খেলাপি ঋণ কমানোর ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও বাস্তবে এ বেপরোয়া দৈত্য সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিল।
এ শর্ত পূরণে সরকারেরও আগ্রহ ছিল বোধগম্য কারণে। তার পরও গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে সাকল্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ মোট বিতরিত ঋণের ৯ শতাংশ। আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তবে সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না, কারণ কাগজে-কলমে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে তার পরিমাণ ঢের বেশি। আইএমএফ প্রতিনিধি দল অর্থ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকে খেলাপি হিসেবে দেখায় না। আইএমএফ এসব ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় অবশ্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সংশোধন করা হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন। সংশ্লিষ্ট আরও কিছু আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা তৈরির কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এক বছরে খেলাপি ঋণ কিছুটা বাড়লেও এসব উদ্যোগের ফলে বছরের শেষ তিন মাস অর্থাৎ অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বরে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। খেলাপি ঋণের অপমান থেকে রক্ষা পেতে হলে ব্যাংকগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’ সংস্কৃতি রুখতে হবে কঠোর হাতে।