রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

এভাবে নির্বাচন আর কতকাল!

আলম রায়হান

এভাবে নির্বাচন আর কতকাল!

আকাশছোঁয়া উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আশঙ্কা-নজিরবিহীন নিরাপত্তার আয়োজন এবং খরচের বিশাল অঙ্কের রেকর্ড সৃষ্টি করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে ৭ জানুয়ারি। বেসরকারি ফলাফল অনুসারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২২, ‘আওয়ামী’ স্বতন্ত্র ৫৮, আওয়ামী লীগ অনুগত জাতীয় পার্টি ১১, আওয়ামী লীগের শরিক ২, প্রকৃত স্বতন্ত্র ৪ এবং বিএনপি ছুট কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন। আওয়ামী লীগের জন্য হাইব্রিড গোছের এই ফলাফলের সঙ্গে নানান অভিযোগ  এবং প্রত্যাখ্যানের তকমা যথারীতি কপালের লিখন রয়েই গেছে। তবে মনে করার কোনো কারণ নেই, অভিযোগ এবং প্রত্যাখ্যানের তকমা এবারই প্রথম নয়, এ ধারায়ই রয়েছে অতীতের ১১টি সংসদ নির্বাচনও।  এর সঙ্গে যুক্ত হলো এবার অনুষ্ঠিত ১২তম জাতীয় নির্বাচন। এর মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী অপহরণ এবং হেলিকপ্টারে কুমিল্লা থেকে ব্যালট বাক্স ঢাকায় এনে সরকারদলীয় প্রার্থী খন্দকার মোশতাককে বিজয়ী ঘোষণা করার কলঙ্কজনক ঘটনার উদাহরণ আছে। এরপর জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের শাসনামলে নির্বাচনকে প্রকৃত বিচারে নির্বাচন বলা যাবে কি না সেটিই এক বড় প্রশ্ন। সেই সময়ে নির্বাচন মানেই শাসকের ইচ্ছা পূরণ এবং রাবার স্ট্যাম্প সংসদ গঠনের বণ্টন প্রক্রিয়া এবং নিজকে ‘বৈধ রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে ঘোষণার আয়োজন। যা দেখে সিলেটের ছক্কা সইফুর এবং ভোলার কৃষক মোহাম্মদ সাদেকের মতো অনেক লোক নির্বাচনে নেমেছেন। আর এমন লোকও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন যিনি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে একটির বেশি সন্তান হলে তা বাঘ দিয়ে খাওয়ানোর কথা এলান করেছিলেন। এভাবে নানান পঙ্কিল পথ পেরিয়ে আমাদের দেশে নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য বাঁক আসে ১৯৯১ সালে। সেই নির্বাচনকে পঙ্কে জন্মানো পদ্মফুল বিবেচনা করলেও করা যায়। উল্লেখ্য, পদ্মফুলের আর এক নাম পঙ্কজ। পঙ্কে জন্মায় বলেই এই নাম। যাক, এই জন্মবৃত্তান্ত ভিন্ন প্রসঙ্গ।

সামরিক শাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সাল থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ছয়টি সংসদ নির্বাচনের কোনোটিই অভিযোগ এবং প্রত্যাখ্যানের তকমা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। স্মরণ করা যেতে পারে, ’৯১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার আয়োজন করেছিল খালেদা সরকার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সেই সংসদ এবং সরকার না টিকলেও সেই অপধারার বীজ থেকে বিষবৃক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। যার রূপান্তরিত রূপ দেখা গেল ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে। এবার কৌশলে অন্যরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেছে। আর এই কৌশলের প্রতিক্রিয়ায় সামনে কী ওতপেতে আছে তা বলা কঠিন। তবে নিশ্চয়ই অনুমান করা যায়। যা ভয়ের। এদিকে এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উল্লেখযোগ্য কতিপয় ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলেছিল দূতাবাস। এদিকে ভোটের আগের দিন মানে ৬ জানুয়ারি থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। যদিও এর আগে থেকেই কাগুজে হরতাল-অবরোধ আহ্বানের মধ্যেই আছে বিএনপি। আর হরতালের আগেই চলন্ত ট্রেনে আগুন দেওয়া হলো। যাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ডজন ছাড়িয়েছে। এর আগে-পরেও মৃত্যু আছে। ট্রেনে আগুনের ঘটনায় পুলিশ বলেছে, পরিকল্পিতভাবে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়েছে। একই সময় ‘নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’ আইজিপি বলেছিলেন, ভোটের দিন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও এ ধরনের তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এদিকে নাশকতাকারীর তথ্য দিলে ‘লাখ টাকা’ পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এ ধরনের পুরস্কার দিতে হয়নি। সবমিলিয়ে এবারের ভোট কেন্দ্র করে যে যা পেরেছেন সমানে বলেছেন। সবাই যেন বাচিক শিল্পী!

একটু পেছনে ফেরা যাক। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের নির্বাচন অবাঞ্ছিত ঘটনার সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অবশ্য, সেই সময়ে দেশের এলোমেলো পরিস্থিতিতে এই অনিয়ম তেমন ধর্তব্যের মধ্যে না নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, হয়তো। এদিকে পরবর্তী সময়ের তুলনায় ৭৩-এর নির্বাচনের অনিয়ম ছিল একেবারে নস্যি। বরং দুই সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া এবং এরশাদ নির্বাচনি তান্ডবের জনক। তাদের অপকর্ম না হয় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হলো। যেমন ডানপিটে ছেলে অন্যের গাছে ঢিল মারে, জানালার কাচ ভাঙলে বলা হয়, আরে ছেলেমানুষ, করে ফেলেছে। তেমনই দুই সামরিক শাসকের নির্বাচনি প্রহসনকে বলা হোক, বোঝে না, ওদের প্রবণতাই এই! কিন্তু অকল্পনীয় জীবন ও রক্ত দানের দীর্ঘ আন্দোলনের পথ পেরিয়ে অর্জিত ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে ব্যবস্থার সূচনা হলো, ঝলমলে যে আলো দেখল দেশের মানুষ, মসনদের দাবিদারদের কারসাজিতে তা কেন অন্ধকারের পেঁচা হয়ে গেল? যাদের নেতৃত্বে এরশাদকে স্বৈরাচার ও ভোট চোর তকমা দিয়ে হটানো হলো, তারাই তো এখন পর্যন্ত পালাবদল করে সরকারের এবং প্রধান বিরোধী দলে আছেন। যাত্রাবিরতির মতো মাঝখানে দুই বছরের জন্য ছিল সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামের একটি গেটিস ব্যবস্থা। ওই সরকার আমলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ছিল বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তা কেন আর সম্ভব হলো না গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হাসিনা-খালেদা সরকারের ব্যবস্থাপনা এবং ছায়ায়? বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনই কিন্তু মসনদবঞ্চিত পক্ষ মেনে নেয়নি। এদিকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট-পরবর্তী ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনগুলো আসলে সরকার বদলের নির্বাচন ছিল না। তা ছিল ক্ষমতা টিকিয়ে রাখায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার সাজানো নাটক। আর ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচন ছিল এরশাদবিরোধী যুদ্ধে মিত্রদের মধ্যে ক্ষমতার সুশীল লড়াই। সে সময়ে সাবধানে পাশাপাশি, কাছাকাছি হাসিনা-খালেদা হয়ে গেলেন মুখোমুখি। তবে রণচ-ী ছিল না কারও। দুই পক্ষের বিবেচনা ছিল দুই রকম।

ক্ষমতার মসনদ ধ্যানজ্ঞান করে ৯১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভরসা ছিল দুই কেন্দ্রিক। জনতার ভরসায় আওয়ামী লীগ ছিল আত্মবিশ্বাসী এবং বিএনপি ছিল বিশেষ ক্ষমতা কেন্দ্রের গোপন সমর্থনে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার অপেক্ষায়। ভোটের মাঠেও দেখা গেল, শেখ হাসিনা হাঁটছেন জনতার শক্তির ওপর নির্ভর করে। আর খালেদা জিয়া হাঁটছেন কৌশলী পথে এবং জনতার বদলে নির্ভর করল বাংলাদেশের বাস্তবতায় শক্তিকেন্দ্রের ওপর। বলা হয়, নির্বাচনে জনতার কাছ থেকে নীরবে দূরে নিয়ে যাওয়ার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল অতি সন্তর্পণে ১৯৯১ সালে। এ জন্য ব্যবহার করা হয় বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিকে। যে ব্লু-প্রিন্ট আওয়ামী লীগ বুঝেছিল অনেক বিলম্বে। তখন আর কিছু করার ছিল না। কেবল অওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে।’ কিন্তু বোদ্ধারা ঠিকই বুঝেছেন, প্রতিপক্ষের কারচুপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ভুল যুক্ত হয়ে ক্ষমতার মসনদ বিএনপির দিকে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গ বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল। সে সময় নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে শেখ হাসিনা যেসব বক্তব্য দিয়েছিলেন তাতে তার সেই আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে।’ খুলনায় এক নির্বাচনি সমাবেশে শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে দৈনিক ইত্তেফাক শিরোনাম করেছিল “দেশে-বিদেশে রব উঠিয়াছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাইবে।” কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। নির্বাচনি ফলাফল আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাসকে গুঁড়িয়ে ছাতু করে দেয়। এদিকে ’৯১ সালে খালেদা জিয়ার পক্ষে কাজ করা শক্তিই ২০০৮ সালের বিএনপির বিপক্ষে কাজ করেছে বলে ধারণা অনেকেরই। এটি টের পেলেও বিএনপি তেমন বিবেচনায় নিয়েছে বলে মনে হয় না অবস্থাদৃষ্টে। ফলে ২০০৮ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলেছে। তবে তা ক্রমেই খুবই অকার্যকর খেলায় পরিণত হয়েছে। এদিকে পাহাড় টলানোর বিএনপির ক্ষমতাও ভিতর থেকে ফোকলা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। তবুও নির্বাচনের পথে না এসে উল্টোপথে হাঁটছে বিএনপি। অনেকেই মনে করেন, ’৯১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ যেমন বাস্তবতায় ফিরে এসেছিল। তেমনই ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির উচিত ছিল বাস্তবতায় ফিরে আসা। কারণ নির্বাচনকে বর্জন বা প্রতিহত করার আকাশ কুসুম কল্পনাকে ধ্যানজ্ঞান করার সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। বাস্তবতা স্পষ্ট, যারা নির্বাচনের বাইরে থাকবেন তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এবারের নির্বাচন সেই বার্তাই স্পষ্ট করে গেছে।

কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ২০২৪-এর নির্বাচনকে মডেল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। বরং এ নির্বাচনে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা ২০১৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রাণনাশের রেকর্ড ২০১৪ সালকে স্পর্শ না করলেও অনেক ক্ষেত্রেই ১৪ এবং ২৪ একটি ফরমেটে চলেছে সরকার ও বিরোধী পক্ষ। এর সঙ্গে নির্বাচন আয়োজনে খরচের বহর যেন জমিন ছেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে। বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, এত খরচ হবে কেন? নাকি সরকারি কা মাল দরিয়া মে ঢাল- এই প্রবণতায় আছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে নির্বাচনি ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বলা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। অথচ ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। যদিও পরে তা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। ওই নির্বাচন বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গর্তের ছোট ইঁদুরের কৌশলে অংশ নিয়েছিল। এর আগে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সে নির্বাচনের জন্য মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা। আর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৪ সালের এবার নির্বাচন আয়োজনে খরচ শতের ঘর ছাড়িয়ে হাজারের অঙ্কে পৌঁছেছে। বাংলাদেশে টাকা যেন কাঁঠাল পাতা! এদিকে সংশ্লিষ্টদের আয়েশি জবাব, ‘ব্যবস্থাপনা ও নির্বাচনি নানা উপকরণের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণেই ক্রমশ নির্বাচনের খরচ বাড়ছে।’ কিন্তু এই খরচের অর্জন কী? বরং নির্বাচন নিয়ে নানান টালবাহান এবং কেরিক্যাচাল মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করছে। এদিকে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার পর জেনারেল এরশাদের কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের নির্বচন যে আশার আলো দেখিয়েছিল তা ম্রিয়মাণ হতে হতে টানেলের কোন কোনায় লুকাতে যাচ্ছে তা বলা কঠিন। হয়তো আশার আলো এক সময় ‘হারিকেন নিয়ে’ খুঁজতে হবে। এই পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী, একেবারে হিংস্র হায়েনা। কে মোটেই দায়ী নয়, একেবারে সদ্য আগত দেবদূত। এসব আলোচনা বিরাজমান বাস্তবতায় অবান্তর বিষয়। বরং আলোচ্য, এরপর কী হবে? কোন দিকে যাচ্ছে দেশ? এ প্রশ্ন কেবল বোদ্ধাদের নয়, এ প্রশ্ন আমজনতারও। আমজনতা মহাসংকিত, খুবই আতঙ্কিত! মানুষের প্রশ্ন, অনেক কিছুই তো হলো। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা কেন অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে পারল না। পাকিস্তান আমলে ৭০-এর নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারলে স্বাধীন বাংলাদেশে কেন হয় না!

এ নিয়ে কেউ তেমন কথা বলেন না। কেবল বলেন, অন্য কথা। যেমন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সেতু ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৫ জানুয়ারি বলেছেন, ‘কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক টিম দেখে আওয়ামী লীগ উৎসাহবোধ করছে।’ তার ভাষায়, ‘আশা করছি, ৭ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা পর্যবেক্ষণ করে যেন তার সঠিক চিত্র, বিদেশি সাংবাদিকরা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।’ প্রশ্ন হচ্ছে, পর্যবেক্ষক টিম দেখে এত খুশি হওয়ার কী আছে? যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডা কাউকে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পাঠায়নি। এ দেশগুলোর দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলছে, কয়েকজন নাগরিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আর একটু আগ বাড়িয়ে বলেছে, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’ এ বিষয়ে কী বলবেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক? আর তিনি বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে যা আশা করছেন তা যদি না ঘটে তা হলে কি খুশি থাকতে পারবেন মাননীয় মন্ত্রী? নিশ্চয়ই পারবেন না। বিদেশিদের পানে চাতক পাখি না হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়তা তাঁর দল ও সরকারে সংশ্লিষ্টদের ধারণ করা উচিত। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জনগণের ধারণার ওপর নির্ভর করার কথা বলেছেন। ফলে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে জনতার পারসেপশন অনুধাবন করা প্রয়োজন, জরুরি। এ জন্য নমুনা হিসেবে কয়েকটি আসন বাছাই করা যেতে পারে।  এর মধ্যে বরিশাল সদর এবং বরিশাল-৬ আসন রাখলে জরিপ সহজ হবে বলে অনেকেই মনে করেন। বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, নির্বাচনে কৌশল একটি বড় নিয়ামক। কিন্তু তাই বলে জনতার ধারণাও পায়ে ঠেলা যাবে না। যে কান্ড সামরিক শাসকরা করেছেন তা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করে পার পাওয়া কঠিন। অসম্ভব বলেই ধরে নেওয়া উচিত। এ বিষয়টি সরকারের কর্তাদের গভীর বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর