শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

তিশা আর মুশতাককে নিয়ে সমস্যা কেন?

তসলিমা নাসরিন

তিশা আর মুশতাককে নিয়ে সমস্যা কেন?

অল্প বয়সি মেয়ে আর বেশি বয়সি পুরুষের মধ্যে বিয়ে হলে লোকেরা বলে যে মেয়েটা টাকার জন্য বিয়ে করেছে। বয়সের ব্যবধান ৪০ বা ৪৫ না হয়ে যদি সর্বজনগ্রহণীয় ৩ বা ৫ হয়, তখন কী কারণে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ বিয়ে করে, শুনি? তখনও তো নারী টাকার জন্য বিয়ে করে, টাকার জন্য করে বলেই পথের ভিখিরিকে বিয়ে করে না বরং পুরুষ ভালো চাকরি বা ব্যবসা করে কিনা, ভালো টাকা উপার্জন করে কিনা, সে টাকায় ভালো সংসার চালাতে পারে কিনা সেটা দেখে নিয়ে তারপর প্রেম করে বা বিয়ে করে। ওদিকে পুরুষ নির্বিঘ্নে নিয়মিত সেক্স করার জন্য, স্ত্রীকে দিয়ে ঘরের কাজকর্ম করানোর জন্য, ঔরসজাত সন্তান জন্ম দেওয়ানোর জন্য বিয়ে করে। সবচেয়ে বড় অলিখিত চুক্তি তো এটিই।

টাকার জন্য বিয়ে কে করে না? পুরুষও করে টাকার জন্য বিয়ে। স্বাবলম্বী মেয়েকে বিয়ে করার লোভ এখন পুরুষের মধ্যে প্রচন্ড। এককালে শিক্ষিত মেয়েদেরও চাকরি বাকরি করতে দিত না স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এখন আপত্তি তো করেই না বরং ধরে বেঁধে পাঠায় চাকরি করতে। সকলেই টাকা চায়। যে বাড়ি থেকে পণ বা যৌতুক বা উপঢৌকন বেশি পাবে, সে বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করার প্রবল আগ্রহ পুরুষের। তারা তো টাকার জন্যই বিয়ে করে। যখন সবাই তা করে, তখন অল্প বয়সি মেয়েকেই কেন শুধু টাকার জন্য বিয়ে করার দোষটা দেওয়া হয়, শুনি?

তিশা যদি টাকার জন্য বিয়ে করে থাকে মুশতাককে, তাহলে অন্যায় কেন হবে? আর সবার মতো সেও তাই করেছে। পরিবার থেকেই মেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হয় যে এমন কাউকে যেন তারা বিয়ে করে, যে স্ত্রীকে ভাত কাপড় দিতে পারবে, যে স্ত্রীর শখ আবদার পূরণ করতে পারবে। মেয়ের বিয়ের জন্য আত্মীয়স্বজন তো তেমন পাত্রই খোঁজে। তিশা তার আত্মীয়স্বজনকে পাত্র খোঁজার দায়িত্ব না দিয়ে সে নিজেই পাত্র খুঁজে নিয়েছে। তার আত্মীয়স্বজন পাত্র খুঁজলে হয়তো মুশতাকের মতো টাকা পয়সা আছে এমন পাত্র খুঁজতো কিন্তু মুশতাকের চেয়ে কম বয়সি পাত্র খুঁজত। এখানে সমস্যাটা হলো, বয়স।

বিয়ের পর অনেক মেয়ের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে আধুনিক সমাজে স্কুল-কলেজ পাস করার পর মেয়েদের বিয়ে করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিয়ের কারণে তিশার কিন্তু পড়াশোনা বন্ধ হয়নি। বরং মুশতাক তাকে আরও পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিচ্ছে, এ ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছে। মুশতাক তাকে চার দেয়ালের ভেতর দাসীর ভূমিকা পালন করার জন্য বন্দি করেনি। তাকে যৌনবস্তু হিসেবেও দেখছে না, তাকে বোরখা পরাচ্ছে না, হিজাব পরতে বাধ্য করছে না। তাকে কোনও গোপন ফ্ল্যাটে রক্ষিতার মতো রাখছে না। বরং তিশাকে রীতিমতো অত্যাধুনিক পোশাক পরাচ্ছে, প্যান্ট-শার্ট বা স্যুট পরতে উৎসাহ দিচ্ছে, তারপর হাতে হাত ধরে দুজন হেঁটে বেড়াচ্ছে। তারা সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলছে তারা প্রেম করে বিয়ে করেছে, তারা পরস্পরকে ভালোবাসে। তারা যে অভিমত ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে সেটা হলো বিয়ে করলে ভালোবেসে বিয়ে করতে হয়। তারা কিন্তু কাউকে এই উপদেশ দিচ্ছে না যে এখন থেকে অল্প বয়সি মেয়েরা যেন বুড়ো ভামকে বিয়ে করে। লোকেরা কেন তবে তাদের দিকে ঘৃণা ছুড়ে দিচ্ছে। একটিই কারণ, তাদের বয়সের পার্থক্যটা বেশি। এমন কোনও আইন আছে দেশে যেখানে বয়সের বৈধ ব্যবধান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে? আমার জানামতে নেই। আইন বলছে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে বৈধ নয়, আর ২১ বছরের আগে ছেলেদের বিয়ে বৈধ নয়। তিশার ১৮ বছর হয়েছে, আর মুশতাক তো ২১ পার করেছে চার দশক আগে।

তাদের বিয়ে বৈধ হলেও আমার চোখে তিশা-মুশতাক জুটি আদপেই কোনও আদর্শ জুটি নয়। দীর্ঘকাল থেকে বলছি মেয়েরা যেন শিক্ষিত হয়, স্বনির্ভর হয়, মেয়েরা যেন পরনির্ভর না হয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়ের মতো তিশাও স্বামীর ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল। লেখাপড়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই, কৈশোর সম্পূর্ণ উপভোগ করার আগেই, তিশা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। তিশার ভবিষ্যৎ এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করছে মুশতাকের ওপর। মুশতাক যদি কোনও কারণে সাহায্যের হাত গুটিয়ে ফেলে, তবে তিশার জীবন দুঃসহ হতে বাধ্য। আরও একটি কারণে আমি এই জুটিকে আদর্শ জুটি বলি না, তাদের যৌনজীবন আপাতত সুখের হলেও হয়তো অদূর ভবিষ্যতে সেটি দুঃসহবাসে পরিণত হবে। আবার এও বলতে হয়, বয়সের পার্থক্য না থাকলেও যে কোনও দম্পতির জীবনে অতৃপ্তি এবং অশান্তি আসতে পারে। তাছাড়াও আমার কাছে যে সম্পর্ককে শোভন সুন্দর বলে মনে হচ্ছে না, তাদের কাছে হয়তো মনে হচ্ছে, আমি যৌনজীবনকে যতটা মূল্য দিচ্ছি, তারা হয়তো ততটা দিচ্ছে না। তারা হয়তো নিজেদের সুখী বলে মনে করছে এবং ভবিষ্যতেও সুখী বলে মনে করবে। এই ক্ষেত্রে আমার মতবাদের চেয়েও তাদের মতবাদ বেশি প্রাধান্য পাবে। সুখ, আমরা জানি যে, একেবারেই আপেক্ষিক। আমার জন্য যা সুখের নয়, অন্যের জন্য হয়তো তা সুখের। আমরা কেবল নিজের মত ব্যক্ত করার অধিকার রাখি, অন্যের ওপর নিজের মত চাপিয়ে দিতে পারি না।

মুশতাককে অনেকে ধুরন্ধর বলে বিচার করছে, বলছে ফাঁদে ফেলে বা প্রেমের অভিনয় করে অবুঝ শিশু তিশাকে বিয়ে করেছে মুশতাক। ভোগটাই তার উদ্দেশ্য। বৃদ্ধ বয়সে একা থাকার বদলে প্রাণোচ্ছল তরুণীর সান্নিধ্য কামনা করেছে মুশতাক এবং সে সফল হয়েছে। অনেকে আবার তিশাকে চতুর বলে ভাবছে। তারা মনে করছে মুশতাকের মৃত্যুর পর তার প্রচুর ধনসম্পদ তিশা পাবে। ধনী তিশা তখন দেখে শুনে বয়সের ব্যবধান কম এমন কোনও যুবককে বিয়ে করবে। এরকম যদি হয়, তাহলে বলতে হবে দুজনই স্বার্থ দেখছে। এরকম না হলেও কিন্তু তারা স্বার্থই দেখছে। এই জগত-সংসারে কে স্বার্থ দেখে না, শুনি?

অভিযোগ উঠছে কিশোরী মেয়েরা তিশাকে দেখে প্রভাবিত হচ্ছে। তারা কি সত্যিই বয়স্ক লোকদের বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যেহেতু তারা দেখছে বয়স্ক লোকের সঙ্গে তিশা বেশ সুখে আছে? প্রভাবিত হচ্ছে বলে সমাজের বুদ্ধিজীবীরা বড়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আমি কিন্তু প্রচুর কিশোরীকে তিশা এবং মুশতাকের সম্পর্ক নিয়ে মন্দ কথা বলতে শুনেছি। মিডিয়ায় মেয়েদের নিন্দে বেশ ফলাও করে প্রচারও হয়েছে। বাংলাদেশের কিশোরীদের আসলে বেশি প্রভাবিত করছে রক্ষণশীল চিন্তাভাবনা, প্রভাবিত করছে হিজাব। ইরানের মুসলিম মেয়েরা দেশজুড়ে হিজাবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সেই জগত আলোড়িত করা আন্দোলন বাংলাদেশের মুসলিম মেয়েদের সামান্যও প্রভাবিত করেনি। কিশোরীরা হিজাব পরা এবং নামাজ রোজা করায় দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছে। আকৃষ্ট হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক যাবতীয় প্রথায়।

সেলিব্রিটিরা সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে। তিশা-মুশতাক কোনও সেলিব্রিটি নয়। বিয়ের আগে কেউ তাদের চিনতো না। যদি অসম বয়সের বিয়ে প্রভাবিত করে, তবে হুমায়ূন শাওন জুটি করবে। হুমায়ূন এবং শাওনের প্রচুর ভক্ত তাদের বিয়ের আগে থেকেই ছিল। আইডলের পথে হাঁটার প্রেরণা অনেকেই পায়। বৃদ্ধরা ভাবে কিশোরীকে বিয়ে করা এমন কোনও দোষের নয়, প্রণম্য হুমায়ূন আহমেদই তো করেছেন। মুশতাক কিন্তু কোনও কারণেই কারও প্রণম্য নয়, সে কারণে লোকেরা হুমায়ূন-শাওনকে বইমেলায় প্রণাম করে, আর মুশতাক-তিশাকে অপমান করে তাড়ায়।

সমাজে প্রতিনিয়ত বড় বড় অপরাধ ঘটছে, যে অপরাধ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে মানুষ এবং তাদের সম্মিলিত অপরাধের ফলে সমাজের সত্যিকার সর্বনাশ হচ্ছে। ক’দিন পর পরই শুনি মাদ্রাসার শিক্ষক মাদ্রাসার ছাত্রদের ধর্ষণ করছে। ধর্ষণের খবর বেরোনোর পর ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রচুর মাদ্রাসার শিক্ষক প্রভাবিত হয়। এমন প্রচ- প্রভাবিত হয় যে বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। ধরা পড়লে শাস্তি পাবে, সে কথাটাও ভুলে যায়। দুর্নীতিগ্রস্ত লোক দ্বারা অগুনতি লোক প্রভাবিত হচ্ছে। নারী নির্যাতক দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। মিথ্যুক দ্বারা, ধর্মান্ধ দ্বারা, ঠগ দ্বারা, অত্যাচারী দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। জনদরদী লোক দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বদলে সমাজের বদ এবং নির্মম নিষ্ঠুর লোক দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার প্রবণতাই সমাজে বেশি। মুশতাক অপহরণ করেনি তিশাকে, তাকে জনসমক্ষে নির্যাতন করেনি, তাকে ধর্ষণ করেনি। বরং তিশাকে সে যে খুব ভালোবাসে তার বর্ণনা করে বই লিখেছে। যে রকমই সে বই হোক, বই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বইমেলায় তাদের দেখার জন্য, তাদের ছবি তোলার জন্য, তাদের বই কেনার জন্য, তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এমন ভিড় বেড়েছে যে লেখকরা দূর থেকে বিরক্ত হয়েছেন, কারণ স্টলের ভেতর একা বসে আছেন গণ্যমান্য লেখকরা, তাদের বই কেনার জন্য কেউ হামলে পড়ছে না। ঈর্ষান্বিত হননি কি কেউ? নিশ্চয়ই হয়েছেন। এরকম ক্রাউড তো তাঁরাও চান।

তিশা আর মুশতাকের জন্য হওয়া ফ্রেন্ডলি ক্রাউডের ভেতর থেকে হঠাৎ কিছু লোক অশোভন শব্দে সেøাগান দেওয়া শুরু করেছিল সেদিন, পুলিশের আশ্রয় নিয়ে অগত্যা তিশা আর মুশতাককে বইমেলা থেকে বেরিয়ে যেতে হলো। যারাই করেছে অপমান, করেছে তিশা আর মুশতাকের বয়সের ব্যবধানের জন্য। বাংলাদেশে ৩০ বা ৪০ বছর বয়সের ব্যবধানে বিয়ে হওয়া কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। গ্রামগঞ্জের গরিব পরিবারে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সত্তরোর্ধ্ব লোক গরিব বাপ-মায়ের হাতে বেশ টাকা পয়সা দিয়ে তাদের কিশোরী মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে যায়। শহরের শিক্ষিত পরিবারেও এমন ঘটনা ঘটে। বিশ্বের ধনী সেলিব্রিটিদের মধ্যে তো অসম বয়সের বিয়ের চল বেশ আছে। লেখক হুমায়ূন আহমেদ আর শাওনের বয়সের পার্থক্য ছিল ৩২ বছর। সে কারণে তাঁদের হেনস্তা হতে হয়নি। অনলাইনে শাড়ি-ব্লাউজ বিক্রি করা মেয়ে তনি আর তার দ্বিতীয় স্বামী সাদাতের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ৩৮ বছর। বয়সের পার্থক্য নিয়ে সেলিব্রেটিরা কোনও অসুবিধেয় না পড়লেও অসুবিধেয় পড়ে সাধারণ মানুষ। তনির প্রথম দিকে অসুবিধে হয়েছিল, কিন্তু নিন্দুকদের তির্যক মন্তব্যের উত্তরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের চাবুক মেরে নিন্দুকদের আপাতত নিরস্ত করেছেন এবং সেই ফাঁকে নিজেই সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন। তিশা আর মুশতাকের বয়সের পার্থক্য ৪২ বছর। অসুবিধে হচ্ছে তিশা আর মুশতাকের। তারা সাধারণ মানুষ বলেই হচ্ছে। সাধারণ এবং সাধারণ নয়-এই দুই ধরনের মানুষকে চিরকালই ভিন্নভাবে গ্রহণ করেছে জনসাধারণ।

অনেকে বলছে, তিশা আর মুশতাক ভাইরাল হওয়ার জন্য বই লিখেছে, বইমেলায় গিয়েছে, বই সই করেছে, ভাইরাল হওয়ার জন্য নানা জায়গায় ইন্টারভিউ দিচ্ছে, নিজেদের প্রেম আর বিয়ের ইতিহাস বলছে। আমার প্রশ্ন, কে ভাইরাল হতে চায় না? সবাই ভাইরাল হতে চায়, সবাই। নেচে গেয়ে রেঁধে বেড়ে চায়, লোক হাসিয়ে চায়, লোক কাঁদিয়ে চায়, বিপ্লব করে চায়, মোদ্দা কথা ভাইরাল হওয়ার শখ সবারই। তিশা আর মুশতাক সাংবাদিকদের ডেকে আনেনি, তারপরও কিছু সাংবাদিক এবং কৌতূহলী লোক তাদের সাক্ষাৎকার চেয়েছে। ভাইরাল হতে কেন চাইবে না? ভাইরাল হলে যশ খ্যাতি জোটে। কী করে ভাইরাল হলো, সেটা আর লোকে দেখে না। দ্রুত সেলিব্রিটি হতে চাইলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে হয়। ভাইরাল হওয়ার জন্য গ্রাম থেকে শহর, গঞ্জ থেকে নগর-সবখানেই মানুষ ব্যস্ত। অজপাড়াগাঁয়ে বসে কচুসেদ্ধ রান্না করে ভাইরাল হচ্ছে কোনও দিন স্কুল-কলেজে পড়েনি এমন লোকও। ভাইরাল হওয়ার জন্য জাত ধর্ম শিক্ষা শ্রেণি কিছুই জরুরি নয়। ভাইরাল হলে টাকা উপার্জনের পথও প্রশস্ত হয়। কে না চায় ভাইরাল হতে? সোশ্যাল মিডিয়া নিয়মিত ব্যবহার করছে, অথচ ‘ভাইরাল হওয়ার ইচ্ছে নেই’ যারা বলে, মিথ্যে বলে।

তিশা আর মুশতাক থানায় গেছে হেনস্তাকারীদের বিরুদ্ধে জিডি করতে। পুলিশের কাছ থেকে আদৌ সাহায্য পায় কিনা, সঠিক বলতে পারবো না। পুলিশ তো এই সমাজেরই লোক, যারাও জানে সেলিব্রিটি হলে সাত খুন মাফ, আর তা না হলে নিন্দা আর ধিক্কার।

প্রেম করা অপরাধ নয়, বিয়ে করাও অপরাধ নয়। যে কোনও বয়সের মানুষেরই পরস্পরের সম্মতিতে প্রেম এবং বিয়ে করার অধিকার আছে। নিরপরাধ দম্পতি থেকে নজর সরিয়ে সত্যিকার অপরাধীকে চিহ্নিত করা হোক। আমাদের এ সমাজ অপরাধীকে মুক্ত করে নিরীহকে এবং নিরপরাধকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে বারবার। এখনও কি সময় হয়নি সমাজ বদলাবার? সময় হয়নি সংকীর্ণ মানসিকতাকে আরও উদার করার, কূপমন্ডুকতাকে বিসর্জন দেওয়ার, ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্বীকার করার, ভিন্নমতকে সম্মান করার?

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা

সর্বশেষ খবর