মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা : বাংলা

আতাউর রহমান সায়েম, শিক্ষক, বাংলা

[পূর্ব প্রকাশের পর]

‘Urdu and only urdu, shall be the state language of Pakistan.’অর্থাৎ ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ বিশেষ করে দামাল ছেলেরা তা মেনে নেয়নি। কারণ তাদের চেতনা কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার মতো ছিল-

“মাগো ওরা বলে,

সবার কথা কেড়ে নেবে

তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না।

বলো মা, তাই কি হয়?”

আর তাইতো তাদের বিরুদ্ধে বাঙালিরা প্রতিবাদ করেছে, মিছিল করেছে, সভা-সমাবেশ করেছে। আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে ১৯৫২ সালে গঠন করেছে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। পাকিস্তানিরা ভয় পেয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে জারি করেছে ১৪৪ ধারা। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমেছে। ঐ দিন বেলা ৩টার দিকে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। তারপর গুলি চালাতে শুরু করেছে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে। আহত হয়েছেন অনেক। সারা দেশের মানুষের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়েছে।

শহীদ মিনার : ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে সমবেত হয়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। তারা আবাসিক হলের গেট দিয়ে প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হলে আকস্মিকভাবে তাদের ওপর অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয় এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। এর ফলে বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেক ছাত্র-যুবক মর্মন্তুদভাবে শহীদ হন। শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতারাতি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ শফিউর রহমানের পিতা এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দিন শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। ২৬ তারিখ বিকালে পুলিশ শহীদ মিনারটি ধ্বংস করে দেয়। বিভিন্ন প্রতিভূলতার মধ্যেও রাতে আবার শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কেননা কবির ভাষায়-

“স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তোমার?

ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো

চার কোটি পরিবার

খাড়া রয়েছি তো। যে- ভিত কখনো কোনো রাজন্য

পারে নি ভাঙতে।”

- (স্মৃতিস্তম্ভ: আলাউদ্দিন আল আজাদ)

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : কানাডা প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন ‘Mother Language lovers of the World’-এর আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন।      [চলবে]

সর্বশেষ খবর