রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

কীভাবে বন্ধ হবে আবেদ আলীদের কোটা

নঈম নিজাম

কীভাবে বন্ধ হবে আবেদ আলীদের কোটা

ভয়াল সিন্ডিকেটে সর্বনাশ হচ্ছে। বারোটা বাজছে রাষ্ট্রের। ছাগলকান্ডে ফেঁসেছেন একজন দুর্নীতিবাজ পিতা। তিনি এনবিআরের কর্মকর্তা ছিলেন। তার সীমাহীন লুটপাট প্রকৃতি মেনে নেয়নি। মানুষের চাওয়াপাওয়ার একটা সীমা থাকা উচিত। এ সীমা অতিক্রম করলে প্রকৃতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তখন ছাগলের মতো সাধারণ ঘটনায় বেরিয়ে আসে সবকিছু। পিতৃত্ব অস্বীকার করেও লাভ হয় না। ছাগলকান্ড শেষ না হতেই আলোচনায় একজন আবেদ আলী। এখন তাকে নিয়ে হইচই হচ্ছে। বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। কত যুগ ধরে আবেদ আলীরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ওপর ভর করে ছিলেন? একজন আবেদ আলী হুট করে তৈরি হননি। একজন মতিউর হঠাৎ এ বিশাল সম্পদের পাহাড় গড়েননি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘ওরে ভাই, কার নিন্দা করো তুমি। মাথা করো নত। এ আমার এ তোমার পাপ।’ অর্থনীতি বেড়ে ওঠার জবাবদিহিতাহীন সমাজে এমন কান্ড মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসে। সাধারণ মানুষ তা নিয়ে ব্যস্ত হয়। মিডিয়া গরম খবর পরিবেশন করে। সামাজিক মাধ্যমে কেচ্ছা তৈরি হয়। তারপর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মানুষ অপেক্ষায় থাকে নতুন কিছুর।

এনবিআর কর্মকর্তাদের নজিরবিহীন সম্পদের কাহিনি দীর্ঘদিনের। তাদের সুবিধা আছে। তারা নিজেরা নিজেদের রক্ষা করে চলেন। এনবিআর হলে অন্য কেউ ঘাঁটায় না। কেউ প্রশ্ন করে না মতিউর নিজের সরকারি অফিসে কতক্ষণ বসতেন? নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অন্য ব্যবসায়ীদের অফিসে কতক্ষণ থাকতেন? সেখানে কী করতেন। কারও ৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকিতে সহায়তা করলে মুহূর্তে বিশাল নগদ নারায়ণ ঘরে চলে আসে। রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সম্পদের কিছুটা মানুষ জেনে যায় ছাগলকান্ডে! একই পরিস্থিতি পুলিশসহ অনেক ডিপার্টমেন্টে। মাঝখান থেকে ঝামেলা বাধালেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ড্রাইভার আবেদ আলী। এখন সবাই কথা বলছেন, তিনি কার আশ্রয়ে ছিলেন? তার পৃষ্ঠপোষকতা কারা করেছিলেন? আবেদ আলীর সময়ে পিএসসির চেয়ারম্যান কারা ছিলেন? ভয় হয় আবেদ আলীতে অন্যদের অনেক কিছু যেন ধামাচাপা না পড়ে যায়। আমার দাদি বলতেন, টাকার নৌকা সড়ক দিয়ে চলে। নদীতে নয়। একজন জানালেন, আবেদ আলী ছিলেন পিএসসিতে অধ্যাপক জিন্নাতুন্নেসা তাহমিনা আখতার, এ টি আহমেদুল হক, ইকরাম আহমেদ চেয়ারম্যান থাকাকালে গাড়ির চালক। তিনি চাকরিচ্যুত হন এ টি আহমেদুল হকের সময়ে। তার উত্থান অধ্যাপক জিন্নাতুন্নেসা তাহমিনা আখতারের সময়। জোট সরকারের আমলে আবেদ আলী হাত পাকিয়েছিলেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রশ্ন ফাঁস করে বড়লোক হয়েছেন। সঙ্গীসাথিদের বিত্তশালী করেছেন। চারপাশে তৈরি করেছেন বিশাল বলয়। পিএসসি থেকে তিনি বিদায় নিলেও সিন্ডিকেট ছাড়েননি। বন্ধ করেননি কোনো কিছু। ধরা খেয়েছেন প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটের ব্যবসা তৈরির কারণে।

কাঁচাপাকা দাড়ির আবেদ আলীর মাথায় টুপি। চলনে-বলনে দেখাতেন একজন ধার্মিক মানুষ। এ লেবাস ধরেছিলেন নিজেকে জায়েজ করার জন্য। বিএনপির ক্ষমতার সময় সেøাগান দিয়েছেন জিয়াউর রহমানের নামে। আওয়ামী লীগ আমলে তিনি সেøাগান পরিবর্তন করেছেন। হুট করে আওয়ামী লীগ বনে যান। তার পুত্র হয়ে যান ছাত্রলীগ নেতা। পয়সা দিলে দুনিয়া মেলে। ছাত্রলীগের পদ পেতে সমস্যা হয়নি। আবেদ আলীকে নিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, আবেদ আলী আমাদের সমাজের নেতিবাচক অংশ। তার একজন সহযোগীর সস্ত্রীক ছবি দেখলাম। আড়াই কেজি সোনার গহনা দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছেন স্ত্রীকে। সম্রাট শাহজাহানের অমর প্রেমকাহিনি!

কোটা নিয়ে যখন কথা হচ্ছে তখনই বেরিয়ে এলো আবেদ আলী চরিত্র। আবেদ আলীর আগেও একজন ড্রাইভার এমন আলোচনায় ছিলেন। তিনি কাজ করতেন স্বাস্থ্যে। ছিলেন স্বাস্থ্যের ডিজির ড্রাইভার। পুরো শরীরে ঘা হলে মলম কত স্থানে লাগাবেন? আবেদ আলীর উত্থান ২০০২ সালের পর। সে সময় বগুড়া আজিজুল হক কলেজের কতজন নিয়োগ পেয়েছিলেন? সে ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। নীলফামারী বাড়ি পিএসসির একজন রাঘববোয়ালের কথা কি কারও মনে আছে? নজিরবিহীন অনিয়মে তিনি ডুবিয়েছেন পিএসসিকে। স্বাধীন বাংলাদেশে আবেদ আলীদের দুর্নীতির রাহু হঠাৎ করে শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে মতিউররা বাংলাদেশকে গিলে খেয়েছেন। উল্লাসনৃত্য করেছেন ঘাটে ঘাটে। হাওয়া ভবনের দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। ওয়ান-ইলেভেনের সেনা সরকার এসেছিল তখনকার সরকারের চরম ব্যর্থতা, দুর্নীতির কারণে। খালেদা জিয়া, ইয়াজউদ্দিনের জটিলতার ভিতরে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছিল। চরম অনাচারের ভিতর মইন উ আহমেদ ক্ষমতা নিয়েছিলেন। নয়জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মইনকে করা হয়েছিল সেনাপ্রধান। মইন দেশে ছিলেন না। বিদেশ থেকে ফিরে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। পা ছুঁয়ে কদমবুসি করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। নবম পদাতিক ডিভিশনে বসানো হয়েছিল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে। তিনি ছিলেন খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দারের ভায়রা। বিভিন্ন গোয়েন্দা দপ্তরে বসানো হয়েছিল খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও সাঈদ এস্কান্দারের আত্মীয়-পরিজন ও বিশ্বস্ত কর্মকর্তাদের। কোনো লাভ হয়নি। ওয়ান-ইলেভেন যখন হয় প্রথম দিন বিএনপির অনেক নেতা ভেবেছিলেন সবকিছু তাদের পক্ষে হচ্ছে। দ্বিতীয় দিন তাদের ভুল ভাঙল। ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলো। জানা গেল, ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্রের আড়ালের খলনায়কদের নাম। বেরিয়ে এলো হাওয়া ভবনের দুর্নীতির কেচ্ছা।

এত নোংরামি দেখার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেননি। মতিউর, আবেদ আলীদের এ দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করা মজার ভাব দেখানো কাজ হয়েছে কারও কারও। একটি জাতি ও দেশের জন্য ১৯৭১ ছিল চূড়ান্ত পরীক্ষার সময়। জীবন বাজি রেখে সে পরীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের খোঁজ আপনারা রাখেন কি? আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গর্বিত সন্তান। আমার ভাই, মামা, খালাতো ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। আমার ফুফাতো বোনের স্বামী শহীদ হয়েছেন। আমাদের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের নয় মাস অবস্থান করেছেন। অপারেশনে গিয়েছেন। মায়ের দিন কেটেছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করে। আমার ভাইদের কমান্ডার ছিলেন আবদুল মালেক। ভাই আশরাফ মারা গেছেন দুই বছর আগে। তার আগে একদিন টেলিফোন পেয়েছিলাম মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক কমান্ডারের। ’৭১ সালে তিনি আমার নানিকে মা ডেকেছিলেন। এ কারণে আমাকে মামা ডাকতেন। বললেন, মামা শুনেছি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে আমাদের ঘর করে দেবেন। ভাঙা টিনের ঘরটির অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে। গরমকালে সূর্য দেখা যায়। থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটু বলবেন কি আমার ঘরটির জন্য সুপারিশ পাঠাতে। নাঙ্গলকোটের নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন তখন লামিয়া নামে একজন। সততা ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলার কারণে মানুষ তাঁর প্রশংসা করত। আমি ফোন করলাম। জানালাম, এই আবদুল মালেক আমাদের হিরো। তিনি একজন বীরযোদ্ধা। আমাদের পরিবারের সদস্যরা তাঁর অধীনে যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের বাড়িতে ঘাঁটি করেছেন সহচরদের নিয়ে। এই মানুষটির এখন ঘর নেই। দুয়ার নেই। অযত্ন-অবহেলায় দিন কাটছে। লামিয়া আমার কথা শুনলেন। বললেন, চিন্তা করবেন না। এই বীরযোদ্ধার নাম তালিকার ১ নম্বরে রাখছি। তিনি ঘর পাবেন।

নাঙ্গলকোটের ভুলইন গ্রামের অধিবাসী আবদুল মালেক কমান্ডার একদিন ফোনে জানালেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার দেওয়া ঘর তিনি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করলেন। আলাপে আরও বললেন, এ দেশে মুক্তিযোদ্ধারা বড় অবহেলিত। তাদের দিকে একমাত্র নজর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সুযোগসুবিধা, সম্মান পুরোটাই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাতা নিয়ে বেঁচে আছেন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা। কঠিন এক বাস্তবতা। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর মৃতদেহ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে গেলাম। পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হবে। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের সংশ্লিষ্ট টিম এলো গার্ড অব অনার প্রদান করতে। শেষবিদায়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হলো। জাতীয় পতাকা দিয়ে মৃতদেহ ঢেকে দেওয়া হলো। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শেষ সম্মান জানানোর পর জানাজা হলো। একজন মুক্তিযোদ্ধা শেষবিদায় নিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা চলে যাচ্ছেন। ১৯৭১ আমাদের অহংকার ও কষ্টের।

কোটা আন্দোলন ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যা খুশি তা বলছে সবাই। আমি কোটা সংস্কারের বিপক্ষে নই। স্বাধীনতার এত বছর পর সংস্কার হতেই পারে। কিন্তু কষ্ট পাই যখন দেখি কোটা নিয়ে আলোচনায় সবাই বারবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার কথা বলছেন। মুক্তিযোদ্ধার বাইরেও কোটা আছে। তার কথা কেউ আনছে না। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের সমালোচনা এখন এক ধরনের ফ্যাশন। জেলা কোটা বাতিলের দাবি সবার আগে কুমিল্লাবাসী করেছিলেন। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও নারীদের জন্য কোটা রাখা হয়েছে অবহেলিতদের তুলে আনার জন্য। কোটা বিলুপ্তি নয়, সংস্কার দরকার। একটা কথা জানতে ইচ্ছা করে-মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কত শতাংশ চাকরি আসলেই বাস্তবে হচ্ছে? আমার পরিবারের কাউকে কোটায় চাকরি নিতে দেখিনি। হতেও শুনিনি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটার অংশটি এখন এক ধরনের অলংকার ও তাদের সম্মান জানানো। যারা সমালোচনা করছেন বের করুন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের পরিবারের কতজন প্রতি বছর চাকরি পান? সমাজে অবহেলিত, বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি। গ্রামের দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ভাতার বাইরে অন্য কোনো সুযোগ গ্রহণ করার মতো অবস্থায় নেই। কোটা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। বিসিএস ৩৫ থেকে ৩৮ ব্যাচের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার চাকরি পেয়েছে ৮ শতাংশের নিচে। তাদের চেয়ে জেলা কোটায় চাকরি হয়েছে অনেক বেশি। কোটা পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে চাকরি হয়। কারও জন্য কোনো কিছু থামিয়ে রাখা হয় না।

কোটা নিয়ে চিৎকার করছি সবাই। পৃথিবীর আর কোনো দেশে কি কোটা নেই? পাকিস্তান আমলে আমাদের জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ছিল। শুধু সিভিল সার্ভিস নয়, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীতেও বাঙালির জন্য আলাদা কোটা ছিল। পাকিস্তানে এখনো কোটা আছে। পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশে কোটা আছে। ভারত, মালয়েশিয়া, জাপানে এখনো কোটা বিদ্যমান। ইউরোপের মতো দেশে নারীদের এগিয়ে নিতে রয়েছে অনেক ধরনের কোটা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি পদে মেনে নিতে পারেনি সহজে। অনগ্রসর সমাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সুযোগসুবিধা রয়েছে। আমাদের পার্বত্যসহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে কীভাবে মেইনস্ট্রিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখবেন? কোটার বাইরে সম্ভব কি? কতজন প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরি পাচ্ছেন? খুব একটা চোখে পড়ে না। তার পরও কোটা রাখার বিষয়টি মানবিক। গ্রামে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের উপস্থিতি বেশি দেখি। তার পরও বিসিএসে তারা পিছিয়ে। তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য নারী কোটা। নিজেও জেলা কোটা বাতিল চেয়েছি বারবার। তার পরও বলছি অনেক ছোটখাটো জেলাকে এগিয়ে আনতেই জেলা কোটা বিদ্যমান।

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংস্কার হতেই পারে। রাষ্ট্র ও সরকার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। কোটা আন্দোলন ঘিরে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান বন্ধ করুন। উচ্চ আদালতকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়ে আপনি কীভাবে বিচারালয়ে বসবেন? কীভাবে রাষ্ট্র ‘মেরামত’ করবেন? মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন বলেই আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এ দেশ এখন কীভাবে সাজাব তা নিয়ে অনেক আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করলে আর কিছুই থাকে না। সবকিছু শেষ হয়ে যায়। সমাজ ও রাজনীতিতে অনেক বিরোধ, মতপার্থক্য আছে, থাকবে। তাই বলে পতাকা, সংবিধান আক্রমণের শিকার কেন হবে? কারা এ কাজগুলো করছে? তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? ঘাটে ঘাটে লুকিয়ে থাকা মতিউরদের সিন্ডিকেটমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ চাই। আবেদ আলীদের তৈরি প্রশ্নফাঁসের অবসান চাই। আবেদ আলীদের অর্থের বিনিময়ে রাজনৈতিক পদে বসানো বন্ধ চাই। আর চাই বলে বুকে লালন করতে হবে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ।

♦ লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর