বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

যেমন চলছে এফডিসির আধুনিকায়ন

আলাউদ্দীন মাজিদ

যেমন চলছে এফডিসির আধুনিকায়ন

এফডিসিতে ডিজিটাল এডিটিং মেশিন

চলতি বছরেই এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।  জানান সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন ভালো-মন্দ মিলিয়ে এগিয়ে চলছে এই কাজ।

সরেজমিনে  দেখা গেছে সম্পাদনা শাখার ৫টি ডিজিটাল এডিটিং প্যানেল ও একটি কালার গ্রেডিং স্থাপন করা হয়েছে পুরনো শব্দ ভবনের দ্বিতীয় তলায়। ডিজিটাল এডিটিং প্যানেলগুলোতে আধুনিক সহযোগী সফটওয়্যার রয়েছে। কালার গ্রেডিং ব্ল্যাক ম্যাজিক এ ডাভিন্সি রেসলভ সফটওয়্যারসহ কালার কন্ট্রোল প্যানেল বসানো হয়েছে। সরাসরি ফোর কে ‘র’ ফুটেজ দেখার জন্য ফোর কে প্রজেক্টর বসানো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, এখন থেকে এফডিসিতে ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের সব প্রকার সাপোর্ট পাওয়া যাবে। শব্দ শাখায় আনা হয়েছে এভিড প্রো টুলস সফটওয়্যার। আরও আনা হয় তিনটি প্রো টুলস ডাবিং, মিক্সিং ও রি রেকডিং মেশিন। সঙ্গে রয়েছে স্যারাওন্ড সাউন্ড মিক্সিংয়ের সুবিধা সংবলিত সেটাপ।

৫টি ফোর কে রেজুলেশন সনি এফ=৫৫ ডিজিটাল ক্যামেরা ও একটি রেড ক্যামেরা এসেছে সংস্থায়। সঙ্গে রয়েছে ভিউ ফাইন্ডারসহ সনি সিক্স টিভি লজিক, ১৭ ইঞ্চি মনিটর, লেন্স, জুমলেন্স, ফিল্টার , ট্রাইপড ও ওয়াই ফাই ডিভাইস। আরও দুটি ক্যামেরা আসছে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তা।

আনা হয়েছে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি অত্যাধুনিক জিমিজীব। রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ফোকাস, জুম ইন-আউট, রাইট- লেফট প্যানিংসহ টিল্ডআপ-ডাউন এমনকি ৩৬০ ডিগ্রি প্যানিং ক্যাপাসিটি ও একই সময় ২০ ফুট পর্যন্ত ট্রলি করা সম্ভব হবে এই জিমিজীব দিয়ে। এতে সংযুক্ত রয়েছে ১৭ ইঞ্চি মনিটর।

সংস্কার করা হয়েছে পুরনো শব্দ গ্রহণ ভবন। পঞ্চাশের দশকে এফডিসির প্রতিষ্ঠা লগ্নেই নির্মাণ হয় সংস্থার ১ নম্বর ফ্লোরটি। এটিই হচ্ছে এফডিসির প্রথম শুটিং ফ্লোর। অর্ধশত বছরের বেশি সময় পার হলেও এতে কখনো লাগেনি সংস্কারের ছোঁয়া। ফলে জরাজীর্ণ  হয়ে পড়ে ফ্লোরটি। এতে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। প্রকল্পের আওতায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এর সংস্কার কাজ শুরু হয়। দেয়াল, ছাদসহ নানা দিক সংস্কার করার পর এখন এর কাজ প্রায় শেষের পথে। যদিও চলচ্চিত্রকারদের দাবি ছিল অত্যন্ত পুরাতন ভবন হওয়ায় এটি যেন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, প্রকৌশলীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করে জানা গেছে এর অবকাঠামো বেশ মজবুত রয়েছে। ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজন নেই। সংস্কার করলেই চলবে। ফলস সিলিং নির্মাণ হয়েছে, দেয়ালে নতুন আস্তরণ ও চুনকাম করা হয়েছে। ফ্লোরটির সঙ্গে লাগোয়া মেকআপ রুম ও বিদ্যুৎ শাখারও সংস্কার কাজ চলছে। বিদ্যুৎ শাখার সংস্কার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগও পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায় এই শাখায় আগে যে ফলস সিলিং ছিল তা ঘুণ পোকা খেয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। তা যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। পুরাতন ফলস সিলিংটি অপসারণ না করেই এর  নিচে নতুন করে ফলস সিলিং লাগানো হয়েছে। এতে আগের নষ্ট সিলিংটি ধসে পড়লে নতুন সিলিংটি সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। এফডিসি কর্তৃপক্ষ বলছে আমরাও অভিযোগটি পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে।

চলচ্চিত্রকাররা বলছেন ২০১১ সালে এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে জুন মাসে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হযনি। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় কয়েক দফায় প্রকল্পের অর্থ ফেরত যায় সরকারের কাছে। চলচ্চিত্রকারদের কথায় এখনো কম বেশি দুর্নীতি চলছে। অনেকটা জোড়াতালি দিয়েই কাজ শেষ করা হচ্ছে। তারপরেও আশার কথা হলো বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের তত্ত্বাবধানে কাজ ত্বরিত গতিতে এগোচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, ফেরত যাওয়া অর্থ ফেরত আনা হয়েছে এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করার সময় নেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্রকাররা পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল এফডিসি উপহার পাবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ খবর