে এলেন নিজের কাছে।

বরানগরে গোপাললাল ঠাকুর স্ট্রিটে সবাই মিলে ঠাসাঠাসি করে কোনোমতে থাকা। এসব পরিস্থিতির মধ্যেই তিনি লিখে চলেছেন একের পর এক যুগান্তকারী রচনা। এত লেখালেখি করেও সংসার যেন আর চলে না। বাধ্য হলেন চাকরি নিতে। কিন্তু কিছুদিন পর সেই চাকরি থেকেও ইস্তফা দিলেন। আবার পুরোদমে লেখা শুরু, সঙ্গে দারিদ্র্য। সে দারিদ্র্য যে কী ভয়ংকর তা জানা যায় মানিকের ডায়েরির একটি পৃষ্ঠা পড়লে। স্ত্রী ডলি অর্থাৎ কমলা এক মৃত সন্তান প্রসব করেছেন, আর মানিক ডায়েরিতে লিখছেন, ‘বাচ্চা মরে যাওয়ায় ডলি অখুশি নয়। অনেক হাঙ্গামা থেকে বেঁচেছে। বলল, বাঁচা গেছে বাবা, আমি হিসাব করেছি বাড়ি ফিরে মাসখানেক বিশ্রাম করে রাঁধুনি বিদায় করে দেব। অনেক খরচ বাঁচবে।’

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দারিদ্র্যের এক মর্মস্পর্শী বিবরণ পাওয়া যায় বিখ্যাত লেখক নরেন্দ্রনাথ মিত্রের স্মৃতিকথায়। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের কাছে নিশীথ নামে এক ভক্ত আসতেন প্রায়ই। সেই নিশীথ আবার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অনেক কাছের মানুষ ছিলেন। নিশীথ একদিন নরেন্দ্রনাথ মিত্রকে বললেন, আমরা মানিকবাবুর জন্য একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে সেখান থেকে উপার্জিত কিছু টাকা তুলে দিতে চাই তাঁর হাতে। কিন্তু আমাদের সবারই ইচ্ছা মানিকবাবু যদি আবার কিছু মনে করেন এজন্য প্রস্তাবটা আপনি যদি করেন তাহলে ভালো হয়। অনেক অনুরোধ-উপরোধের পর অবশেষে রাজি হলেন নরেন্দ্রনাথ মিত্র।

নরেন্দ্রনাথ মিত্র লিখেছেন, ‘কিন্তু এ কি ঘরদোর, আসবাবপত্রের এ কি ছন্নছাড়া চেহারা! সস্তা এক জোড়া টেবিল চেয়ার। একপাশে আচ্ছাদনহীন একখানা তক্তপোশ। দেয়ালে ঠেস-দেওয়া কাচভাঙা আলমারিতে এলোমেলোভাবে রাখা একরাশ বই। বেশির ভাগই ছেঁড়াখোঁড়া পুরনো মাসিকপত্র। বইপত্রে পাণ্ডুলিপির এলোমেলো পাতায় অগোছালো অপরিচ্ছন্ন টেবিল। তক্তপোশের ওপর পাণ্ডুলিপির খানিকটা অংশ পড়ে আছে। আমি বিস্মিত হলাম। মানিকবাবুর ঘরের এ চেহারাই যেন সবচেয়ে মানানসই। এ যেন বাইরের ঘর নয়, স্রষ্টার মনের অন্দরমহল। সেখানে ঝড়ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি-বিদ্যুতের বিরাম নেই। পা ঝুলিয়ে তক্তপোশের ওপর আমি আর নিশীথ পাশাপাশি বসলাম। মানিকবাবু চেয়ারটা ঘুরিয়ে নিয়ে আমাদের দিকে চেয়ে বললেন, কী ব্যাপার? ব্যাপার আগে না বলে গোড়ায় খানিকক্ষণ ভূমিকা করে নিয়ে বললাম, কেমন আছেন? মানিকবাবু সংক্ষেপে বললেন, ভালো। মাঝখানে শরীরটা বোধহয় খারাপ ছিল? তিনি তাড়াতাড়ি বললেন, এখন ভালো আছি। শরীরের কথা ছেড়ে সাহিত্যের কথা ধরলাম। বললাম, কী লিখছিলেন? মানিকবাবু বললেন, একটা উপন্যাস।

আমি বললাম, অনেক দিন গল্পটল্প কিছু লেখেন না। এ উপন্যাস শেষ করে বোধহয় কিছু লিখতে পারেন? মানিকবাবু বললেন, তার কি কোনো মানে আছে? উপন্যাস লিখতে লিখতে যদি ছোটগল্প লেখার ইচ্ছা হয় তাহলে গল্পই লিখব। উপন্যাস লিখলে বেশি টাকা পাব বলে কি উপন্যাসই লিখব? সংসারের প্রয়োজন, পাবলিশারের তাগিদ কিছুতেই লেখকের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না। আমি বললাম, সত্যিই তো, হাত বাঁধো পা বাঁধো, মন বাঁধে কে! তিনি একটু হেসে বললেন, চা হবে?

এবার মানিকবাবুকে বললাম নিশীথদের পরিকল্পনার কথা। তিনি শুনে বললেন, বেশ তো। কিন্তু দেখবেন মশাই, টাকা দেওয়ার আশা দিয়ে শেষ পর্যন্ত নিরাশ করবেন না যেন। আমি হয়তো-ও-টাকা হিসেবের মধ্যে ধরব কিন্তু শেষে দেখব সব ফাঁক। তাতে বড় অসুবিধে হয়। নিশীথ বলল, না না, তা হবে না। মানিকবাবুর এই স্থূল ধরনের কথায় আমি একটু বিস্মিত হলাম। ওর হয়তো টাকার প্রয়োজন খুবই বেশি। কিন্তু অমন করে বলাটা কি ঠিক হয়েছে? বলাটা ঠিক না হলেও তাঁর আশঙ্কাটা কিন্তু ঠিকই ছিল।’

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, বিখ্যাত লেখক নরেন্দ্র মিত্র এই যে বললেন, এমনভাবে বলাটা মানিকবাবুর কি ঠিক হলো? আসলে সত্যি বলতে লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন অন্য জগতের কিংবা অন্য চরিত্রের এক মানুষ। এখানে হয়তো দেখা যাচ্ছে কয়েকটি টাকার জন্য তিনি হাপিত্যেশ করছেন অথচ পৈতৃক বাড়ি বিক্রির পর নিজ অংশের যে ৮ হাজার টাকা পেয়েছিলেন তার পুরোটাই কমিউনিস্ট পার্টিকে দান করে দিয়েছিলেন তিনি। অথচ এই কমিউনিস্ট পার্টি তাঁর জন্য কিন্তু তেমন কিছুই করেনি। দারিদ্র্য তাঁকে এমনভাবে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছিল যে মাঝে মাঝে লেখার কাগজটুকু কেনার সামর্থ্য তাঁর হতো না। একবার মুড়ির সাদা ঠোঙায় গল্প লিখে পাঠালেন পরিচয়-দফতরে। এত করেও সংসার বুঝি আর চলে না। বাড়িতে অশান্তি, স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া। রাজ্য সরকার থেকে কিছু অর্থ সাহায্যের প্রস্তাব এসেছিল। একবার বোধহয় সামান্য কিছু টাকা পাঠানোও হয়েছিল। কিন্তু মানিকের এক কথা, সরকারি সাহায্য নেবেন না। তিনি না কমিউনিস্ট! আচ্ছা যে কথা বলছিলাম সে কথায় আসি। নরেন্দ্রনাথ মিত্র আরও লিখেছেন, ‘যতদূর জানি নিশীথরা তাঁর হাতে কিছুই পৌঁছে দিতে পারেনি। উদ্যোগ আয়োজনে আর আর্টিস্টদের গাড়ি ভাড়ায় তাদের সব পুঁজি নিঃশেষ হয়েছিল। বিদায় নিয়ে আসার সময় বললাম, মানিকবাবু, আপনার কাছে আমাদের এখনো অনেক দাবি, অনেক প্রত্যাশা। আপনি শুধু আপনার নিজের নন, আপনার দ্বারা পুত্র-পরিবারেরও নন, আপনি বাংলাদেশের। আর সাহিত্যকে যদি দেশ দিয়ে না বাঁধি, তা হলে যে-কেন দেশের। মানিকবাবু চুপ করে রইলেন। আমার নভেলি ভাষা নাটকীয় ভঙ্গিতে তিনি মনে মনে হাসলেন কি না কী জানি।’

লেখক : গল্পকার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর