শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতার অভিশাপ

সমন্বিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই

জলজট ঢাকাবাসীর নিত্যসঙ্গী হয়েই রইল। গত এক যুগে ঢাকা ওয়াসা এবং দুই সিটি করপোরেশন খাল, নর্দমা, ড্রেন সংস্কার, উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেও সমস্যার সমাধান তো হয়নি, বরং এখন আরও নতুন নতুন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গত ২৭ মে রাজধানীতে টানা ১২ ঘণ্টায় ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এতে তলিয়ে যায় ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুরসহ প্রায় গোটা ঢাকা। পরিকল্পনার ত্রুটি এবং বাস্তবায়নে অব্যবস্থাপনা ও সততার সংকটে মোটা টাকা পানিতেই ভেসে গেছে; কাক্সিক্ষত সাফল্য অধরাই রয়ে গেছে। নগরবিদদের মতে, ঢাকার জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে- অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন। রাজধানীতে জলাশয় ভরাট করে ভবন তৈরি হচ্ছে, খাল ভরাট করে হচ্ছে রাস্তা। নগরীর ধারণ ক্ষমতার তুলনায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে তিন থেকে চার গুণ হয়ে গেছে। জমা পানি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মাটির নিচে যাওয়ার জন্য যে পর্যাপ্ত খোলা মাঠ বা সবুজ এলাকা দরকার তা নেই। যেটুকু ছিল, নানা উসিলায় তাও দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা বাড়ছে। পরিণতিতে বৃষ্টি হলেই ডুবছে ঢাকা। দুর্গতির শেষ থাকছে না নগরবাসীর। প্রাকৃতিক খালগুলোর অধিকাংশই দখল ও ভরাট হওয়া, কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্য হারানো ইত্যাদি কারণে অল্প বৃষ্টিতেই দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ থেকে রক্ষা পেতে নগরীর মৃত বা মৃতপ্রায় প্রাকৃতিক খাল, জলাধার, ডোবার পুনরুজ্জীবন চাই। বর্ষা মৌসুমের আগেই নর্দমাগুলো যথাযথভাবে পরিষ্কার করা জরুরি। পাশাপাশি ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্য বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আর চাই এ কাজে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত সমন্বিত সৎ প্রচেষ্টা। যার অভাব আমাদের অনেক মহৎ উদ্যোগ ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। নিত্য জলাবদ্ধতার অবসানে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর