বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাহাবিদের অভিমত তারাবি ২০ রাকাত

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

রসুল (সা.)-এর আমল সম্পর্কে কোনো ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হলে এ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হলো এ বিষয়ে সাহাবিদের আমল, মতামত ও সিদ্ধান্ত। একেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সাহাবিদের এ অধিকার আল কোরআন ও হাদিস কর্তৃক স্বতঃসিদ্ধভাবেই স্বীকৃত। এ কারণেই অসংখ্য বিষয়ে সাহাবিদের সিদ্ধান্তাবলি ও মতামতকেই সুন্নত ও শরিয়ত বলে উম্মতে মুসলিমা গ্রহণ করেছে। এর মূল কারণ ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই যে সাহাবিরা রসুল (সা.)-এর সুন্নতের বিপরীত কোনো কাজে ঐকমত্য পোষণ করতে পারেন; এ ধরনের আকিদা কোনো মুসলমানের থাকতে পারে না। তারাবির বিষয়ে সাহাবিদের মতামত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা এ মূলধারাটি অনুসরণ করতে পারি। কেননা আমরা দেখছি যে ‘তারাবি ২০ রাকাত’। এ বিষয়ে সাহাবায়ে  কেরাম একমত, তাঁদের এ বিষয়ে কোনো ভিন্নমত নেই। উদাহরণস্বরূপ এ সম্পর্কে কিছু উদ্ধৃতি পেশ করা হলো-

১. আল্লামা কাসানি বলেন, ‘হজরত ওমর সব সাহাবিকে উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে একত্রিত করেন। হজরত উবাই প্রতি রাতে ২০ রাকাত করে তারাবি নামাজ আদায় করেন। হজরত ওমরের এ পদক্ষেপের কেউ প্রতিবাদ করেননি।’ আল্লামা কাসানি এরপর বলেন, ‘এর দ্বারা ২০ রাকাতের ওপর সাহাবিদের ঐকমত্য বোঝা যায়।’ ২. আল্লামা ইবনু আবদিল বার বলেন, ‘তারাবি ২০ রাকাত হওয়াই বিশুদ্ধ মত। হজরত উবাই ইবনে কাআব থেকেও এটাই বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে সাহাবিদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ ছিল না।’ হাম্বলি মাজহাবের প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক ইবনে কুদামাও এ বিষয়ে সাহাবিদের ঐকমত্য উদ্ধৃত করেছেন।

৩. শায়খুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা হেদায়েতুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘হজরত ওমর (রা.) সব সাহাবিকে এক ইমামের পেছনে তারাবি ২০ রাকাত পড়ার নির্দেশ দেন এবং হজরত ওসমান, আলীসহ সব সাহাবি কোনো প্রকার মতবিরোধ না করে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত হওয়াকেই গ্রহণ করেছেন।’ হজরত ওমরের এ নির্দেশের কারণ কী ছিল? এ সম্পর্কে বুখারিতে নিচের হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আবদুর রহমান (রা.) বলেন, এক দিন রমজানের রাতে আমি হজরত ওমরের সঙ্গে মসজিদে হাজির হলাম। মসজিদে লোকেরা একা একা এবং অনেকে ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়ছিল। হজরত ওমর বললেন, আমার ধারণামতে লোকদের একজন ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়ালে অতি উত্তম হবে। এরপর এ ধারণাকে চূড়ান্ত করে সবাইকে উবাই ইবনে কাআবের ইমামতিতে জমায়েত করলেন।’

৪. প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত সাইদ বিন ইয়াজিদ (রা.) বলেন, ‘হজরত ওমরের যুগে সব সাহাবি রমজানের তারাবি ২০ রাকাত আদায় করতেন।’ মুহাদ্দিস বায়হাকি বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ। শরহে মিহাজে আল্লামা সুবকিও বায়হাকির সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

৫. হজরত সাইদ বিন ওয়াহাব বলেন, ‘প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত ইবনে মাসউদ আমাদের তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়াতেন।’

৬. হজরত হাসান বলেন, ‘হজরত আলী (রা.) এক ব্যক্তিকে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়াতে আদেশ করেন।’

৭. বায়হাকি বর্ণিত রেওয়ায়েত দ্বারা বোঝা যায় প্রসিদ্ধ সাহাবি সুওয়ায়েদ বিন গাফালা (রা.) ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন।

মোটামুটি কথা হলো এই যে তারাবি ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে সাহাবিদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। সুতরাং রসুল (সা.)-এর আমল কী ছিল তা সহজেই অনুমেয়।

তারাবি ২০ রাকাতের বিষয়ে যেমন সাহাবিরা একমত ছিলেন তেমনি তাবেয়ি-তাবেতাবেয়িরাও একমত পোষণ করেছেন। বরং প্রতি যুগেই উম্মতে মুসলিমা একই মত পোষণ করে আসছে। শায়খুল ইসলাম মাওলানা ইউসুফ বিন্নরি (রহ.) বলেন, ‘তাবেয়িনদের মধ্যে ইবনু আবি মুলাইকা, আতা, আবুল বাখতারি, হারিস হামদানি, সাইদ বিন আবুল হাসান, আবদুর রহমান বিন আবু বকরসহ অন্যরাও এ মত পোষণ করেছেন।’

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইবনু আবদিল বার বলেন, ‘তারাবি ২০ রাকাত। অধিকাংশ ওলামার এটাই চূড়ান্ত মত।’ আল্লামা শামি বলেন, ‘এটাই জহুরের (অধিকাংশের) মত এবং উম্মতে মুসলিমার এটাই আমল।’ আল্লামা নববী (রহ.) বলেন, ‘কাজি আয়াজও ২০ রাকাতকে জমহুরের মত বলে ব্যক্ত করেছেন।’

সাহাবা ও তাবেয়িনদের চূড়ান্ত মত ওপরে উল্লেখ করা হলো। এতে বোঝা যায় তারাবি নামাজ ২০ রাকাতের বেশি হতে পারে এ ধরনের মত কেউ কেউ পেশ করেছেন, কিন্তু ২০-এর কম কেউ মত পেশ করেননি। ২০-এর কমের কথা যেসব হাদিসের দ্বারা বোঝা যায় ওগুলো হয়তো তাহাজ্জুদের নামাজ, অথবা সাহাবিদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগের মত। কিন্তু হজরত ওমরের যুগে ২০ রাকাতের ওপর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নির্ভরযোগ্য কেউ ২০ রাকাতের কম মত পোষণ করেননি। আর সাহাবিদের বিপরীত মত কেউ প্রকাশ করলেও তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর