শিরোনাম
বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কারবালায় নারীরা ভোলেনি হোসাইনকে

মো. আবু তালহা তারীফ

কারবালায় নারীরা ভোলেনি হোসাইনকে

মহররম এলেই নারীদের মনে পড়ে যায় হোসাইনের কথা। হোসাইনের রক্তের কথা, হোসাইনের শহীদ হওয়ায় দৃশ্য তারা সহজেই বলতে পারে। আমার দেশের নারীরা হোসাইনের প্রেমিক। হোসাইনকে ভালোবাসে হৃদয় দিয়ে। এজন্য তারা ঘরে তাসবিহ, কোরআন পাঠ, জিকির এবং নফল নামাজে লিপ্ত থাকে। সেদিন রক্তাক্ত কারবালায় নারীরা জীবনের সবটুকু ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়েছিল ইমাম হোসাইনের জন্য। নারীদের অবস্থান ছিল ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে। ইমাম হোসাইনের ৭২ জন সত্যের মুসলিম নিয়ে কারবালায় আগমন করেছিলেন। এর মধ্যে নারী ও শিশুরা ছিল। হোসাইনের চারপাশ আটকে রেখেছিল ইয়াজিদের দল। তখন হজরত হোসাইন তাঁবুর নারী-পুরুষ সবাইকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। নারীরা দীপ্তকণ্ঠে বুকে সাহস নিয়ে বলেছিলেন, আমরা সত্যের পথে, হোসাইনের সঙ্গে আছি এবং থাকব। প্রয়োজনে হোসাইনের তরে জীবন দিয়ে একসঙ্গে জান্নাতে যাব। হোসাইনের তাঁবুতে পানি ছিল না। তাঁবুতে খাবার নেই, পানি নেই, নারীর বুকের সন্তানরা একটু খাবার খেতে পায়নি। তবুও নারীরা হোসাইনের জন্য কারবালায় প্রান্তে জীবন সঁপে দিয়েছেন। বিশিষ্ট নারী হজরত সাহার বানু কারবালার প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। তিনি স্বীয় স্বামীকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন। ইমাম হোসাইনের মেয়ে সাকিনা। সেও কারবালার প্রান্তে হোসাইনের পক্ষে থেকে হোসাইনের তাঁবুর সাথীদের উপকারের জন্য বেরিয়েছিল। কারবালায় পানির অভাবে ছোট ছেলেমেয়েদের কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে যায়। তখন নারী সৈয়দা সাকিনার কাছে সামান্য পানি ছিল। তিনি নারী হয়ে কারবালার প্রান্তে পানি দিয়ে ছেলে-মেয়েদের কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। পানি শেষ হয়ে গেলে সাকিনা কারবালার প্রান্তে ছোটাছুটি করেন। নারী হয়েও তিনি অন্যদের জন্য পানির ব্যবস্থা করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যান। মিথ্যার পক্ষের ইয়াজিদ বাহিনী সাকিনার কানের দুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। ফলে কান থেকে তার অঝোর ধারায় রক্ত ঝরতে থাকে। কারবালার প্রান্তে ইয়াজিদরা নারীদের অপমান ও অপদস্থ করে। তারা নারীদের মাথার চাদর পর্যন্ত কেড়ে নেয়। মুনাফিকরা ছোট ছেলে মেয়ের ছাড় দেয়নি। তাদের বেদ প্রহার করে। ফলে তাঁবুর ছেলে-মেয়েরা ভয়ে ও ব্যথায় কাঁদতে থাকে।

অতঃপর মুনাফিক মুসলিম দীনের আলো নিভিয়ে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। রক্ত পিপাসু জালিমদের অন্তরে মায়া-মমতা হারিয়ে গেল। রক্তে লাল কারবালা ময়দান। জান্নাতের পথে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে হোসাইনের সাথীরা। পিছিয়ে নেই নবী পরিবারের সদস্যরা। তাদের পবিত্র শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। কেউ সহ্য করতে পারছে না। কারবালার প্রান্তে দাঁড়িয়ে নারী হজরত জয়নব (রা.) দৃশ্য দেখে চিৎকার দিয়ে পাগলপ্রায়। তিনি হোসাইনদের পক্ষে। কারবালার প্রান্তে দাঁড়িয়ে নারী হজরত জয়নব নিষেধ করছেন মুনাফিকদের। পরবর্তীতে হজরত জয়নাব কুফাবাসীকে তিরস্কার করে বলেছিলেন, “তোমরা নিজেদের জন্য চিরন্তন অপরাধ ও লজ্জা রেখে এসেছ এবং চিরন্তন লাঞ্ছনা খরিদ করেছ। তোমরা কোনো দিনই এ লাঞ্ছনা দূর করতে সক্ষম হবে না। আর কোনো পানি দিয়েই তা ধুয়ে ফেলতে পারবে না। কারণ, তোমরা হত্যা করেছ হুসাইনকে যিনি হচ্ছেন রসুলুল্লাহ (সা.) কলিজার টুকরা, বেহেশতে যুবকদের নেতা।

কারবালার প্রান্তে নারীদের অবদান কখনো ভোলার মতো নয়। নারীরা হোসাইনের পক্ষ থেকে শত্রুদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর