ঢাকার অদূরে বিখ্যাত তুরাগ নদের তীরে চলছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম উম্মাহর দাওয়াতি কার্যক্রমের শীর্ষ মিলনমেলা হিসেবে দুনিয়াজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী নগরী সেজেছে নতুন সাজে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় কয়েক হাজার তাবলিগ প্রেমী মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম জাহানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এদেশের মানুষ যে সত্যিকার অর্থেই ধর্মভীরু বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ বছর বিশ্ব ইজতেমায় যেসব মুসল্লি অংশ নিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের মোবারকবাদ। রসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সেরা দায়ী। তিনি তাবলিগ করেছেন সর্বসাধারণের কাছে। দাওয়াতের এ দায়িত্ব নিয়ে তিনি ঘুরেছেন, মরুপ্রান্থরে সবার ঘরে ঘরে। হেঁটেছেন অলিগলিতে, পাহাড়ে-পর্বতে। এই দাওয়াতি চিন্তায় তিনি সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন। সমগ্র জাতির দুর্দশা নিয়েই তিনি চিন্তা করতেন। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কর্মজীবনের বর্ণনায় এসেছে, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) সর্বক্ষণিক বিষণœ এবং সর্বদা চিন্তিত থাকতেন। তাঁর কোনো বিরাম ছিল না।’ (সিরাতে রসুল)। মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রসুল ছিলেন, তিনি একজন দায়ী ছিলেন, বিশ্ব মুসলিমের জন্য আদর্শ শিক্ষক ও আত্মশুদ্ধির মূর্ত প্রতীক ছিলেন। পরিবারের কর্তা, আদর্শ সমাজ সংস্কারক ও সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মসজিদে নববীর ইমাম ছিলেন। মিম্বরের খতিব ছিলেন। রণাঙ্গনের সেনাপতি ছিলেন। ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শাসক। আমরা যথাসাধ্য তাঁর সর্বজনীন আদর্শ অনুসরণের প্রচেষ্টা করতে পারি। আমাদের কেউ শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করছেন, কেউ দায়ী, লেখক বা আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি ধর্মীয় কাজে নিয়োজিত আছেন। কারও কাজ ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই। আমরা পরস্পর সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। সাধ্যানুযায়ী সব ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগের মানসিকতা ত্বরান্বিত করতে পারি। আধ্যাত্মিক কার্যক্রম ও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা দাওয়াতি কাজে বেশি কার্যকরী হয়। এই পথে বাতিল মতবাদ অধিকহারে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। তাই এই প্ল্যাটফরমে আমাদের বিচরণ করা ও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করা কাম্য। দাওয়াতি আদর্শ ও দাওয়াতি কার্যক্রম সব মহলে প্রতিক্রিয়াশীল হয়। অতি দ্রুত প্রভাব বিস্তার করে। বাতিল প্রতিরোধ ও ইসলাম প্রচার-প্রসারে দাওয়াতি কার্যক্রম খুবই গতিশীল ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাই আলেমগণ নায়েবে রসুল হিসেবে এ কাজে অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি। মানুষকে সঠিক পথে উৎসাহিত করা এবং তাদের ভুল ধারণা নির্মূল করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, সম্পর্ক করা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রত্যেকের একটা কর্মসূচি হতে পারে। সমাজের বিশাল অংশ মহিলা মুসলিম। বর্তমানে অনেক বাতিল মতবাদ তাদের বিভ্রান্ত করার কাজে সক্রিয় হচ্ছে। মহিলাদের মাধ্যমে পুরুষও প্রভাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই আমাদের নিজেদের মহিলাগণকে যথাযথভাবে দাওয়াতের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত দাওয়াত প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজন ও সুযোগ অনুযায়ী সাপ্তাহিক বা মাসিক তালিমের ব্যবস্থা চালু করতে পারি। গোটা বাংলাদেশে অগণিত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আলেম উলামা রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই আহলে হক, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত। তার পরও এ দেশে বাতিল মতবাদ কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে? তা আজ আমাদের ভাবনার বিষয়।  চিন্তা করার প্রয়োজন আমাদের কী করণীয়। আমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আপন আপন দায়িত্ব পালনে যত্নবান হই। জবাবদিহিতার প্রতি সচেতন হই।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা