শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

হজ আদায় করা কার ওপর ফরজ

মুফতি এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

হজ আদায় করা কার ওপর ফরজ

হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। পবিত্র আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষের ওপর অবশ্য কর্তব্য হলো ওই পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহর হজ করা, যাদের সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য আছে আর যে কুফুরি করে, সে যেন জেনে রাখে আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭)। সামর্থ্যবানদের জীবনে একবার হজ আদায় করা ফরজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ইসলাম ধর্ম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো হলো- আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও রসুল এ সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত কায়েম, জাকাত আদায়, হজ করা ও রমজানে সিয়াম পালন।’ (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘হে আমার উম্মত! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। সুতরাং সামর্থ্য হলে তোমরা হজ আদায় কর।’ (মুসলিম)। হজ সবার ওপর ফরজ নয়। হজ ফরজ হতে হলে এ শর্তগুলো থাকা জরুরি- ১. মুসলমান হওয়া। কোনো অমুসলিমের জন্য হজ আদায় করার অনুমতি নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র। তারা যেন মসজিদে হারামের কাছেও না আসে।’ (সুরা তওবাহ, আয়াত ২৮)। ২. প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগলের ওপর হজ ফরজ নয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে আমলনামার কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে। তারা হলো- পাগল, যতক্ষণ না তার মস্তিষ্ক সুস্থ হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জেগে ওঠে। শিশু, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রাপ্ত বয়স্ক না হয়।’ (মুসতাদরাক)। ৩. আজাদ বা স্বাধীন হওয়া। দাস-দাসীর ওপর হজ ফরজ নয়। ৪. হজ আদায় করার সামর্থ্য থাকা। এ সামর্থ্য তিন দিক থেকে থাকা শর্ত যথা- ক. দৈহিক সামর্থ্য। অর্থাৎ কাবা শরিফ পর্যন্ত সফর করার শারীরিক যোগ্যতা থাকা। শারীরিকভাবে অক্ষম, অন্ধ, খোঁড়া, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, জরাজীর্ণ বৃদ্ধ স্বয়ং চলাফেরায় অক্ষম এরূপ লোকের ওপর হজ ফরজ নয়। এমন ব্যক্তির যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে তাহলে বদলি হজ করানো ওয়াজিব। খ. আর্থিক সামর্থ্য। অর্থাৎ পরিবারপরিজন, চাকরবাকরদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোনো ব্যক্তির কাছে হজে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হবে। গ. নিরাপত্তা। যাতায়াতের পথ নিরাপদ থাকা। ৫. রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকা। ৬. হজের সময় বা মৌসুম হওয়া। হজের মৌসুম বলতে শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের প্রথম ১০ দিনকে বুঝায় অথবা এমন সময়কে বুঝায় যখন থেকে রাষ্ট্রে হজের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কোনো ব্যক্তির জীবনের কোনো একটি বছরে উপরোক্ত শর্তগুলোর সমন্বয় ঘটলে তার ওপর হজ ফরজ হয়ে যায়। সে যদি ওই বছর হজ আদায় না করে এবং পরে যদি সামর্থ্য হারিয়েও ফেলে তবু সে হজ আদায়ের দায় থেকে মুক্ত হবে না। মহিলাদের হজ ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরও দুটি শর্ত রয়েছে। ১. মহিলাদের সঙ্গে স্বামী অথবা এমন কোনো মুহরিম পুরুষ থাকা। মুহরিম তারা যাদের সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে বিয়ে নিষিদ্ধ। কোনো নারী যদি মুহরিম সঙ্গী ছাড়া হজ করে তার হজ আদায় হবে কিন্তু মুহরিম ছাড়া সফরের কারণে গুনাহ হবে। এ ক্ষেত্রে বদলি হজ করানোই উত্তম। ২. স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের কারণে ইদ্দত পালনকালে নারীরা হজে গমন করবে না। (ফাতহুল বারি)। হজ কখন আদায় করতে হয় এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে দুটি মত আছে। একদল আলেম মনে করেন কোনো ব্যক্তি যখন হজ করার সামর্থ্য লাভ করে তখন ওই বছরই হজ আদায় করা কর্তব্য। অন্যথায় বিলম্বের কারণে গুনাহগার হবে। বিলম্ব করে পরবর্তী কোনো বছরে আদায় করলেও হজ হয়ে যাবে।

লেখক : বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম, খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর