শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শুদ্ধতম মানুষের কথা

অধ্যাপক জীবেন রায়

শুদ্ধতম মানুষের কথা

বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ে আমার জন্ম। কেমন করে যেন কিশোরগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে চতুর্থ স্থান অধিকার করে ফেললাম।

তখনকার বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় ছবিসহ প্রোফাইল বের হলো। তারপর নটর ডেম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমেস্ট্রি বিভাগের লেকচারার। পরবর্তীতে কানাডা থেকে পিএইচডি হাওহাই থেকে পোস্টডক এবং বাংলাদেশে ফেরা এবং গণস্বাস্থ্যের জাফর ভাইয়ের (প্রয়াত জাফরুল্লাহ চৌধুরী) সঙ্গে কাজ করা।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা এবং অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়া, আবার ফিরে আসা এবং পরিশেষে স্কয়ার ফার্মাসিউটিকেলে কাজ করা। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস।

দুর্নীতি কী, কীভাবে করে-আমি বুঝতে চেষ্টা করিনি। আমার এখনো মনে আছে, স্কয়ারে কাজ করাকালে প্রায়ই আমি বিদেশে গিয়েছি, অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়েছে। ভারতে একবার স্কয়ারের মেশিনারি সরবরাহকারী এজেন্ট বলল, এই ব্যবসা করিয়ে দিতে পারলে, সে সাপ্লায়ের কাছ থেকে ৩% কমিশন পাবে। তাছাড়া প্রাপকরাও তাকে কমিশন দেবে। এটাকেই হয়তো দালালি বলা হয়। যা হোক এসব দালালকেও প্রচুর কাজ করতে হয়।

কিন্তু আমি তো স্কয়ার কোম্পানির একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী; আমি কমিশন নেব কেন? আমার মাথায় কখনো আসেনি। তারপর আবার শিক্ষকতা পেশায় ফিরে এলাম এবং ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতা করে যাচ্ছি। তিনটা মেয়ে এ দেশে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে। এখন চাকরি করছে। আমার স্ত্রীও ১৭ বছর এ দেশে কাজ করেছে, এখন ইস্তফা দিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। লেখালেখির প্রতি আমার বরাবরই একটা প্রচ- নেশা ছিল।

যা হোক, আমার লেখার ইচ্ছা বাংলাদেশের ইলেকশন, ইলেকশন না করা পার্টি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীকথন নিয়ে। বিএনপি একসময় ক্ষমতায় ছিল। তেমনি জাতীয় পার্টিও ক্ষমতায় ছিল। দুটি দলেরই অরিজিন্যাল লিডারশিপ নেই বললেই চলে। বিএনপির লিডারশিপ থেকেও নেই। দেশনেত্রী অনেক দিন যাবত অসুস্থ আর তার পুত্র দেশে নেই। স্বাভাবিকভাবেই গণজোয়ার নেই। তার ওপর দলটি পরপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। বিশেষ করে এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাটা ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছে দলটি। ইলেকশন করে কারচুপি প্রমাণসহ তুলে ধরতে পারলে যতটা লাভ হতো, আর অংশগ্রহণ না করে আওয়ামী লীগকে ওয়াকওভার দিয়ে তেমন লাভ কি হয়েছে? বিএনপির এই ভুলের মাশুল দিতে দিতেই দলটি হয়তো শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা কত বড়মাপের রাজনীতিক, আরও একবার প্রমাণিত হলো। বারবার ক্ষমতায় থেকেও ডিক্টেটর হয়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় আসাটা বরং শেখ হাসিনার বুদ্ধিমত্তার জন্যই হচ্ছে। অবশ্যই প্রশংসা করতে হয়। মন্ত্রিসভা গঠনে তার দূরদর্শিতা না বললেই নয়। সামন্ত লাল সেনকে মন্ত্রী বানানো একমাত্র শেখ হাসিনাই করতে পারেন। একেই বলে একজন প্রকৃত লিডারের গ্রেটনেস। প্রতিটি মন্ত্রীই তাদের মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন।

অবাক হওয়া সামন্ত লাল সেন বলেছেন তার নিজের কথা। তিনি ভাবতেই পারেননি। তিনি ডাক্তার ছিলেন এবং ডাক্তারই থাকবেন। বাংলাদেশে দুর্নীতি যখন প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেখানে ডা. সেন কি পারবেন? প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন এবং তাকে জানাতে বলেছেন।

এ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রার্থীদের, বিশেষ করে হেরে যাওয়া প্রার্থী, তা নৌকা প্রতীকের হওয়ার পরও কারচুপির কথা বলছেন। তাও আবার যেখানে হাজার হাজার এমনকি লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধান।

আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সুমন লক্ষাধিক ভোটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রতিমন্ত্রীকে হারিয়েছেন। তেমনি হেরেছেন নৌকা প্রতীকের ইনু সাহেব। উনি আবার কারচুপির কথা বলেছেন। হাজার হাজার ভোটের কারচুপি? আপনার উচিত প্রমাণ সংগ্রহ করে ইসি কর্তৃপক্ষকে জানানো। একবার চিন্তা করুন গত পাঁচ বছরে কতবার গিয়েছেন আপনার নির্বাচনি এলাকায়? সুতরাং স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হবে তো বটেই।

অন্যদিকে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী, ব্যারিস্টার সুমন তার এলাকায় এতই পপুলার এবং এলাকার জন্য এত কাজ করেছেন, জনগণ তার প্রতিদান দিয়েছেন- লক্ষাধিক ভোটে জিতিয়ে দিয়ে। আশা করি শেখ হাসিনা এক দিন এই ভদ্রলোককে মন্ত্রিত্ব দেবেন। হারলেই কারচুপি, তাহলে ফেয়ার ইলেকশন কখন হবে? একমাত্র বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী হেরে যাওয়ার পর এখনো কিছু বলেননি। হয়তো তার কোনো একটা লেখায় লিখবেন। অপেক্ষায় রইলাম।

আমি তিনটি ডেভেলপড দেশ-যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় থেকেছি। সেসব দেশে বিরোধী দল, সরকারি দলের কার্যাদি-সবকিছুই হেলা, অশ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে-তেমনটি নয়। ভালো কাজকে ভালোও বলে থাকে। কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশে সরকারি দল দেশের জন্য যাই করুক, সবই খারাপ বিরোধী দলের কাছে। এমনকি বিরোধী দলের কথা বলার ধরনও বিভীষিকাময়।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পাল্টায় কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী দল পাল্টায় না। হরতাল একসময়ের হাতিয়ার ছিল। এখন তেমনটা নয়। কী লাভ হলো অগ্নিসন্ত্রাস করে? নিরীহ কিছু সাধারণ মানুষের জীবনহানি ঘটল।

পরিশেষে একটি কথার ওপর জোর দিতে চাই এবং প্রধানমন্ত্রী, আমার সেই কথাটিই নতুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, ‘দুর্নীতি-অনিয়ম বরদাশত করব না’। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর করতে পারলেই বাংলাদেশ একটি পারফেক্ট দেশ হবে। তাহলেই গরিবি থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। আজকাল ইউটিউবে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন বিদেশি সাংবাদিক বা ইউটিউবার দ্বারা ধারণকৃত কান্ট্রি ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। নিজের দেশকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য অবশ্য আমরা প্রবাসীদের ভালো লাগে না। বাংলাদেশের সাংবাদিক বা লেখকদের দিয়ে বিভিন্ন পজিটিভ দিক, যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শিক্ষা এবং উচ্চতর শিক্ষা, বাংলাদেশ কানেকটিভিটি, বাংলাদেশ ভিলেজ লাইভস, বাংলাদেশ আতিথেয়তা ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে তুলে ধরা উচিত। 

লেখক : বিজ্ঞান ও অঙ্ক বিভাগ মিসিসিপি ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান কলম্বাস, যুক্তরাষ্ট্র

সর্বশেষ খবর