রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঐক্যে ফিরুক চলচ্চিত্রের প্রাণ

ঐক্যে ফিরুক চলচ্চিত্রের প্রাণ

জীর্ণতাকে পেছনে ঠেলে উদ্ভাসিত নতুন বছর। আশায় বুক বেঁধে এগিয়ে যাওয়ার দিন। অতীতে কী পেলাম আর কী হারালাম সেই হিসাব না কষে সবার ভাবনায় উঁকি দেয় নতুন সময়ের যোগ-বিয়োগটা কেমন হবে, নতুন করে পাওয়া দিনগুলো কতটা বর্ণিল হয়ে উঠবে। আশা নিয়ে মানুষ বাঁচে। সবার মতো চলচ্চিত্র জগতের মানুষও ২০১৬ সালকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন। এমন কয়জন চলচ্চিত্রকারের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আমজাদ হোসেন

কথায় আছে ‘যায় দিন ভালো’, চলচ্চিত্রের জন্য আমি বলব ‘আসে দিন ভালো’। কারণ প্রযুক্তি, ধ্যান-ধারণা, উন্মুুক্ত বিশ্ব, সব মিলিয়ে সব দিকেই শুধু আশার হাতছানি। ফেলে আসা দিনে সুন্দর আর সমৃদ্ধকে আমরা ধরতে পারিনি আমাদের চিন্তা-চেতনার পরিপূর্ণতার অভাবে। এ অবস্থা থেকে নিশ্চয়ই সবাই শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছি। তাই পুরনো ব্যর্থতার কারণ খুঁজে নিয়ে মেধা ও মননকে শাণিত করে নতুন বছর চলচ্চিত্র জগতে পূর্ণতা দিতে হবে সবাইকে। এ জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই। সব বিভাজন দূরে ঠেলে ঐক্যবদ্ধভাবে চলচ্চিত্রকে ভালোবাসার উঠোনে পিঁড়ি  পেতে দিতে হবে। আমরা যেন বিশ্ব দরবারে আমাদের চলচ্চিত্রকে নিয়ে আবার জয়গান গাইতে পারি— সেই স্বপ্ন এখনো দুই চোখে জিইয়ে রেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রতী হচ্ছি। সবাইকে বলব, আসুন আরেকবার চেষ্টা করি। এবার অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

 

ববিতা

আশা-নিরাশা নিয়েই জীবন। হয়তো মাঝে কিছুটা মন্দ সময় পার করেছি। তাই বলে এটি কি শেষ কথা? না, প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আমরা এবার তাই করব। আমাদের মধ্যে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে মেধাশক্তি প্রবল। সেই মেধাকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তি আর চিন্তার বলে বলীয়ান হয়ে নতুন বছরে এগিয়ে যাব নতুন প্রত্যয়ে। সমৃদ্ধ হবে আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প। কী হারিয়েছি তা নিয়ে চিন্তা করা মানে আরও সময় নষ্ট করা। আমরা এখন চিন্তা করব কী পেতে পারি। সবাই মিলে এই চিন্তা আমাদেরকে এগিয়ে নেবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। এই উপমহাদেশে আমাদের চলচ্চিত্রই ছিল সমৃদ্ধ। নানা কারণে সেই দিন আজ অতীত। তাই বলে থেমে থাকলে তো চলবে না। সবাই মিলে আবার উদ্যোগ নিলে সুন্দর দিনের হাতছানি কোনোভাবেই অমাবস্যায় আড়াল হতে পারে না। নতুন বছরে আবারও নতুনভাবে অভিনয়ে ফিরব। এই জগেক নবীন-প্রবীণ মিলে আবারও জাগিয়ে তুলব।

 

শাকিব খান

সমৃদ্ধ মানে পূর্ণতা। পূর্ণতা পাওয়া কি খুব কঠিন? মোটেও না। আমরা এখন বিশ্বায়নের পথে হাঁটব। মানে বিশ্ববাজারকে লক্ষ্য রেখে নির্মাণ করব। চলচ্চিত্রকার আর সরকারের অপার সহযোগিতা ও মেলবন্ধনে নতুন বছরে নতুন আলোয় আমরা আমাদের চলচ্চিত্রকে উদ্ভাসিত করব। এ জন্য দরকার ঘরোয়া নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্র নির্মাণ। প্রযুক্তি, গল্প, অভিনয় আর নির্মাণে আমাদের প্রগতি আর সময়ের পথে হাঁটতে হবে। নতুনদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। ‘ধারা’ ভুলে মৌলিকত্ব আর একতার মাঝে বিলীন হতে হবে। চিন্তাকে আপডেট করতে হবে। তাহলে সবকিছুতে নতুনের ছোঁয়া আপনা-আপনিই চলে আসবে। নতুনত্ব ছাড়া অগ্রগতির কোনো উপায় নেই। মোটকথা আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে জাগিয়ে তুলতে আমাদেরই আগে জাগতে হবে। সরকার যদি ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিতে পারে তাহলে দেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী এই গণমাধ্যমের উত্তরণে কেন নিশ্চুপ থাকবে। আমরা এক্ষেত্রে আরও সরকারি সহযোগিতা চাই। চলচ্চিত্রকারদের ঐক্য চাই।

 

অপু বিশ্বাস

গতকাল কী ভুল করেছি সে কথা মনে রেখে লাভ নেই। আগামীর পথে ভুল শোধরাব আমরা। অনুকরণ নয়, নিজেদের ঢংয়ে গল্প বলব। পাশের দেশগুলো যদি নতুন পথে হেঁটে নতুন প্রত্যয়ে এগোতে পারে তাহলে আমরা কেন চলচ্চিত্রশিল্পকে নিয়ে পিছিয়ে থাকব। আমরা সেই জাতি যারা মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে একটি স্বাধীন দেশ ও মানচিত্র জয় করে নিতে পেরেছি। বাঙালির ইচ্ছাশক্তি সব সময়ই প্রবল। জাতি হিসেবে আমরা স্বপ্ন দেখা ও সেই স্বপ্নকে সত্য করার মূলমন্ত্র জানি। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধার প্রাচীর আমাদের অতীতে দমিয়ে রাখতে পারেনি আগামীতেও পারবে না। চলচ্চিত্র যেহেতু আমাদের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম তাই এর অস্তিত্বের ওপর নির্ভর করে জাতীয় ও সামাজিক সচেতনতা। বিশেষ করে যুবসমাজকে নানা অবক্ষয়ের হাত থেকে উদ্ধারে চলচ্চিত্রের বিকল্প নেই। তাই আগের ব্যর্থতার হিসাব ভুলে নতুন করে সমৃদ্ধির অঙ্ক কষতে হবে। এগোতে হবে নতুন প্রত্যয় আর উদ্যমে। ঐক্যের বাঁশিতে এক হতে হবে সবাইকে। বিচ্ছিন্ন থাকলে সুফল কখনোই লাভ হয় না। আমরা চলচ্চিত্রের মঙ্গলে একতার গান গাইব।

সর্বশেষ খবর