শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশের কৃষি

শাইখ সিরাজ

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশের কৃষি

গত এপ্রিলে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ৮ এপ্রিল, ২০২৪ বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলে গেছেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিরাপত্তার অংশীদার হতে চায় ব্রাজিল।’ মাউরোর এই বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য বটে। কারণ ব্রাজিল চিনি, সয়াবিন, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, তুলা, কফিসহ অনেক পণ্যের শীর্ষ রপ্তানিকারক। বাংলাদেশের এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, কাজেই ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমার জানা মতে, গত কয়েক দশক ধরে সয়াবিন তেল, চিনি এবং তুলার বড় অংশ আমদানি হচ্ছে ব্রাজিল থেকে। মন্ত্রী বাহাদুরের সফরের আগেই একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে গরুর মাংস আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ চর্চা চলছে। পাশের দেশ ভারত থেকেও কম দামে গরুর মাংস আমদানির কথা বলেন অনেকেই। আমি এফবিসিসিআইয়ের অবেতনভোগী উপদেষ্টাদের একজন। ২০ মার্চ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে কৃষি খাত নিয়ে এক আলোচনায় একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেই ফেললেন, তাকে অনুমতি দিলে এদেশের মানুষকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে ভারত থেকে গরুর মাংস এনে খাওয়াবেন তিনি। একজন ভোক্তা হিসেবে এটা আমার কাছে স্বস্তির বিষয় হতে পারত। তবে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলছি, আমি মোটেই খুশি হইনি। পাঠক ভুল বুঝবেন না। আমিও চাই আপনি সাশ্রয়ী দামে গরুর মাংসসহ সব পণ্য কিনতে পারেন। কিন্তু কৃষির খাত-উপখাত নিয়ে প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ থাকলে কেন আমরা চেষ্টা করব না? এটা ঠিক যে বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা কেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও হলফ করে বলতে পারবে না যে সব কিছুতেই তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। তবে, কৃষি যেহেতু আমাদের পূর্ব পুরুষের পেশা, হাজার বছর ধরে কৃষিই আমাদের সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে, আর সেই সমৃদ্ধ পলিমাটির ঘ্রাণে সাত সাগর তের নদী পার হয়ে আরব, ইংরেজ, ওলন্দাজ, ফরাসিসহ নানা জাতের মানুষ এসেছে এই ভূখন্ডে। আমরা ধনী ছিলাম বলেই বেনিয়ারা এদেশে এসেছে ব্যবসা করতে। কাজেই আদি পেশা কৃষিতে যদি মনোযোগ দেওয়া যায়, তবে স্বাধীনতার যে স্বপ্নসাধ, সোনার বাংলা গড়ার, তা মোটেই কঠিন কাজ না, এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই সময়ে নীতিনির্ধারকদেরও হতে হবে চৌকশ এবং দূরদর্শী। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের সুফল কতটা ঘরে তুলতে পেরেছি, সেটি বিশ্লেষণ করতে হবে নির্মোহভাবে। শিল্পবিপ্লবের ইতিহাসে তিনটি বিপ্লবের কথা বলা হয়। ১৭৬০ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার মানুষকে এনে দেয় সহস্র বছরের গতি। ফলে উৎপাদন শিল্পে আসে আমূল পরিবর্তন। তৃতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯৬০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভবের ফলে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্প খাতে আনে অভাবনীয় পরিবর্তন। শিল্পের বিকাশে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি। কিন্তু যন্ত্র কি কৃষিতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি? ইতিহাস বলে লাঙলই ছিল কৃষির প্রথম যন্ত্র। পরে ধীরে ধীরে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়েছে কৃষিযন্ত্র। এখন উন্নত কৃষি মানেই যন্ত্রনির্ভর কৃষি। জমি তৈরি থেকে ফসল বপন, ফসল তোলা, সংরক্ষণ এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে যন্ত্রের ব্যবহার নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ধরন ও ধারণ। শুধু যন্ত্রই এখন শেষ কথা নয়। এই যন্ত্রের ব্যবহার স্বয়ংক্রিয় করে তোলাটিই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক প্রয়াস। ইউরোপের দেশগুলো খাদ্য ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কিন্তু প্রযুক্তি উৎকর্ষে তারা এগিয়ে। জার্মানিতে কৃষক পর্যায়ে দেখেছি অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। আর এই জার্মানিতেই সূচিত হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবটি মূলত ডিজিটাল বিপ্লব। পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ যন্ত্রকে পরিচালনা করছে; কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে যন্ত্র নিজেই নিজেকে পরিচালনা করছে। প্রতি বছর চীনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কৃষি যন্ত্রপাতি মেলায় অংশ নিই। সেখানে বিভিন্ন সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে আগামী দিনের কৃষিযন্ত্র নিয়ে পৃথিবীর কৃষি প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা ও গবেষণাও উঠে আসে। কৃষিযন্ত্রের মাঠ প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখেছি চীনের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো এখন ইউরোপের পাশাপাশি এশিয়ার দেশগুলোকে মাথায় রেখে স্বয়ংক্রিয় সব কৃষিযন্ত্র উন্নয়ন করছে। ২০১৯ সালে চীনের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির বৃহৎ প্রতিষ্ঠান লোভোলের হেড কোয়ার্টার এবং যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। লোভোল হচ্ছে কৃষি, নির্মাণ, ও অবকাঠামো যন্ত্রাংশ ছাড়াও ভারী ও বৃহৎ যানবাহন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এটি উচ্চতর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও চালকের আসনে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই লোভোল কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি। লোভোল ১২০টি দেশে তাদের আধুনিকতম কৃষিযন্ত্র সরবরাহ করছে। দানবাকার বিশাল ট্রাক্টর থেকে রোবটাকৃতির কীটনাশক ছিটানোর যন্ত্র, স্বয়ংক্রিয় ড্রোন। কথা হয়, লোভোল হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (ওভারসিজ) সান ডেমিংয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, চীনের বিশাল কৃষি খামারগুলোর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। শুধু চীনেই নয়, তাদের বাজার এখন পৃথিবীজুড়ে। আমার জিজ্ঞাসা ছিল, বাংলাদেশের মতো দেশের যেখানে খন্ড খন্ড ভূমি রয়েছে, সেখানে এত বিশাল আকারের কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই, এ নিয়ে তাদের কোনো বিকল্প চিন্তা আছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে খুব কৌশলী ছিলেন সান ডেমিং। তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য কৃষিযন্ত্র তৈরির কথা ভাবছি না। চীনের অন্য কোম্পানিগুলো ছোট যন্ত্র তৈরি করছে। তবে বাজারে বড় চাহিদা তৈরি হলে আমরা নিশ্চয়ই ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি তৈরিতেও লেগে যাব।’ বোঝা গেল লোভোল কোম্পানি কৃষিশিল্পের যন্ত্রপাতির বাজারটা নিয়েই আগ্রহী। কারণ আগামীর কৃষি যে শিল্পের কৃষি সে সত্য তারা বেশ ভালোভাবেই বুঝেশুনে নিয়েছে।

বিশ্বব্যাপীই কৃষির যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে পৃথিবী। কার চেয়ে কে কতটা উৎকর্ষ সাধন করতে পারে চলছে সেই প্রতিযোগিতা। আসা যাক আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। এই মুহূর্তে যান্ত্রিকীকরণের যে তথ্যটি সবচেয়ে আগে আমাদের সামনে আছে তা হলো, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ভর্তুকিতে কৃষিযন্ত্র বিতরণের লক্ষ্যে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্প চলছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সব উপজেলায় কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। প্রশ্ন হলো, এই বিপুল অংকের প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের যান্ত্রিকীকরণের উৎকর্ষ, গবেষণা, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সংযুক্তিকরণের জায়গাটি কোথায়। শুধু কৃষিযন্ত্র কেনা, নাকি এসব উন্নয়ন ও উৎকর্ষের জায়গাতেও কাজ করছে এই প্রকল্প। আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বড় সাফল্যটি হিসাব করা হয় জমি কর্ষণে। পৃথিবীর প্রাচীনতম আবিষ্কার ভূমি কর্ষণের ক্ষেত্রে এখন থেকে শত বছর আগে এই ভূমিতে যে ট্রাক্টর এসেছিল, সেই জায়গাতে আমরা শতভাগের কাছাকাছি ব্যবহার পূর্ণ করতে পেরেছি ধরে নেওয়া হয়। যদিও দুর্গম এমন অঞ্চলও রয়েছে যেখানে এখনো ট্রাক্টর পৌঁছেনি। দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের চিত্র হলো জমি চাষে ৯৫ ভাগ, সেচ ব্যবস্থায় ৯৫, ফসল তোলা বা হারভেস্টে ১.৫, ধান মাড়াইয়ে ৯৫, রোপণে দশমিক ৫ ভাগেরও কম। মূল সংকটের জায়গাটি এখানেই। ফসল উৎপাদন-পূর্ববর্তী যান্ত্রিকীকরণে যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, উৎপাদন ও তার পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণে পিছিয়ে থাকায় আমাদের বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।

যান্ত্রিক কৃষি বলতে আমরা শুধু বুঝছি ফসল কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার। কিন্তু কৃষি শুধু ধান-গম বা শাকসবজি নয়। গবাদি পাখি ও প্রাণীর লালনপালন বা মৎস্য খাতেও যে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে সে কথাটা আমরা তেমনভাবে ভাবছি না। অথচ চীন-জাপান থেকে শুরু করে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই কৃষির খাত-উপখাতগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার যেমন নিশ্চিত করেছে তারা দারুণভাবে এগিয়ে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারেও। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গ্যাংনামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে কৃষক কিমকে দেখেছি তার গরুর খামারে আইওটি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কীভাবে একাই কম খরচে কম সময়ে বিশাল একটি খামার পরিচালনা করছেন। আমাদের দেশের কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতা দেখতে গিয়েছিলাম সিলেট শহরের আলমপুর বিসিক শিল্পনগরীতে বেসরকারি পর্যায়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষিযন্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আলিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে। ১৯৬৫ সালে ছোট এক ওয়ার্কশপ থেকে যাত্রা শুরু করে এই কোম্পানি এখন দেশের কৃষিক্ষেত্রের বর্তমান ও আগামীর চাহিদা বিবেচনা করে কৃষিযন্ত্র প্রস্তুত করছে। কৃষিযন্ত্রের সঙ্গে আধুনিকতম প্রযুক্তি সংযুক্তির বিষয়ে কতদূর অগ্রসর হচ্ছে আমাদের স্থানীয় কোম্পানিগুলো, সে বিষয়েও কথা বলেছিলাম প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আলিমুল আহসান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, কৃষি আর আগের মতো থাকছে না। যান্ত্রিকীকরণের উৎকর্ষই এই পরিবর্তনের জায়গাটি দখল করছে। এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেটি গভীরভাবেই বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা পথ হাঁটলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন কিংবা স্মার্ট কৃষির পথে আমাদের কোনো রকম অগ্রগতি নেই। নেই তেমন কোনো গবেষণা কিংবা প্রচেষ্টা। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃষিতে আমাদের নিজস্ব অংশগ্রহণের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান অনেক দূরে। একই সঙ্গে ভর্তুকির বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে ক্ষুদ্র কৃষিযন্ত্রের প্রতিও। কেননা বড় বড় কৃষিযন্ত্রে যে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে তার শতভাগ সুফল প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব জনসংখ্যা ২০৫০ সালে গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১০ বিলিয়নে। ২০৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যাও গিয়ে দাঁড়াতে পারে ২৫ কোটির কাছাকাছি। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব মানুষের খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করতে ২০৫০ সাল পর্যন্ত শস্য উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ করতে হবে। একদিকে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিরূপ পরিস্থিতিতে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ। ফসলে নতুন নতুন রোগ জীবাণুর আক্রমণ-কৃষিতে এমন সব নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চাহিদার ভিত্তিতে নতুন ও অধিকতর কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার করা জরুরি। গবেষকরা বলছেন, কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইওটি, ন্যানো প্রযুক্তি, কাটিংঅ্যাজসহ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী জনবল তৈরির কারিকুলাম যুক্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। দেশের বেশ কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের গবেষণা দেখার সুযোগ হয়েছে, পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের ভ্যাগিনেঙ্গন বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের উহান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওশান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি তারা আগামীর কৃষি নিয়ে কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছে। আমরা তাদের তুলনায় এখনো অনেক অনেক পিছিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে, না হলে ১০ বছর পর এ খাতে টিকে থাকতে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তিকে দ্রুত কাজে লাগাচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থে। এর জন্য সুদূরপ্রসারী গবেষণা, মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি পরিস্থিতি মাথায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত হচ্ছে চীন। এখানে সব মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিযন্ত্রের বিশাল একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আমরা কৃষি যন্ত্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে না যেতে পারলে শুধু ক্রেতা হিসেবেই আধুনিক প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের প্রশ্নে সবার সমান অধিকার রয়েছে। এই অধিকার নিয়ে আমাদেরও শামিল হওয়া দরকার অত্যাধুনিক স্মার্ট কৃষির মিশনে।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

[email protected]

সর্বশেষ খবর