শিরোনাম
সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা
বাংলা

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা প্রস্তুতি

আতাউর রহমান সায়েম, সাবেক শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা প্রস্তুতি

[পূর্ব প্রকাশের পর]

 

২. গণ্ডার : গণ্ডার এক আজব প্রাণী। এর নাকের ওপর একটি বা দুটি শিং থাকে। এ শিং আসলে পুরু লোমে তৈরি। গণ্ডারকে বনের ছোট বড় সব প্রাণীই ভয় পায়। এর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ কিন্তু ঘ্রাণশক্তি প্রখর। পানিতে একবার ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকতে পারে। ইংরেজ আমলের প্রথমদিকে, অর্থাৎ প্রায় পৌনে তিনশ বছর আগে, সুন্দরবনে গণ্ডারের সংখ্যাধিক্য ছিল। কিন্তু সেই গণ্ডার এখন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ইংরেজ শাসক ও দেশীয় কর্মচারী এবং স্থানীয় দক্ষ শিকারি সকলে মিলে ক্রমান্বয়ে গণ্ডারের বংশ ধ্বংস করেছে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ভ্রাতা নলিনীভূষণ রায় ১৮৮৫ সালে সুন্দরবনে গণ্ডার দেখেছিলেন বলে জানা যায়। এরপর প্রাণীটি আর দেখা যায়নি।

৩. হরিণ : হরিণ সুন্দরবনের আকেরটি সুন্দরতম প্রাণী। মায়াবী চোখের এ প্রাণীটি খুব নিরীহ প্রকৃতির। হরিণের মাংস খুব সুস্বাদু। রসনা বিলাসী মানুষ ও বাঘের কারণে এ অপূর্ব সুন্দর প্রাণীটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।

৪. বানর : বানর অত্যন্ত দুরন্ত প্রাণী। গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে বেড়ানো এদের কাজ। সুন্দরবনের ফলমূল খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। হরিণের সাথে সুন্দরবনের বানরদের রয়েছে বিচিত্র সখা।

৫. হাতি : স্থলভাগের সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতি। এরা দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। এরা এদের যাবতীয় কাজকর্ম শূঁড়ের সাহায্যে করে। এক সময়ে সুন্দরবনে হাতি ছিল, এখন একটিও নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে হাতির দেখা মেলে।

প্রাণীদের বিলুপ্তির কারণ : সুন্দরবনের যে গভীর অরণ্য ছিল তা আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে আসছে। ফলে সেখানে প্রাণীদের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উপরন্তু প্রতিবছর বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণেও সুন্দরবনের অনেক পশুপাখি মারা যায়। সুন্দরবন এলাকায় বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ থাকলেও শিকারিদের তৎপরতা মোটেই কমেনি। শিকারিদের কারণেও প্রতিবছর অনেক প্রাণী মারা যায়। উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে একটি তেলবাহী ট্যাংকারের খোল ফেটে যাওয়ায় ট্যাংকার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায়। ডলফিনসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট দেখা দেয়। এছাড়াও ম্যানগ্রোভ বনের জীববৈচিত্র্যও চরম হুমকির মুখে পড়ে।

প্রাণীদের রক্ষার উপায় : প্রাণী, বৃক্ষলতা ইত্যাদি সবকিছুই প্রকৃতির দান। তাকে ধ্বংস করতে নেই। ধ্বংস করলে প্রাকৃতিক নিয়মকেই ধ্বংস করা হয়। তাই কেবল আইন করে সুন্দরবনের প্রাণী ও বৃক্ষলতা রক্ষা করে সেসব আইনের যথাযথ বাস্তবায়নও করতে হবে। আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হলেই কেবল সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুন্দরবনের অবস্থান : সুন্দরবনে প্রাপ্ত কাঠ জ্বালানি ও কাঠকয়লা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ম্যানগ্রোভের ফল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোলপাতা শুকিয়ে ঘরের চাল ও বেড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবনে যে শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়, তা খাবার চুনের ভালো উৎস। সুন্দবনের মধুর উপর নির্ভর করে একশ্রেণির মনিুষ তাদের জীবিকা নির্ভর করে। মৎস্যজীবীরা সুন্দরবন থেকে মাছ ধরে তা স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে। সুন্দরবনের বনজ সম্পদকে কেন্দ্র করে কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে খুলনা নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলস উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এখানে কিছু পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সমৃদ্ধ করছে।

উপসংহার : সুন্দরবন আমাদের ঐতিহ্য। কিন্তু সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য আজ প্রায় বিপন্ন। তাই আমাদের সকলের উচিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা।

 

সর্বশেষ খবর