বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতে জাতপাতের নির্বাচনে বিশ্ব অবাক

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

ভারতে জাতপাতের নির্বাচনে বিশ্ব অবাক

গোটা ভারতবর্ষ যখন দিন গুনছে তখন গোটা বিশ্ব অধীর আগ্রহে ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ ভারতবর্ষে নির্বাচনের নামে যে জাতপাত মেরুকরণ চলছে তা আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশ তাদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে। তারা একে অপরকে প্রশ্ন করছে ভারতবর্ষে নির্বাচনের নামে কী চলছে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছেন জাতের নামে বজ্জাতি প্রচণ্ডভাবে চলছে ভারতবর্ষে যা মেনে নেওয়া যায় না। শুধু তাই নয় সে দেশের ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম, সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের মতো সংবাদপত্র এর নিন্দায় সরব হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই উদ্বেগ সারা বিশ্বে নজর কেড়েছে। ভারতে জাতপাতের নির্বাচনে বিশ্ব এখন অবাক। উল্লেখযোগ্য, কংগ্রেস শাসনকালে কোনোদিন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে জাতপাত নিয়ে এরকম মন্তব্য শোনা যায়নি। এমনকি বাজপেয়ির আমলেও নয়। ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনের সময় ঢাকার আমেরিকার দূতাবাসের কর্মী বিশেষ করে সিআইএ অফিসাররা নির্বাচনের ব্যাপারে হইচই করতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা পাঁচবার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে মোদিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতের নির্বাচনের ব্যাপারে বিবৃতি দিচ্ছেন। আপনি জাতপাত বিশেষ করে মুসলিমদের ব্যাপারে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছেন। আপনি এসব থেকে বিরত থাকুন। নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েও কোনো সুরাহা মিলছে না। আসলে নির্বাচন কমিশনে পক্ষপাতদুষ্ট যে তিনজন নির্বাচন কমিশনার আছে তারা আপনারই লোক, নিয়ম ছিল নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মতামতই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আপনি ক্ষমতায় এসে প্রধান বিচারপতিকে এই চ্যানেল থেকে সরিয়ে দেন এবং যথেচ্ছতার শুরু করেন।

২-৩ মে জো বাইডেন যা বলেছিলেন এবং ভারতের কী প্রতিক্রিয়া তা তুলে ধরা হলো- ‘বাইডেন চীনের পাশাপাশি ভারতকেও বিদেশি রাষ্ট্রের মানুষের প্রতি বিমুখ বলে মন্তব্য করেন, আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই বিক্ষোভকে উড়িয়ে দিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণবীর জয়সয়তালের বক্তব্য, ওই মার্কিন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট সংগঠন। এদের কাজই হলো ক্রমাগত ভারতবিরোধী প্রচার। সংস্থাটি ভারতের বহুত্ববাদী গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। বাইডেনের মন্তব্য নিঃসন্দেহে লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন বড় ধাক্কা। চীন, জাপান এবং ভারতকে একই বন্ধনীতে রেখে বাইডেন বলেছেন, এরা শরণার্থী চায় না।

শুক্রবার গুজরাটে ভোট প্রচারে নরেন্দ্র মোদিকে উগ্র মেজাজে দেখা গেল। বিরোধী শিবিরের দাবি দুই দশক আগে গোধরা কাণ্ডের পর তিনি বারবার মুসলিমদের নাম করে কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে জঙ্গি মারার কৃতিত্ব নিয়েছেন। তার অভিযোগ, পাকিস্তান রাহুল গান্ধীকে জেতানোর জন্য উতলা হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে দেশের মুসলিমরা ‘ভোট জেহাদের’ পক্ষে হাঁটছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তার এই আগ্রাসী মূর্তিতে স্পষ্ট যে নিজের রাজ্য নিয়েও তিনি নিশ্চিন্ত নন।

সম্প্রতি ইমরান খান মন্ত্রিসভার সদস্য প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী চৌধুরী ফওয়াদ হুসেন সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিনে রাহুল গান্ধী আক্রমণ করে বলেছেন, বিজেপি সরকার দেশের গরিব ও যুবদের স্বার্থকে পাশে সরিয়ে রাখছে। এই পোস্টটি তুলে প্রথম আক্রমণ করে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেছেন, ফওয়াদ হুসেন এখন রাহুল গান্ধীর হয়ে প্রচার করছেন। কংগ্রেস কি পাকিস্তানের ভোটেও লড়তে চায়। কংগ্রেসের ইস্তেহারে তো মুসলিম লিগের সিলমোহর আছে। এবার সীমান্তের ওপার থেকেও সমর্থন এসে গেল পাকিস্তানের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাত আর গোপন নেই। আর খোদ মোদির কথায় কংগ্রেস যত দুর্বল হচ্ছে পাকিস্তান তত কাঁদছে। তারা দোয়া করছে কংগ্রেস যেন ক্ষমতায় আসে এবং শাহাজাদা প্রধানমন্ত্রী হন। বিজেপির মতো শক্তিশালী সরকার তারা চায় না, চায় দুর্বল সরকার। তাতে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে সুবিধা হবে। কিন্তু তার সরকার এসে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের টায়ার ফুটো করে দিয়েছে। তার কথায় যে দেশ আগে সন্ত্রাসবাদ রপ্তানি করতে তারা এখন আটা কেনার জন্য দরজায় দরজায় ঘুরছে। যে হাতগুলো বোমা বানাত এখন সেগুলো ভিক্ষাপাত্র নিয়ে ঘুরছে।

মোদির আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ওই লোকটার (মোদির) হিম্মত নেই নিজের কাজের খতিয়ান তুলে ধরার। আসলে সরকারের সাফল্য বলে কিছু নেই সে জন্য ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। কয়েকদিন আগে মোদি বলেছিলেন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে গরু মোষ কেড়ে নেবে। এই প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী বলেছেন কংগ্রেস ১৫০-এর বেশি আসন পেয়ে জোট সরকার গড়তে চলেছে। মোদি নৈরাশ্যে ভুগে হারের ভয়ে এসব কথা বলছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সম্প্রতি একটি চিঠি লিখে জানিয়েছেন ৪ জুনের পর থেকে আপনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন। লোকে আপনাকে মনে রাখবে নির্বাচনি প্রচারে হিংসা, ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোর জন্য। মোদির অভিযোগ কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং দলিতদের সংরক্ষণ তুলে দিয়ে তা অমুসলিমদের দিয়ে দেবে নিজেদের ভোট ব্যাংক তুষ্ট করার জন্য। তিনি এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, আমরা কখনো এরকম নীতি নিই না।

এদিকে সোনিয়ার ঘনিষ্ঠ আইনজীবী কিশোরীলাল শর্মা শুক্রবার সকালে আমেথি পৌঁছে যান। পরে রায়বেরিলিতে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে রটে যায় রাহুল গান্ধী আমেথি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেই মতো কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির সমর্থকরা ব্যানার হোর্ডিংয়ে রাহুল ও অখিলেশের ছবি নিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু শুক্রবার কংগ্রেস কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ওইদিন গভীর রাতে জানান হয়-রাহুল গান্ধী রায়বেরিলি থেকে এবং কিশোরীলাল শর্মা আমেথি থেকে লড়বেন। সেই মতো শনিবার তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। অর্থাৎ এবার গান্ধী পরিবার থেকে কেউ আমেথি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না।

লেখক : প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর