বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর একটি মোজেজা

এম এ মান্নান

রসুল (সা.)-এর একটি মোজেজা

মহান আল্লাহ নবী ও রসুলদের বিভিন্ন মোজেজা দান করেছেন। তারা যে আল্লাহর নবী সে সত্যতা স্পষ্ট করার জন্য মোজেজার অবতারণা ঘটেছে। হজরত  মুসা (আ.)-এর লাঠি সাপ হয়ে যেত, ঈসা (আ.) মৃতকে জীবিত করতে পারতেন। বাতাসকে বশীকরণ করতে পারতেন হজরত সুলাইমান (আ.)। তিনি পাখি ও পিঁপড়ার ভাষাও বুঝতেন। জিনদের দিয়ে তিনি এমন সব কাজ করাতেন যা মানুষের পক্ষে করা কঠিন। মহানবী হজরত মুহাম্মদও (সা.) ছিলেন অসংখ্য মোজেজার অধিকারী।

হাক্কানি আলেমদের মতে, বর্তমানে কারও পক্ষে মোজেজা প্রদর্শন করা সম্ভব নয়। কেউ আশ্চর্যজনক কিছু করলে বা করে দেখালে তা তার কারামত। কারণ, মোজেজা নবী-রাসুলদের সঙ্গে সম্পর্কিত। দুনিয়ায় নবী আগমনের ধারা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোজেজাও বন্ধ হয়ে গেছে।

হযরত মুজাহিদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবু হুরায়রা (রা.) বলতেন, আল্লাহ্র কসম, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনো পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদা আমি তাঁদের (রসুলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবিদের) রাস্তায় বসেছিলাম, যেখান দিয়ে তারা বের হতেন। আবু বকর (রা.) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কোরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর (রা.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কোরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না।

রসুলুল্লাহ (সা.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পেরে বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্র রসুল (সা.)! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে চল’! অতঃপর তিনি চললেন, আমি তাকে অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়িতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুধ কোথা থেকে এসেছে’? বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, ‘অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা আপনার জন্য হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছে’। তিনি বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাজির হে আল্লাহ্র রসুল’! তিনি বললেন, ‘আহলে ছুফ্ফার লোকদের গিয়ে এখানে ডেকে আন’।

(রাবি বলেন) ‘আহলে ছুফ্ফা’ ছিল ইসলামের মেহমান। তাদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। আর এমন কেউ ছিল না যার ওপর ভরসা করা যায়। যখন কোনো সদকার মাল রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আসত তখন তিনি তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোনো হাদিয়া (উপঢৌকন) আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাদের শরিক করতেন এবং নিজে অংশগ্রহণ করতেন। (আবু হুরায়রা বলেন) রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশ শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা ‘আহলে ছুফ্ফা’র কী হবে? আমিই এ দুধ পানের বেশি হকদার। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাদের দুধ পান করতে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব।

কিন্তু আল্লাহ্? ও তার রসুল (সা.)-এর আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না। সুতরাং আমি ‘আহলে ছুফ্ফার কাছে গিয়ে তাদের ডেকে আনলাম’। তারা এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তিনি তাদের অনুমতি দিলেন। তারা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাজির হে আল্লাহ্র রসুল! রসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, এটি তাদের দাও। আমি (দুধের) পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, তিনি পান করে পরিতৃপ্ত হলেন এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিলেন। অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, তিনিও তৃপ্তি সহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিলেন। তৃতীয়জনকে দিলে তিনিও তাই করলেন। এভাবে আমি (সর্বশেষ) রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পৌঁছলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হলো। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘হে আবু হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাজির হে আল্লাহ্র রসুল’! তিনি বললেন, ‘এখন আমি আর তুমি বাকি’। আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহ্র রসুল’। তিনি বললেন, ‘বসে পড় এবং পান কর’। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘পান কর’। আমি পান করলাম। তিনি এ কথা বলতেই থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, ‘আল্লাহ্র শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই’। তিনি বললেন, ‘তাহলে আমাকে দাও’। আমি তাঁকে দিলে তিনি আল্লাহ্র প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকি দুধ পান করলেন। (সহিহ বুখারি হা/৬৪৫২, ‘রিকাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৭, মিশকাত হা/৪৬৭০ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘অনুমতি’ অনুচ্ছেদ)।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর