রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

দ্বাদশ শ্রেণি : বাংলা দ্বিতীয় পত্র

মেহেরুন্নেসা খাতুন

দ্বাদশ শ্রেণি : বাংলা দ্বিতীয় পত্র

ভাব-সম্প্রসারণ

‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়

পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’

 

মূলভাব : অন্ন-তৃপ্ত মানুষের মন প্রেম ও সৌন্দর্যের মধুর কাব্যসুধায় সিক্ত হয়; কিন্তু জীবনে ক্ষুধাই যখন সর্বাপেক্ষা প্রবল হয়ে দেখা দেয়, তখন প্রেম ও সৌন্দর্যের বোধগুলো অনুভব করার শক্তি হারিয়ে যায়।

সম্প্রসারিত ভাব : সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষকে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। এ সংগ্রামে যখন সে জয়ী হয়েছে তখন তার মন প্রয়োজনের সীমাকে অতিক্রম করে প্রকৃতির মধ্যে রূপ, রং, রসের সন্ধান করেছে। তখন পূর্ণিমার চাঁদ তার কাছে প্রতিভাত হয়েছে প্রেম ও সৌন্দর্যের আধার রূপে। যুগ যুগ ধরে চিত্রে, সাহিত্যে, সংগীতে এ রূপকে মানুষ কত রূপেই না প্রত্যক্ষ করেছে। সুদূরের সৌন্দর্যকে সে সীমার স্বপ্নে বাঁধতে চেয়েছে। কিন্তু জীবনের জৈব প্রয়োজনকে অস্বীকার করার কোনো পথ নেই। কেবল বেঁচে থাকার জন্য অন্ন সংগ্রহের তাড়নায় যে জীবন পর্যুদস্ত, তার জীবনে পূর্ণিমার চাঁদ কোনো সুন্দরের স্বপ্নকে বহন করে আনে না। তার চোখে পূর্ণিমার চাঁদ ভাসে ঝলসানো রুটি হয়ে। পরিবেশই মানুষের জীবন ও মনকে গড়ে তোলে। বর্তমানে ধনতান্ত্রিক সভ্যতায় অর্থনৈতিক সংকট বিপুলসংখ্যক মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নিয়েছে ক্ষুধার অন্ন।

জনজীবনে নেমে এসেছে দারিদ্র্যের দুর্বিষহ অভিশাপ। সুকঠিন জীবন সংগ্রামে জর্জরিত মানুষ স্বাভাবিক কারণেই সুন্দরকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ক্ষুধার অন্নই তার কাছে এখন সর্বাপেক্ষা সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রেম ও সুন্দরের স্বপ্ন একজন ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে নিরর্থক মিথ্যা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৃথিবী গদ্যের মতোই নীরস ও কঠিন। কাব্যের ললিতবাণী তার কাছে শুধু ব্যর্থ পরিহাস মাত্র। কারণ সৌন্দর্য বস্তুতে নেই, আছে দ্রষ্টার মনে ও বোধে। আর সে কারণে একজন সুখী মানুষের কাছে পূর্ণিমার চাঁদ অনেক সৌন্দর্য নিয়ে আবির্ভূত হলেও একজন ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে তা একখানা গোলাকার ঝলসানো রুটির মতো মনে হয়, যা খেয়ে সে তার ক্ষুধা মেটাতে পারত। মূলত অন্ন-বস্ত্র-আশ্রয়ের ন্যূনতম চাহিদা মিটলেই কেবল মানুষ তার ভাবরাজ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করে।

মন্তব্য : ক্ষুধা নিবৃত্তি প্রতিটি মানুষের কাছেই প্রথম প্রয়োজন। আর সেই প্রয়োজন যখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে, তখন কাব্যের ভাষা, ছন্দ, আলংকারের বিত্তবৈভব তার কাছে অলীক স্বপ্ন বলে মনে হয়।

 

রূপতত্ত্ব

প্রশ্ন : ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি (পদ) কাকে বলে? উদাহরণসহ আবেগ শব্দের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।

উত্তর : ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি (পদ): বাংলা বাক্যে ব্যবহূত সব শব্দকে আটটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, এগুলোকে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি (পদ) বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যে ব্যবহূত বিভক্তিযুক্ত শব্দকে ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বা পদ বলা হয়। যেমন : পাখি আকাশে ওড়ে। এই বাক্যে ব্যবহূত প্রতিটি শব্দই ব্যাকরণিক শব্দশ্রেণি বা পদ।

আবেগ শব্দ : যে শব্দের সাহায্যে মনের আকস্মিক ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা হয়, তাকে আবেগ শব্দ বলা হয়। যেমন-শাবাশ, হায়, ছিঃ ছিঃ ইত্যাদি।

আবেগ শব্দকে আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

নিচে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সিদ্ধান্তসূচক আবেগ : এ ধরনের আবেগ শব্দের সাহায্যে অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করা হয়। যেমন-‘বেশ’, ভালোই হয়েছে। ‘না’, এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই।

২. প্রশংসাসূচক আবেগ : এ ধরনের আবেগ শব্দ প্রশংসা বা তারিফের মনোভাব প্রকাশে ব্যবহূত হয়। যেমন, ‘বাহ!’ কী সুন্দর ফুল। ‘শাবাশ!’ আমরা খেলায় জিতেছি।

৩. বিরক্তিসূচক আবেগ : এ ধরনের আবেগ শব্দ অবজ্ঞা, ঘৃণা, বিরক্তি প্রকাশে ব্যবহূত হয়। যেমন, ‘ছিঃ ছিঃ’ তুমি এত খারাপ। ‘কী জ্বালা’ আর কত অপেক্ষা করব!

৪. যন্ত্রণাসূচক আবেগ : এ ধরনের আবেগ শব্দ যন্ত্রণা, আতঙ্ক, কাতরতা ইত্যাদি প্রকাশ করে। যেমন : ‘উঃ’, কী আপদ! ‘আঃ’,কী কষ্ট!

৫. বিস্ময়সূচক আবেগ : এ ধরনের আবেগ শব্দের সাহায্যে আশ্চর্য হওয়ার মনোভাব প্রকাশ করে। যেমন : ‘অ্যা’ বলছ কী? তুমি প্রথম হয়েছ? ‘আরে’ বড় ভাই, কখন এলে?

৬. করুণাসূচক আবেগ : এ ধরনের আবেগ করুণা, সহানুভূতি ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করে। যেমন : ‘হায়!’ আমার পোড়া কপাল।

৭. সম্বোধনসূচক আবেগ : এ ধরনের আবেগ শব্দের সাহায্যে সম্বোধন বা আহ্বান প্রকাশ করা হয়। যেমন : ‘ওরে’ তুই কখন এলি! ‘হে বন্ধু’ বিদায়!

৮. আলংকারিক আবেগ : এ ধরনের আবেগ শব্দের সাহায্যে অর্থের পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোমলতা, মাধুর্য, মিনতি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশ করতে সাহায্য করে। যেমন : ‘মা গো মা’ এমন লোক আর দেখিনি।

সর্বশেষ খবর