শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ

বাংলাদেশের অলেমরা অন্য দেশের আলেমদের তুলনায় অলস। অন্য দেশের আলেমরা বুজুর্গানে দ্বীনের কথাগুলো রেকর্ড করে কাগজে লিখে নোট করে রাখেন। এরপর মানুষকে তা শোনান ও প্রচার করেন এবং নিজেও তা ইয়াদ রাখেন। আর আমাদের দেশের আলেমদের অবস্থা হলো- তারা অন্যজনকে অনুসরণ করতে রাজি নয়। বসে বসে একে-অপরের শুধু দোষত্রুটি অনুসন্ধানেই বেশি ব্যস্ত থাকে। কে এলো, কে গেল তা তাদের উপলব্ধিতে আসে না। এক নাপিত শায়খ আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহ.)-এর সহচার্যে পাঁচটি আমল শিখেছিলেন। তিনি বললেন, আমার শায়খ আতা ইবনে আবী রাবাহ রহ. যখন মৃত্যুবরণ করলেন তখন আমার অন্তরে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়ে গেল যে, আমি শায়খের জন্য কী করতে পারি? দোয়া করলে তো তিনি তার সওয়াব পাবেনই। আর কী করা যায়? একপর্যায়ে মনে এই সিদ্ধান্ত স্থির হলো যে, শায়খ থেকে আমি তো পাঁচটি আমলের কথা শিখেছি, এটাই মানুষকে শেখাব। শায়খ এতেই বোধ হয় বেশি খুশি হবেন। এভাবে চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম নাপিতের চাকরি করার। কারণ নাপিতের চাকরি করলে হজ মৌসুমে মানুষ চুল কাটতে আসবে; যে হাজি চুল কাটাবস্থায় এ আমল করবে না, আমি এই সুযোগে শায়খ হতে প্রাপ্ত ওই পাঁচটি আমলের কথা তাকে বলব। নাপিতের মধ্যে এ রকম মনমানসিকতা এসেছে একমাত্র শায়খের সুহবতের কারণে। সুহবতের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারে। দুনিয়ার সম্পদ এদের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করতে পারে না। সম্পদ অর্জন শরিয়তে নিন্দনীয় নয়। যদি কোনো মাওলানা, ইমাম, মুয়াজ্জিন হালাল পন্থায় মাল উপার্জন করে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, তারা আলেম-ওলামাদের একটু বেশি উপার্জনকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে। তারা মনে করে এরা দুনিয়াদার। প্রকৃতপক্ষে মাল-সম্পদ অর্জন করা খারাপ নয়। তবে তা হতে হবে ভালো নিয়তে ও হালাল পন্থায়। আলেমদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে লজ্জা লাগে তাই দ্বীনি খেদমত করার সুযোগ পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা চাই। তবে দ্বীনি খেদমতের সুযোগ পাওয়ার পর কোনো কারণ ছাড়াই অর্থ বেশি পাওয়ার আশায় এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদে, এক মাদরাসা থেকে অন্য মাদরাসায় চট করে চলে যাওয়া ঠিক নয়। যারা এমন করেন, বুঝতে হবে তারা ইমামতি ও শিক্ষকতাকেই উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। হ্যাঁ, যদি আপনাকে নিয়ে মসজিমাদরাসায় কোনো খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে নিজ থেকে সরে দাঁড়ানোই উত্তম। মুসল্লিদের মধ্যে ইমাম সাহেবকে নিয়ে গিবত হওয়ার চেয়ে নিজ থেকে ঘোষণা দিয়ে চলে যাওয়াই ইমামের জন্য উত্তম। এতে ইমাম সাহেবের সম্মান আরও বেড়ে যাবে। একটি লজ্জাজনক নিয়ম আমাদের দেশে ইমাম মুয়াজ্জিন নিয়োগের জন্য যে অপমানজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা আমাদেরই দোষের কারণে। পেপারে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, অমুক মসজিদের জন্য ইমাম, মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেওয়া হবে। অমুক তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যথাসময়ে হাজির থাকতে হবে। তবে আমরা বাছাইয়ে যাদের বাদ দেব তাদের কোনো আপত্তি থাকতে পারবে না। দুঃখের কথা হলো, যারা পরীক্ষা নেয় তারা অনেক সময় পরীক্ষার্থীর চেয়েও অযোগ্য হয়। তারা যাকে রাখতে চায় সে যদি অন্য প্রার্থীদের চেয়ে অযোগ্যও হয় তবুও তাকে সহজ সহজ প্রশ্ন করে, চেষ্টা করে রাখার জন্য। আর অন্যজনকে যা-ই প্রশ্ন করে, সবগুলোর সঠিক উত্তর দিয়ে দেয়। কিন্তু তাকে রাখার ইচ্ছা তাদের নেই, প্রশ্ন করেও আটকানো যায় না বিধায় শেষ পর্যন্ত অবান্তর প্রশ্ন করে বলে যে, বলুন তো কাবা শরিফে যে ৩৬০টি মূর্তি ছিল তাদের চেহারার আকৃতি কেমন ছিল? পরীক্ষার্থী এ অবান্তর প্রশ্ন শুনে বলে দেয় যে, আপনার চেহারার মতো ছিল। এটা তার ক্ষুব্ধ মনের বিরক্তির বহির্প্রকাশ। ইমামতির জন্য এমন উত্তর জানা কি প্রয়োজন? ইমামতি করতে গেলে প্রশ্ন করে যে, ডিগ্রি, এমএ পাস কি না? ইংরেজি জানা আছে কি না? যে পরীক্ষার্থী কোরআন শরিফ ভালো পড়তে পারে তাকে দেয় ৫০ নম্বর, আর যে ইংরেজি জানে কিন্তু কোরআন ভালো করে পড়তে পারে না তাকে দেয় ৮০ নম্বর, যে কেরাত ভালো করে পড়তে পারে না তাকে নিয়োগ দেওয়ার পর ওই ইমামের পড়ার দুর্বলতা নিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে ইমামের বা কমিটির লোকের প্রায়ই ঝগড়া বেধে যায়। এ রকম ঘটনা আজ দেশে অহরহ ঘটে চলেছে। দুঃখের বিষয় হলো- এমন ইন্টারভিউতেই আজ আমাদের আলেম সমাজ দলে দলে যাচ্ছে। তাদের এ ব্যাপারে কোনো আত্মমর্যাদাবোধ নেই। যদি তারা গিয়ে এ কথা বলতে পারত যে, আপনারা যারা আমাদের পরীক্ষা নেবেন, দেখি আপনাদের কেরাতের কী অবস্থা? তাহলে হয়তো ওখানে চাকরি হতো না কিন্তু মসজিদ কমিটি সোজা হয়ে যেত।  পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করব যে, আমরা যদি সত্যিকার মুমিন হতে পারি তাহলে রিজিকের ব্যবস্থা নিশ্চয়ই আল্লাহপাক করবেন। তা নিয়ে পেরেশানির কোনো কারণ নেই। যারা উম্মতের দরদ নিয়ে সঠিক নিয়তে দ্বীনের কাজ করবেন এবং আল্লাহর বাতলানো পথে রিজিক সন্ধান করবেন আল্লাহপাক তাদের জন্য রিজিকের দরজা উন্মুক্ত করে দেবেন। তবে চেষ্টা-প্রচেষ্টা হতে হবে জিকিরের পথে, দাওয়াতের পথে, সুন্নতের পথে। আল্লাহপাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন!

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া, বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর