সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মুজিবনগর সরকার কখন ও কোথায় গঠিত হয়েছিল? এ সরকারে কারা ছিলেন?
উত্তর : মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর এক মাসের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার, যা ‘মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান নাম মুজিবনগর) আমবাগানে ১৭ এপ্রিল এই সরকার শপথগ্রহণ করে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকার কারণে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সরকারের অন্যতম সদস্যরা হলেন—প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী (অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী), এ এইচ এম কামরুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী)।
২. আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালনা এবং দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে ‘মুজিবনগর সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘মুজিবনগর সরকার গঠনের পর মুক্তিযুদ্ধের গতি বৃদ্ধি পায়। এ সরকারের নেতৃত্বে সব শ্রেণির বাঙালিরা দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
৩. মুক্তিবাহিনী কীভাবে সংগঠিত হয়েছিল?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১১ জুলাই মুক্তিবাহিনী নামের একটি বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী। মুক্তিবাহিনীকে তিনটি ব্রিগেড ফোর্সে ভাগ করা হয়েছিল। এ ছাড়া স্থানীয় ছোট ছোট যোদ্ধা বাহিনী ছিল। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তারা গেরিলা ও সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিত। ৩০ হাজার নিয়মিত যোদ্ধা নিয়ে গঠিত এই বাহিনীর নাম মুক্তিফৌজ। এক লাখ গেরিলা ও বেসামরিক যোদ্ধার সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল এই মুক্তিফৌজ।
৪. মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এই আক্রমণের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। এভাবে বাঙালিদের ওপর শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড। তারপর থেকেই গণহত্যা, লুটতরাজ এবং নির্বিচারে ধরপাকড় চলতে থাকে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারায় এবং এক কোটিরও বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কিছু শক্তির সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করে।
৫. মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?
উত্তর : বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এ দেশের সাধারণ মানুষ নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে। পুরুষেরা সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। অনেকেই গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে। খাদ্য, আশ্রয় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ করতে প্রেরণা জুগিয়েছে। নারীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
৬. কেন ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়?
উত্তর : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা। কিন্তু কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা করে হানাদারদের দিয়েছিল। রাজাকাররা হানাদারদের পথ চিনিয়ে, ভাষা বুঝিয়ে ধ্বংস চালাতে সাহায্য করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে। ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা আমাদের অনেক গুণী শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও কবি-সাহিত্যিককে ধরে নিয়ে হত্যা করে। তাঁদের স্মরণেই প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়।