শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সেই সব আলো অন্ধকার দিন

ইমদাদুল হক মিলন

সেই সব আলো অন্ধকার দিন

 

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর শুরু হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন। ‘পাকিস্তান’ শব্দটিকে অত্যন্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল বাঙালি জাতি। প্রত্যেকের মুখে ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’। বাঙালি জাতি সেভাবেই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছিল।

আমরা থাকি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায়। গেন্ডারিয়া হাইস্কুলে ক্লাস টেনে পড়ি। স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে এলাকার যুবকরা। আমি আর আমার বন্ধু মানবেন্দ্র চক্রবর্তী কিশোর। আমরাও একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।

দীননাথ সেন রোডে সাধনা ঔষধালয়ের কারখানা। তার ঠিক উল্টোদিকেই মানবেন্দ্রদের পাঁচ-সাত বিঘার ওপর বাড়ি। আমাদের দলটি পনেরো ষোলো জনের। মানবেন্দ্রদের বাড়ির পেছন দিককার গলিটিতে কিছু বনেদি বাড়ি। তবে গলিটি সব সময়ই নিঝুম। রাত ১০টার পর আমরা দলবেঁধে এই গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্রথমে দক্ষিণ দিকে যেতাম, সেখান থেকে পূর্বদিকে আরেকটা গলির মাথায় গিয়ে থামতাম। প্রত্যেকের হাতে লাঠি। তখন প্রায় রাতেই ইলেকট্রিসিটি থাকত না। গভীর অন্ধকারে আমরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে বলতে হাঁটতাম। গেন্ডারিয়া এলাকার প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায়ই তখন এ রকম পাহারার ব্যবস্থা হয়েছিল। ওই এলাকার নামকরা ছাত্রনেতা প্যাটেল ভাই। তিনিও তাঁর দল নিয়ে বেরোতেন। দেশপ্রেমের কথা বলে আমাদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁর কথায় রক্তে দোলা লাগত। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন মস্তিষ্কের কোষে কোষে ছড়িয়ে যেত। তখনো আমরা কেউ কল্পনাও করিনি বাঙালি জাতিকে চিরতরে পৃথিবী থেকে মুছে দেওয়ার জন্য গণহত্যার কোনো জঘন্য পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তানি পশুরা।

২৫ মার্চের সেই কালরাতে পাহারা দিতে যাইনি আমি। সন্ধ্যার দিকে আব্বা বাড়ি ফিরে বললেন, ‘শহরের অবস্থা খুবই খারাপ। কখন কি ঘটে কেউ বলতে পারে না।’ রাত ৮টা-৯টার দিকে আমরা সবাই খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি আর আমার বড়ভাই থাকি রান্নাঘরের সঙ্গের খুবই ছোট রুমটিতে। ছোট একটা চৌকিতে কোনো রকমে ঘুমাই। প্রায় চার বছর আব্বার চাকরি ছিল না। তিনি হেডক্লার্ক ছিলেন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিতে। সত্তর সালের মাঝামাঝি চাকরি ফিরে পেয়েছেন। চারটা বছর অতিকষ্টে দিন কেটেছে আমাদের। বাসায় বাজার হচ্ছে না, বাড়িভাড়া বাকি পড়ছে মাসের পর মাস। ধারদেনায় ডুবে গেছে পরিবারটি। চাকরি ফিরে পাওয়ার ফলে চার বছরের বকেয়া পাওনাটাও আব্বা পেয়ে গিয়েছিলেন। ফলে সংসারের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে।

রাত সাড়ে ১১টা-১২টার দিকে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকা থেকে, রাজারবাগ এলাকা থেকে, গুলিস্তান, নবাবপুর আর শাঁখারীবাজার এলাকা থেকে অবিরাম কামানের গর্জন শুরু হলো। আর গুলির শব্দ। গোলাগুলির শব্দের সঙ্গে চারদিককার আকাশ ছেয়ে গেছে আগুনের লেলিহান শিখায়। খানিক পর পর ঘোড়ার ডাকের মতো চিঁ হিঁ হিঁ হিঁ শব্দে আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে মারাত্মক এক ধরনের আলোকশিখা। পরে জেনেছি ওই জিনিসকে বলে ‘ট্রেসার হাওয়াই’। সারা রাত চলল এই ভয়ংকর কাণ্ড।

সকালবেলা পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে লোহারপুলের দিকে গিয়েছি। রাস্তায় গাড়িঘোড়া কিচ্ছু নেই। লোহারপুলে উঠে দেখি কয়েকটা লাশ পড়ে আছে খালপাড়ে। পুলের পশ্চিম পাশে সূত্রাপুর থানা। থানায় প্রাণের সাড়া নেই। দেয়ালে বিশাল বিশাল গর্ত। কামানের গোলায় ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে দেয়াল। আমাদের আর এগিয়ে যাওয়ার সাহস হয়নি। তবে মুখে মুখে সব খবরই ভেসে এলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাকিস্তানিরা নির্বিচারে হত্যা করেছে ছাত্র, শিক্ষক ও অন্য কর্মচারীদের। রাজারবাগে শহীদ হয়েছেন শত শত দেশপ্রেমিক পুলিশ। শাঁখারীবাজারে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে পাকিস্তানিরা। পর দিন সকালবেলায়ও সেদিকটায় আগুন জ্বলছিল। কোতোয়ালি থানায় রাতের ডিউটিতে ছিলেন যে পুলিশ ভাইয়েরা তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। সদরঘাট টার্মিনালে যেসব যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন তাদের একজনও বেঁচে নেই। টার্মিনালের সামনে রিকশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল রিকশাঅলারা, তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। লক্ষ্মীবাজারে মিউনিসিপ্যালিটির অফিস। সেই অফিসের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে মানুষের লাশ। ট্রাক আর গরুরগাড়িতে সুইপাররা তুলে দিচ্ছিল লাশগুলো। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শুরু হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।

পাকিস্তানিরা কারফিউ জারি করল। পর দিন দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হলো। ঢাকা ছাড়তে শুরু করল হাজার হাজার মানুষ। বুড়িগঙ্গা পার হয়ে কয়েক হাজার মানুষ গিয়ে আশ্রয় নিল জিঞ্জিরা আর সুভাঢ্যা এলাকায়। এপ্রিলের ২ তারিখে ফজরের আজানের সময় নিঃশব্দে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে ওপারে গিয়ে ঘুমন্ত মানুষের ওপর আক্রমণ চালাল পাকিস্তানিরা। কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করল এক সকালে। এ ঘটনার কথা আমি আমার ‘সাড়ে তিন হাত ভূমি’ উপন্যাসে লিখেছি। এপ্রিলের ৪ তারিখে গেন্ডারিয়াতে ঘটল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। সাধনা ঔষধালয়ের স্বত্বাধিকারী অধ্যাপক যোগেশচন্দ্র ঘোষকে হত্যা করে কারখানার রাস্তার সামনে ফেলে গেল পাকিস্তানিরা। তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় নব্বই বছর।

তার পরের দিনগুলো কাটছিল উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের মধ্য দিয়ে। আমার মায়ের একমাত্র মামার বাড়ি দীননাথ সেন রোডে। কয়েকদিন পর তারা চলে গেলেন বিক্রমপুরে। কিছুদিন পর আমরাও চলে গেলাম বিক্রমপুরে। গ্রামে গ্রামে তখন শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমি পড়েছি বিক্রমপুরের কাজিরপাগলা হাইস্কুলে। স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং হয়। আমি গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখি। যিনি ট্রেনিং দেওয়াচ্ছিলেন, একদিন তাঁকে বললাম, ‘আমিও ট্রেনিং নিতে চাই।’ তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘তুই খুব ছোট আর তোর স্বাস্থ্য খারাপ। তুই পারবি না।’ পাকিস্তানিরা তখন ছড়িয়ে গেছে গ্রামেগঞ্জেও। এই ধরনের ক্রান্তিকালে গুজব ছড়ায় হাওয়ার বেগে। প্রায়ই গুজব উঠত, ‘ওই যে মিলিটারি আসছে’। আমরা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতাম। আমার দিনগুলো তখন কাটছিল ঢাকা আর বিক্রমপুর করে। কিছুদিন পর পর ঢাকায় আসি। আবার ফিরে যাই বিক্রমপুরে। একবার ঢাকায় ফিরে দেখি আমার বন্ধু সুভাষ আচার্য পাজামা পাঞ্জাবি আর টুপি পরে ঘুরে বেড়ায়। ওদের ঋষিকেশ দাশ লেনের বাড়ি দখল হয়ে গেছে। সুভাষ আশ্রয় নিয়েছে আমার আরেক বন্ধু হামিদুলদের বানিয়ানগর বাড়িতে। সুভাষের পকেটে তার বাবার চেক। হাবিব ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে। ওই বয়সেই হামিদুল খুব পাকাপোক্ত ছেলে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাংক থেকে টাকা তোলারও সমস্যা। হামিদুল কেমন কেমন করে সুভাষদের টাকাটা তুলে দিয়েছিল। সেই টাকা নিয়ে সুভাষ চলে গিয়েছিল গ্রামে।

এ রকম কত স্মৃতি সেই আলো অন্ধকারমাখা দিনগুলোর। স্বাধীনতার স্বপ্ন চোখের সামনে এক আলোর দুয়ার খুলে রেখেছে। মুক্তিযোদ্ধারা আর দেশের সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পারে স্বাধীনতার দিকে পা ফেলছে। মুক্তিযোদ্ধারা তছনছ করে দিচ্ছে পাকিস্তানিদের এক একটা ঘাঁটি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সেসব খবর শুনে আমরা উদ্বেলিত হই। পাশাপাশি অন্ধকার গ্রাস করে যখনই শুনি গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে পাকিস্তানিরা, গণহত্যা চালাচ্ছে নির্বিচারে। ঢাকায় পাকিস্তানিদের হয়ে ভয়াবহ অত্যাচার শুরু করেছে বিহারিরা। ঘর থেকে আমি যাতে না বেরোতে পারি সেজন্য আব্বা আমাকে ন্যাড়া করে দিলেন। কিন্তু আমি চলে যেতে চাই বিক্রমপুরে। পকেটে একটি পয়সাও নেই। আমার বড়ভাই তার মাটির ব্যাংকে কিছু কিছু পয়সা জমাতেন, গোপনে সেই ব্যাংক ভেঙে গেন্ডারিয়া থেকে পালালাম। পরিষ্কার মনে আছে, ‘দু’টাকা দশআনা’ জমেছিল সেই ব্যাংকে। কিন্তু গ্রামে থাকা যাচ্ছিল না। আব্বা টাকা পাঠাতে পারেন না। বেতনই পান না সময়মতো, টাকা পাঠাবেন কেমন করে? আমরা অনাহারে থাকি। মা সিদ্ধান্ত নিলেন যা হওয়ার হবে, ঢাকায় চলে আসবেন। নির্বিঘ্নেই আমরা ঢাকায় ফিরলাম।

অক্টোবর মাসে ঘটল আমাদের জীবনের চরমতম ঘটনাটি। চাকরি না থাকার দিনে এক কাবুলিওয়ালার কাছ থেকে মাসিক সুদে কয়েকশো টাকা ধার নিয়েছিলেন আব্বা। চাকরি ফিরে পাওয়ার পর সুদসহ পুরো টাকাটাই শোধ করে দিয়েছিলেন। কাবুলিটা ছিল অতি লোভী ও ধুরন্ধর। একদিন দুপুরের পর তিন চারজন মিলিশিয়া নিয়ে আমাদের বাসায় এসে শাসিয়ে গেল। ভয়ে আমরা গেট খুলিনি। বলে গেল পরদিন এসে আব্বাকে ধরে নিয়ে যাবে। কারণ, আব্বা নাকি তাদের টাকা শোধ করেননি। পুরোটাই মিথ্যে। বাসায় ফিরে এ কথা শুনে আব্বা খুবই নার্ভাস হয়ে গেলেন। অবিরাম টয়লেটে যেতে লাগলেন। তার পর একেবারে গা ছেড়ে দিলেন। বাড়িওয়ালার বড় মেয়ে ডাক্তার। তিনি দেখে বললেন, ‘এখনই হাসপাতালে নিতে হবে।’ আমার মা আর ভাইবোনরা কাঁদতে লাগল। একটা বেবিট্যাক্সিতে করে আব্বাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলাম। আব্বার একপাশে বড়ভাই, আরেকপাশে আমি। আমাদের আগে আগে ভ্যাসপা চালিয়ে গেলেন বাড়িওয়ালার বড় ছেলে কাশেমভাই। সেদিন অক্টোবরের ৬ তারিখ। হাসপাতালের বেডে অচেতন হয়ে আছেন আব্বা। আমি আর বড়ভাই আছি তাঁর দু’পাশে। একজন ডাক্তার মাঝে মাঝে এসে দেখে যাচ্ছেন আব্বাকে। এক-দুই মিনিট পরপরই ফিরে যাচ্ছেন তাঁর রুমে। আব্বার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমি দৌড়ে গেছি সেই ডাক্তারকে ডাকতে। গিয়ে দেখি তিনি ছোট্ট রেডিওতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শুনছেন। রেডিওতে একটা গান ভেসে আসছিল ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে।’

রাত ১টার সময় আব্বা মারা গেলেন।

তারপর শুরু হয়েছিল ১০টি নাবালক সন্তান নিয়ে আমার মায়ের ভয়াবহ যুদ্ধ। সে সব কথা লিখেছি ‘একাত্তর ও একজন মা’ উপন্যাসে। ১৯৭১ পর্যন্ত ঢাকার জীবন নিয়ে আমি তিনটি উপন্যাস লিখেছি। ‘জিন্দাবাহার’, ‘মায়ানগর’, ‘একাত্তর ও একজন মা’। গ্রামজীবন নিয়ে লেখা পর্বটির নাম ‘কেমন আছ, সবুজপাতা’। চার পর্বের এই আত্মজৈবনিক উপন্যাসটির একত্র সংকলন ‘এমন জনম’।

ডিসেম্বরের শুরুর দিক থেকে ধীরে ধীরে ঢাকা ঘেরাও করছিল মুক্তিযোদ্ধারা ও যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনী ‘নাপাম বোমা’ ফেলল তেজগাঁও এয়ারপোর্টে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সঙ্গে ‘ককফাইট’ শুরু হলো ঢাকার আকাশে। চোখের সামনে পাকিস্তানিদের ফাইটার বিমান দুই-তিনটা ভূপাতিত হতে দেখলাম। আমাকে আর আমার বড় ও মেজো বোনকে বিক্রমপুরের ‘পয়সা’ গ্রামে পাঠিয়ে দিলেন মা। সঙ্গে আছেন মাওলাভাই। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। ঢাকার চারপাশ তখন মুক্তাঞ্চল। মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় পানি আর গুড়মুড়ি খাওয়াচ্ছে শহরছাড়া মানুষদের। রাতে এক বাড়িতে আশ্রয় হলো আমাদের। পরদিন দুুপুরের মুখে মুখে দাদার বাড়িতে পৌঁছালাম। সেই বিকালে একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখেছিলাম। বছর সাতেক বয়সের একটা বাচ্চা ছেলে কঞ্চির মাথায় ছোট্ট একটা বাংলাদেশি পতাকা বেঁধে সবুজ মাঠের ওপর দিয়ে ছুটছে আর চিৎকার করে বলছে- ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ স্বাধীন হলো তার পরের দিন। আমরা খবর পেলাম অনেক রাতে। কিন্তু একদিন আগে কেমন করে সেই বাচ্চা ছেলেটি বলেছিল- ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে?’

আব্বার চাচাতো ভাই সালাম কাকা পাকিস্তান এয়ারফোর্সে চাকরি করতেন। ছিলেন করাচিতে। দেশ স্বাধীনের পর অনেক বছর পর্যন্ত আমার দাদি বাড়ির সামনের আমগাছটির তলায় একটা জলচৌকি নিয়ে বসে থাকতেন। কবে তার সালাম বাড়ি ফিরবে। কিন্তু সালাম কাকা ফিরে আসেননি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল আমার দাদির সেই অনন্ত অপেক্ষা।

ঢাকায় ফেরার দিন দেখেছিলাম শীতলক্ষ্যা আর বুড়িগঙ্গায় শত শত মানুষের লাশ ভাসছে।

স্বাধীনতার মহান আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি তিরিশ লক্ষ প্রাণ হারানোর বেদনা আর পাকিস্তানিদের ভয়াবহ নির্মমতার যে অন্ধকার দিকটা আমাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে, সেই স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও প্রধান সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর