বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভার্চুয়াল নেতৃত্ব বনাম একচুয়াল আন্দোলন

মহিউদ্দিন খান মোহন

ভার্চুয়াল নেতৃত্ব বনাম একচুয়াল আন্দোলন

যদি বলা হয় বিএনপি এখন ভার্চুয়াল নেতৃত্বে চলছে, তাহলে কি খুব অযৌক্তিক হবে? কেউ কেউ এতে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। যেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভা-সমাবেশ, বৈঠক ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে একটি দল যদি ‘ভার্চুয়াল নেতৃত্বে’ পরিচালিত হয় অসুবিধা কোথায়? অসুবিধার বিষয়টি হয়তো সাধারণভাবে উপলব্ধি করা যাবে না।  তবে বিষয়টি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে এর নেতিবাচক দিকটি ধরা পড়বে। রাজনৈতিক দলের নেতা বা নেত্রীরা সশরীরে উপস্থিত থেকে কর্মীদের নেতৃত্ব দেবেন, এটাই প্রথাসিদ্ধ।  কিন্তু বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা-নেত্রীকেই এখন সশরীরে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এখন বিএনপি নেতাদের কেউ ভিডিও বার্তায়, কেউ মোবাইল ফোনের মেসেজ বা ইউটিউবে কর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেন, ঢাকায় সে বার্তা ‘ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে’ মিডিয়ায় সরবরাহ করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। ফলে দলটি এখন অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এর কোনো পর্যায়ের নেতাই এখন আর ভিজিবল বা দৃশ্যমান নন। জাম্বো সাইজের জাতীয় নির্বাহী কমিটির হাতেগোনা দুই-চারজন মাঝেমধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তায় বিজলি চমকানোর মতো দেখা দিলেও বাকিরা কে কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেন না। অবশ্য মাঝেমধ্যে ১০-১৫ জন সঙ্গীসহ রিজভী আহমেদ রহস্যজনক মিছিল করে দলটির অস্তিত্ব জানান দেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কেন তাকে দেখতে পায় না, তাও এক অপার রহস্য!

বর্তমানে বিএনপি সম্বন্ধে একটি কথা রীতিমতো প্রবাদ-প্রবচনের রূপ নিয়েছে। বলা হয়ে থাকে, বিএনপিতে এখন কর্মীর খুব অভাব, সবাই নেতা। কেন্দ্র এবং জেলা-উপজেলা তো বটেই, এমনকি ইউনিয়ন কমিটির সদস্যরাও নিজেদের পরিচয় দেন ‘নেতা’ বলে। কতজন কর্মীর প্রতিনিধিত্ব করলে বা কতজন অনুসারী থাকলে একজন ব্যক্তিকে নেতা বলা যায়, রাজনীতি-বিজ্ঞানে তার কোনো বিধিবদ্ধ সংজ্ঞা অবশ্য নেই। তবে একজন কর্মীকে নেতায় পরিণত হতে হলে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়, রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। কিন্ত এখন কেউ কর্মী থাকতে চান না। আজ রাজনীতির মাঠে পা দিয়ে কালই নেতা বনে যান তারা, রাজনৈতিক জ্ঞানগরিমা থাকুক বা না থাকুক। অবশ্য এ ধরনের নেতা হতে আগ্রহী ব্যক্তির দুটো গুণ থাকতে হয়। এক. প্রচুর টাকা থাকতে হবে এবং সে টাকা নির্দিষ্ট দরগায় শিরনি হিসেবে মুক্তহস্তে দান করার মতো উদার মানসিকতা থাকতে হবে। দুই. দলের একজন প্রভাবশালী নেতার মুরিদ হতে হবে এবং সে নেতার সন্তুষ্টির জন্য রামভক্ত হনুমানের ন্যায় সব সময় ‘জি হুজুর’ জিকিরে অভ্যস্ত হতে হবে। ব্যস, তাহলেই দলের যে কোনো পর্যায়ের নেতার তকমা গলায় ঝুলিয়ে সমাজে নিজেকে জাহির করা যাবে। অভিজ্ঞজনরা বলে থাকেন, বিএনপিতে এখন এই ক্যাটাগরির নেতা গিজগিজ করছে। উপরোক্ত দুই পদ্ধতি প্রয়োগে যারা দলটির নেতা হিসেবে পরিচিতি পান, লোকজন তাদের ‘হাইব্রিড নেতা’ বলে থাকেন। আমার স্নেহভাজন এক রাজনৈতিক কর্মীর মতে হাইব্রিড মুরগি আর হাইব্রিড নেতার মধ্যে রয়েছে অসাধারণ মিল। হাইব্রিড মুরগি গরম সহ্য করতে পারে না, তাই সেগুলোকে ফ্যানের বাতাসে রাখতে হয়। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বলে ‘সাহেব মুরগি’। আবার নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে খেয়েও ফেলতে হয়। না হলে তা অনন্তলোকে যাত্রা করে। এসব হাইব্রিড নেতাও রাজনৈতিক তাপানুকুল (এয়ার কন্ডিশন্ড) পরিবেশে রাজনীতি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রখর রোদে তারা বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেন না। শরীর এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেন কোনো নিরাপদ স্থানে। উপমাটি চমৎকার। বিএনপির চলমান আন্দোলনের অবস্থাই এর জ্বলন্ত উদাহরণ। সরকারের নমনীয় মনোভাবের সুযোগে বছর খানেক যারা মঞ্চ-মাঠ কাঁপিয়ে বক্তৃতা করতেন, তাঁরা এখন শুধু চুপই নন, একেবারে লাপাত্তা। তাদের বক্তৃতা শুনে মনে হতো আওয়ামী লীগ সরকারকে তক্ষুনি টেনে নামিয়ে ফেলবেন। কিন্তু যেই না সরকার একটু কঠোর অবস্থানে গেছে, অমনি তারা ভোজবাজির মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে এতদিনের হম্বিতম্বি সব উধাও! কেউ সন্ধান পাচ্ছেন না তাদের। তাদের মোবাইল ফোনও আছে শীতনিদ্রায়।

বিএনপির বিদ্যমান এই দুরবস্থার চিত্রই ফুটে উঠেছে গত ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনের ‘লাপাত্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, দলটির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চারজন এবং ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৯০ জনের মধ্যে কারাগারে আছেন ৯৩ জন। বাকি নেতাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নেতারা বাড়িতে মোবাইল ফোন রেখে সরে পড়েছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদকদ্বয় তাদের অনেকের সেলফোনে কল দিয়ে কোনো সাড়াশব্দ পাননি। তবে একজন নেতা জানিয়েছেন, মামলা-মোকদ্দমার কারণে নেতারা আত্মগোপনে। সময়মতো সবাই বেরিয়ে আসবেন। তবে সে সময় কবে আসবে কেউ জানে না।

দীর্ঘদিন দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বিধায় এখনো অনেকে ফোন করে খবর দেন, খবর নেন। আমার এলাকা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের এক যুবদল কর্মী সে দিন হতাশা এবং ক্ষোভের সঙ্গেই বললেন, ‘এতদিন যারা হাই-কমান্ডের নিজেদের ‘ওহিপ্রাপ্ত’ বলে জাহির করে ছড়ি ঘোরালেন, তারা এখন কোন গুহায় যে, লুকিয়ে আছেন, আল্লাহই জানেন’। তিনি আরও বললেন, ওহিপ্রাপ্ত ওই হাইব্রিড নেতার শিষ্য-শাগরেদ, ভাই-ভাতিজারা তো ‘দল ক্ষমতায় আসছে’ প্রচার করে বিরুদ্ধবাদী অনেককে দেখে নেওয়ার হুমকি-ধমকিও দিতে শুরু করেছিলেন! কিন্তু এখন তাদের টিকিটিরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। দেখবেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার বিশেষ একটি চতুষ্পদ উভচর প্রাণীর মতো মস্তক বের করে জানান দেবেন-আমরা আছি।

বিএনপির চলমান আন্দোলনের যে হতচ্ছিরি দশা, এর মূলে রয়েছে দলটিতে বিশেষ জায়গা থেকে ওহিপ্রাপ্ত হাইব্রিড নেতার আধিক্য। এ কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর নেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ঘোষিত অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো অস্তিত্বই নেই আন্দোলনের; শুধু রাতের আঁধারে বাস-ট্রাক ও রেলগাড়িতে আগুন দেওয়া ছাড়া। আন্দোলনের এই বেহালদশায় যেখানে বিএনপির ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরে আসার কথা, সেখানে দলটি নতুন আরেকটি নেতিবাচক কর্মসূচি দিয়ে বসে আছে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘প্রতিহত’ করতে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগের ডাক দিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে জনগণকে ভোট বর্জনেরও আহ্বান জানিয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির কথা জানান। বিএনপির ঘোষিত অসহযোগের মধ্যে রয়েছে, আসন্ন ভোট বর্জন, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া, ভোট গ্রহণে নিযুক্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকা, সরকারকে সব ধরনের কর (ট্যাক্স), খাজনা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল দেওয়া স্থগিত রাখা, ব্যাংকে টাকা না রাখা, আদালতে মামলায় হাজিরা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরত থাকা ইত্যাদি। ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিন উল্লেখ করেছে, ‘গতকাল সকালে (২০ ডিসেম্বর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় এই নতুন কর্মসূচির পক্ষে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।’ লক্ষণীয় হলো, লন্ডন থেকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যে কর্মসূচির নির্দেশ দিয়েছেন, রিজভী এখানে তা ভার্চুয়ালি রিলে (সম্প্রচার) করেছেন। সুতরাং কথা মিথ্যে নয়, বিএনপি এখন ভার্চুয়াল নেতৃত্বে চলছে। আর সে নেতৃত্ব দলের ঘোষিত চলমান আন্দোলনের ‘একচুয়াল’ অবস্থা সম্পর্কে যে অবগত নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা যদি তাদের আন্দোলনের করুণ অবস্থার কথা অবগত থাকত, তাহলে ‘অসহযোগ’-এর মতো একটি সর্বাত্মক ও কষ্টসাধ্য আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণার আগে দুবার ভাবত। মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, বিএনপির হাইকমান্ড একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। আর সে কারণে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করেই কর্মসূচি ঘোষণা করে চলেছে।

এখন কথা হলো, বিএনপি ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের পরিণতি কী হতে পারে। এ সম্পর্কে ইতোপূর্বে ‘আন্দোলনের ফাঁদে বিএনপি’ শিরোনামে এক নিবন্ধে আমি মন্তব্য করেছিলাম, ‘হরতাল অবরোধের যে লেজেগোবরে অবস্থা, তাতে অনুমান করা কষ্টকর নয়, অসহযোগের কী অবস্থা হবে। আমার ধারণা, বিএনপির যেসব নেতা অসহযোগের কথা ভাবছেন, তারা ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের স্বরূপ সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। ...অসহযোগ আন্দোলনের অর্থ হলো- জনগণ সরকারকে কোনো বিষয়ে সহযোগিতা করবে না। খাজনা-ট্যাক্স দেবে না, সরকারি কর্মচারীরা অফিসে কাজ করবে না, শ্রমিকরা মিল-কারখানার চাকা বন্ধ করে দেবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাবে না ইত্যাদি। বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণকে এ ধরনের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার সামর্থ্য কি বিএনপির আছে?’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৩ নভেম্বর ২০২৩)। স্বীকার করতেই হবে, সে সামর্থ্য বিএনপির এখন আর নেই। যে দল হরতাল সফল করার জন্য বড়সড়ো একটি মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামার সামর্থ্য রাখে না, সে দলের পক্ষে অসহযোগের মতো জনগণনির্ভর একটি কর্মসূচি সফল হবে, এমনটি আশা করা বাতুলতা মাত্র।

দিন কয়েক আগে ঢাকার উত্তরা থেকে ফোন করেছিলেন আমার এক সাবেক রাজনৈতিক সহকর্মী। দলের অসহযোগ কর্মসূচি নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘এই কর্মসূচি ঘোষণার পর আমি নিজে নিজেই লজ্জা পাচ্ছি। কেননা, এ কর্মসূচি সফল করার কোনো ক্ষমতাই আমাদের নেই। তারপরও হাইকমান্ড কেন এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বুঝি না। তিনি বললেন, ভাই দল বলেছে খাজনা-ট্যাক্স না দিতে, ব্যাংকে টাকা না রাখতে, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল না দিতে। দেখেন আমি ব্যবসা করি, ব্যাংকে লেনদেন না করে কী পারব? যারা আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করেন, তারা কি কাস্টমস ডিউটি না দিয়ে পারবেন? আর গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ এখন অনেক জাগায় প্রিপেইড মিটারে চলে। এখন আমি যদি প্রিপেইড কার্ডের টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে কার্ড রিচার্জ না করি, তাহলে তো অটোমেটিক লাইন কাটা যাবে? তখন কি আমরা গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিবিহীন অবস্থায় থাকব? একই দিনে জয়পুরহাট থেকে ফোন করেছিলেন আরেক পুরনো সহকর্মী। তাঁরও একই প্রশ্ন- দলের হাইকমান্ড কেন এ ধরনের উদ্ভট কর্মসূচি দিল? দুজনকে একই জবাব দিয়েছি।  বলেছি, নেতৃত্ব যখন ভার্চুয়াল জগতে বসবাস করে এবং একচুয়াল পরিস্থিতি সম্পর্কে উদাসীন থাকে, তখন এ ধরনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তই স্বাভাবিক। জয়পুরহাটের বন্ধু বললেন, তাহলে এখন আমরা কী করব, কোথায় যাব? রসিকতার সুরে তাঁকে বললাম, এখন আপনারা সমবেত কণ্ঠে একটি আধ্যাত্মিক গান গাইতে পারেন- ‘মন তুই করিস না রে ভুল/ ও মন করিস না রে ভুল/ ভুল করিলে পড়বি ফেরে, হারাইবি দুই কূল...।’

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

সর্বশেষ খবর