বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রভুর রহমত ও ভালোবাসা কুড়ানোর প্রস্তুতি নিন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

প্রভুর রহমত ও ভালোবাসা কুড়ানোর প্রস্তুতি নিন

শাবান শেষে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারক। বান্দার ইবাদতের বসন্তকাল শুরু হচ্ছে কদিন পরই। আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে মাবুদের সান্নিধ্য ও সন্তোষ অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসছে মাহে রমজান। আশা করছি এ রমজান মানুষের প্রেম-ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করবে। বিশ্ব মুসলিম প্রতি বছর এ মাসে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালনে বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়। আমাদেরও পুণ্যের প্যাকেজ গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। অকৃত্রিম বিশ্বাস আর হৃদয়ভরা ভালোবাসা নিয়ে পুরো মাস ইবাদতে ডুবে থাকার বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আত্মোপলব্ধি ও আত্মসমালোচনা বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। গুনাহের পথ ছেড়ে নেকির পথ ধরার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। কোরআন-হাদিসের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার ও যৌন সম্ভোগ, অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম। (ফাতহুল বারি চতুর্থ খন্ড)। রমজানের সিয়াম পালন করা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির একটি। আল্লাহর রসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর আল্লাহর পক্ষ থেকে সিয়াম পালনের বিধান অবতীর্ণ হয়। সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়- ‘তোমাদের ওপর রোজা আবশ্যিক বা ফরজ করা হলো যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যেসব উম্মত ছিল তাদের প্রতি, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ এ আয়াত নাজিল হওয়ার পরের বছর রমজান আসার আগে আল্লাহর হাবিব (সা.) সমবেত সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে এক দীর্ঘ ভাষণ দেন। এতে তিনি রমজানের গুরুত্ব, উদ্দেশ্য ও করণীয় সম্পর্কে প্রিয় উম্মতকে অবহিত করেন। হজরত সালমান ফারসি (রা.) বর্ণনা করেন, শাবানের শেষে রসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে বয়ান রাখেন। বলেন, হে লোকেরা! তোমাদের ওপর এসেছে এক মহান ও বরকতময় মাস। এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে তার জন্য থাকবে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। আর যে ব্যক্তি এতে একটি ফরজ পালন করবে তার জন্য থাকবে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ পালনের সমান প্রতিদান। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার জন্য রয়েছে পাপমোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং রোজাদারের মতোই তাকে সমান প্রতিদান দেওয়া হবে।

প্রেমের মাস, বরকতের মাস, কল্যাণের মাস রমজান কোরআনের মাস। লাইলাতুল কদর- প্রেমের ইতিকাফের মাস। রমজান হলো প্রাণ খুলে চাওয়ার মাস। দুই হাত ভরে পাওয়ার মাস। কী চাইব? কী পাব? আমরা এতই কম জানা মানুষ, কী চাইতে হবে কী পেতে হবে সে জ্ঞানও আমরা ভুলে গেছি। খুব আফসোস হয় যখন কেউ বলে, হুজুর! দোয়া করবেন ব্যবসাটা যেন আরও ভালো করতে পারি। দোয়া করবেন রমজানের পরে বাড়ির কাজ ধরব। কিন্তু কেউ বলে না, দোয়া করেন আল্লাহ যেন আমার জীবনকে কোরআনের নূর দিয়ে, ইমানের নূর দিয়ে নূরানি করে দেন। কেউ বলে না, এ জীবনে এতগুলো বসন্ত পেরিয়ে এলাম কোরআনের একটি আয়াতও বুঝে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আমাকে তাঁর কালাম বোঝার তৌফিক দেন। তিনি যেন আমাকে ইমানের সঙ্গে মরার তৌফিক দেন। প্রিয় পাঠক! আসুন! এখন থেকে, সামনের রমজান থেকেই আমরা আমাদের চিন্তা-চেতনায়, কাজে-কর্মে, ধ্যানে-জ্ঞানে আখিরাতকে প্রাধান্য দেই। আল্লাহ বলেছেন, ‘ওয়া আসারাল হায়াতাদ দুনিয়া। ফাইন্নাল জাহিমা হিয়াল মাওয়া’। তারা তো আখিরাতের ওপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিত। তাদের আবাস হবে অনন্ত জাহান্নামে। প্রিয় পাঠক! এ রমজানে আমরা আমাদের মনের কথাগুলো আল্লাহকে বলব। আমাদের প্রয়োজন মতো চাইব। নবী (সা.) প্রায় সময় একটি দোয়া করতেন। দোয়াটি অনেক বড়। এখানে সংক্ষেপে বলছি। নবী (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে একটুখানি দয়া ভিক্ষা চাই। আমার মনে হেদায়াতের আলো ঢেলে দাও। আমার চিন্তাকে সুন্দর করে দাও। আমার প্রিয়কে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। আমার জীবনকে সাজিয়ে দাও। বর্তমানের চেয়ে আমার ভবিষ্যৎকে আরও সুন্দর কর। হে আল্লাহ! সব ভরসা তোমারই ওপর। তুমি ছাড়া ভরসা করার মতো কেউ নেই। অবশ্যই তুমি করুণাময়-প্রেমময় প্রভু। তুমি আমার মনকে আলোকিত কর। আমার কবরের জীবনকে সুন্দর কর। আমার কান আলোকিত কর। যেন এ কান দিয়ে আমি সব ভালো কথা শুনতে পারি। আমার চোখে নূর দাও যেন সব সুন্দর দেখতে পারি। আমার পশমে, পেশিতে, আমার পুরো শরীরে তোমার নূর ঢেলে দাও। যেন আমি নিজেকে তোমার পথে উৎসর্গ করতে পারি। হে আল্লাহ! আমার ডানকে আমার বামকে, সামনে-পেছনে, ওপর-নিচে সবদিক তুমি আমার আলোকিত করে দাও যেন কোনো অকল্যাণ আমায় ছুঁতে না পারে।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীর, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর