সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র

মেহেরুন্নেসা খাতুন, প্রভাষক

একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্ন (মান : ৭০)

[দ্রষ্টব্য : গদ্য থেকে দুটি, পদ্য থেকে দুটি, উপন্যাস থেকে একটি এবং নাটক থেকে একটি করে সর্বমোট সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০]

 

ক বিভাগ (গদ্য)

১. রাত তখন ১২টা। তখন মোবাইলে ফোন এলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল, ‘ভাই, আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে প্রায় ২০০ লোকের খাবার অবশিষ্ট আছে। খাবার নষ্ট না করে কী করা যায়?’ তাৎক্ষণিক কয়েকজনকে নিয়ে রওনা হলাম। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, যে পরিমাণ খাবার আছে তা দিয়ে দুই শতাধিক প্যাকেট করা যাবে। তা-ই করা হলো। খাবারের প্যাকেটগুলো রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া অসহায় লোকদের মধ্যে বণ্টন করা হলো। আমরা ফিরে আসার সময় খেয়াল করলাম, অভুক্ত লোকগুলো কত তৃপ্তির সঙ্গে খাবার খাচ্ছে।

(ক) বঙ্কিমচন্দ্র কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন?

(খ) ‘সোহাগের বিড়াল’ বা ‘গৃহমার্জার’ শব্দ দুটি বিড়াল রচনায় কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

(গ) উদ্দীপকটি বিড়াল রচনার সঙ্গে কিভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? আলোচনা কর।   

(ঘ) ‘দরিদ্রের ব্যথায় ব্যথিত হইলে যে কিছু অগৌরব নাই অথবা উচ্ছিষ্ট খাবার নষ্ট না করে তার যথাযথ ব্যবহারের যে সকরুণ মিনতি বিড়ালের কণ্ঠে শোনা যায় উদ্দীপকটি যেন তারই প্রতিচ্ছবি’ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।   

২. যাকে বুঝি না, যাঁর মত বুঝতে পারি না, তাঁর মুখের সামনে মাথা উঁচু করে বলতে হবে যে, আপনার মত বুঝতে পারছি নে বা আপনার এ মত এই কারণে ভুল। তাতে যিনি সত্যিকার দেবতা, তিনি কখনই রুষ্ট হবেন না, বরং তোমার সরলতা ও সত্য প্রিয়তার দুঃসাহসিকতার জন্য শ্রদ্ধাই করবেন। বিদ্রোহ মানে কাউকে না মানা নয়, বিদ্রোহ মানে যেটা বুঝি না, সেটাকে মাথা উঁচু করে ‘বুঝি না’ বলা। যে লোক তার নিজের কাজের জন্য নিজের কাছে লজ্জিত নয়, সে ক্রমেই উচ্চ হতে উচ্চতর স্তরে স্বর্গের পথে উঠে চলবেই চলবে। আর যাকে পদে পদে তার ফাঁকি আর মিথ্যার জন্য কুণ্ঠিত হয়ে চলতে হয়, সে ক্রমেই নিচের দিকে নামতে থাকে, এটাই নরক যন্ত্রণা। আমার বিশ্বাস—আত্মার তৃপ্তিই স্বর্গসুখ, আর আত্মপ্রবঞ্চনার পীড়াই নরক যন্ত্রণা।  

(ধূমকেতুর পথ : কাজী নজরুল ইসলাম)

(ক) ‘কুর্নিশ’ শব্দের অর্থ কী?

(খ) ‘এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রীয় করে ফেললে’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।  

(গ) ‘আমি সে দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত’ উক্তিটি উদ্দীপকের আলোকে আলোচনা কর।

(ঘ) ‘আমার পথ’ ও ‘ধূমকেতুর পথ’ প্রবন্ধের লেখক সত্য প্রকাশে নির্ভীক ও অসংকোচ মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

৩. গ্রামের নাম কাশীপুর। গ্রাম ছোট, জমিদার আরো ছোট। তবু দাপটে তাঁর প্রজারা টু শব্দটি করিতে পারে না—এমনই প্রতাপ। ইহারই সীমানায় পথের ধারে গফুর জোলার বাড়ি। তাহার মাটির প্রাচীর পড়িয়া গিয়া প্রাঙ্গণ আসিয়া পথে মিশিয়াছে। একদিন দ্বিপ্রহরে জমিদারের পিয়াদা যমদূতের ন্যায় আসিয়া প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া, চিৎকার করিয়া ডাকিল, গফরা ঘরে আছিস?

গফুর তিক্ত কণ্ঠে সাড়া দিয়া কহিল, আছি। কেন?

বাবুমশায় ডাকচেন, আয়।

গফুর কহিল, আমার খাওয়াদাওয়া হয়নি, পরে যাব।

এত বড় স্পর্ধা পিয়াদার সহ্য হইল না। সে কুসিত একটা সম্বোধন করিয়া কহিল, বাবুর হুকুম, জুতো মারতে মারতে টেনে নিয়ে যেতে।

গফুর দ্বিতীয়বার আত্মবিস্মৃত হইল, সে-ও একটা দুর্বাক্য উচ্চারণ করিয়া কহিল, মহারানীর রাজত্বে কেউ কারো গোলাম নয়। খাজনা দিয়ে বাস করি, আমি যাব না। 

(মহেশ : শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়)

(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত প্রথম গল্প কোনটি?

(খ) ‘নিজেকে তার ছ্যাঁচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো মনে হয়।’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

(গ) উদ্দীপকের পিয়াদার সঙ্গে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? সাদৃশ্যের কারণ ব্যাখ্যা কর।

(ঘ) ‘উদ্দীপকের গফুর এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি একই শক্তির জাঁতাকলে পিষ্ট এবং তাদের প্রতিবাদের ধরনও একই’— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।    

৪. ২৭ মার্চ, শনিবার, ১৯৭১। হাসপাতালে আউটডোর গেটে ঢোকার আগে রুমী আরেকবার ‘ও গড’ বলে ব্রেক কষে ফেলল। পাশেই শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো গোলার আঘাতে ভেঙে দুমড়ে মুখ থুবড়ে রয়েছে। আমার দুই চোখ পানিতে ভরে গেল। এ কী করেছে ওরা! শহীদ মিনারের গায়ে হাত? চারদিকে ইতস্তত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথায় জাল দেওয়া হেলমেট পরা সৈন্য। ... হাসপাতালে লাইট নেই, পানি নেই, খাবার নেই, শহীদ মিনারের ওপর ক্রমাগত শেলিংয়ে হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের ওই দিকটা প্রায় বিধ্বস্ত।  

(একাত্তরের দিনগুলি : জাহানারা ইমাম)

(ক) ‘রেইনকোট’ গল্পটি প্রকাশিত হয় কত সালে?  

(খ) ‘রাশিয়ায় ছিল জেনারেল উইন্টার, আমাদের জেনারেল মনসুর’—উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।   

(গ) শহীদ মিনারের ওপর আক্রোশের বিষয়টি ‘রেইনকোট’ গল্পে কীভাবে ফুটে উঠেছে? উদ্দীপকের আলোকে আলোচনা কর।    

(ঘ) উদ্দীপকটি ‘রেইনকোট’ গল্পের খন্ডাংশ মাত্র মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।   

খ-বিভাগ (পদ্য)

৫. কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয়

পৃথিবী ভ’রে গিয়েছে এই ভোরের বেলা;

কাঁচা বাতাবীর মতো সবুজ ঘাস-তেমনি সুঘ্রাণ-

হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে।

আমারো ইচ্ছে করে এই ঘাসের এই ঘ্রাণ

হরিৎ মদের মতো গেলাসে-গেলাসে পান করি,

ঘাসের পাখনায় আমার পালক,

ঘাসের ভিতর ঘাস হয়ে জন্তুাই কোনো এই নিবিড়

ঘাস-মাতার শরীরের সুস্বাদ অন্ধকার থেকে নেমে। (ঘাস : জীবনানন্দ দাশ)

(ক) জীবনানন্দ দাশের মায়ের নাম কী?  

(খ) “সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের ’পর” উক্তিটি ব্যাখ্যা কর। 

(গ) জীবনানন্দ দাশের কবিতায় প্রকৃতি ও প্রাণিকুলের অবিচ্ছেদ্য সংহতির বিষয়টি উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার আলোকে আলোচনা কর।  

(ঘ) “সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের চেয়ে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার ভাবের গভীরতা ও ব্যাপকতা অধিক।” মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।    

৬. হে মহান শহীদেরা, তোমরা এই বাংলায় নেই, এই নির্দয় সত্য মেনে নিতে পারি না কিছুতেই আমরা যখন শীত সকালের মধুর রোদে হাঁটি কিংবা কোনো জ্যোত্স্না রাতে শুনি রবীন্দ্রসংগীত, তখন উপলব্ধি করি তোমাদের উপস্থিতি। যখন আমরা সুন্দর এবং কল্যাণের অভিষেকের প্রস্তুতির জন্যে মিছিল করি, যখন পশু-তাড়ানোর সংগ্রামে আমরা

মিলিত হই জনসভায়, তখন স্পষ্ট দেখতে পাই

তোমরা আছো আমাদের পাশে। তোমাদের চোখে মানবতার অবিনশ্বর দীপ্তি, হাতে উজ্জ্বলতম ভবিষ্যতের ঠিকানা। আমাদের সম্মিলিত অগ্রযাত্রার পথে অজস্র ফুলের বিকাশ, পাখিদের নীলিমা-ছোঁয়া গীতধারা।

 (আমরা এসে দাঁড়িয়েছি : শামসুর রাহমান)

(ক) ‘ফেব্র–য়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় প্রাণ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?  

(খ) ‘একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

(গ) উদ্দীপকে ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতার বিষয়গত কোনো সাদৃশ্য আছে কী? আলোচনা কর।

(ঘ) ‘‘উদ্দীপক এবং ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ উভয় কবিতায় দেশকে ভালোবেসে যারা আত্মদান এবং আত্মাহুতি দিয়েছিল তাদের সংগ্রামী চেতনার শিল্পভাষ্য রচনা করা হয়েছে’’ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।    

৭. আমরা জেগেছি আমরা লেগেছি কাজে

আমরা কিশোর বীর।

আজ বাংলার ঘরে ঘরে

আমরা যে সৈনিক মুক্তির।

সেবা আমাদের হাতের অস্ত্র

দুঃখীকে বিলাই অন্ন বস্ত্র

দেশের মুক্তি-দূত যে আমরা

স্ফুলিঙ্গ শক্তির...

বাঙলার বুকে কালো মহামারী

মেলেছে অন্ধপাখা,

আমার মায়ের পিঞ্জরে নখ বিঁধেছে রক্তমাখা

তবু আজো দেখি হীন ভেদাভেদ!

আমরা মেলাব যত বিচ্ছেদ;

আমরা সৃষ্টি করব পৃথিবী নতুন শতাব্দীর।

 (সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা)

(ক) ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

(খ) ‘সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

(গ) ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো উদ্দীপকের আলোকে আলোচনা কর।   

(ঘ) জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত উদ্দীপক এবং ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

গ-বিভাগ (উপন্যাস)

৮. স্বধর্মত্যাগী স্বার্থান্বেষী ভণ্ড নবীদের আবির্ভাবের ফলে নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ধর্ম এবং রাষ্ট্র একটি যুগসন্ধিক্ষণের সম্মুখীন হয় এবং এর ভিতও প্রকল্পিত হয়ে উঠে। যারা নিজেদের নবী বলে দাবি করে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল মুসায়লামা। স্বলিখিত বাণীকে ঐশীবাণী বলে প্রচার করে সে নবুয়ত দাবি করে এবং নবী করীম (সা.) কে একটি লিখিত পত্রে জানায় যে, ধর্মপ্রচার এবং আরব-ভূমিতে শাসনকার্য নির্বাহের জন্য সে রসুলের সমতুল। কোরআনের ভাষা নকল করে জনসাধারণকে সে বিভ্রান্ত করত। ভণ্ড নবীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ও ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল মুসায়লামা।

(ক) সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কত সালে জন্তুগ্রহণ করেন?

(খ) ‘সজ্ঞানে না জানলেও তারা একাট্টা, পথ তাদের এক’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।   

(গ) স্বলিখিত বাণীকে ঐশীবাণী হিসেবে প্রচার করার সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের কোন ঘটনার মিল আছে? আলোচনা কর।    

(ঘ) ‘উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য জনগণকে বিভ্রান্ত করার যে প্রচেষ্টা তাতে মজিদ ও মুসায়লামা এক ও অভিন্ন’ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৯. দুখিরাম ও ছিদাম দুই ভাই। সকালে দা হাতে নিয়ে যখন জন খাটতে বের হয়, তখন তাদের দুই স্ত্রীর নিত্য কলহ দেখে পাড়া-প্রতিবেশীদের মতো তারা দুই ভাইও অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বড় জা রাধা, ছোট জা চন্দরা। বড় বউ ছিল অত্যন্ত এলোমেলো, অগোছালো। মাথার কাপড়, কোলের শিশু, ঘরকন্নার কাজ কিছুই সে সামলাতে পারত না। হাতে বিশেষ একটা কিছু কাজও নেই, অথচ কোনো কালে সে অবসর করে উঠতে পারে না। আর ছোট জা চন্দরার বয়স সতেরো কি আঠারো। মুখখানি হৃষ্টপুষ্ট, গোলগাল শরীরটি অনতিদীর্ঘ, আঁটসাঁট। পৃথিবীর সব বিষয়েই তার একটা কৌতুক ও কৌতূহল আছে; পাড়ায় গল্প করতে যেতে ভালোবাসে এবং ঘাটে যেতে-আসতে দুই আঙুল দিয়ে ঘোমটা ঈষৎ ফাঁক করে উজ্জ্বল চঞ্চল ঘনকৃষ্ণ চোখ দুটি দিয়ে পথের মধ্যে যা কিছু দেখার আছে সব এক নজর দেখে নেয়।      (রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ গল্প অবলম্বনে)

(ক) ‘লালসালু’ উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদের নাম কী?

(খ) ‘বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ।’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

(গ) উদ্দীপকের দুই নারী চরিত্র দুই জার সম্পর্কের সঙ্গে রহিমা ও জমিলা দুই সতিনের বৈসাদৃশ্য কোথায়? আলোচনা কর।    

(ঘ) ‘উদ্দীপকের রহিমা বড় জা রাধার বিপরীত চরিত্র হলেও জমিলা চরিত্রটি ছোট জা চন্দরার অনুরূপ’ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।      [চলবে]

সর্বশেষ খবর