রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রবাসে ঢালিউড অভিনেত্রীরা

প্রবাসে ঢালিউড অভিনেত্রীরা

ষাট থেকে নব্বই দশকের দাপুটে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাবানা, জয়শ্রী কবির, অঞ্জু ঘোষ ও রোজিনা দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশবিভূঁইয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বহু আগে। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন তারা। এই গুণী অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে লিখেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

শাবানা যুক্তরাষ্ট্রে

ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন শাবানা। ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত সমান জনপ্রিয়তায় কাজ করেছেন তিনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমানের হাত ধরে চিত্রজগতে অভিষেক শাবানার। চলচ্চিত্রকার এহতেশাম ১৯৬৭ সালে রত্না পাল্টে শাবানা নামে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করালেন তাকে। চলচ্চিত্রটি সুপারহিট হলে শুরু হয় রুপালি পর্দায় নায়িকা শাবানার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় ও ২৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন তিনি। ১১ বার জাতীয় চলচ্চিত্রসহ বাচসাস এবং অন্যান্য সংগঠনের অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালে অভিনয় ছেড়ে সপরিবারে স্বেচ্ছায় ঠাঁই নিলেন আমেরিকায়। শাবানা অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র হচ্ছে আজিজুর রহমানের ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’। দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী শাবানা। দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোনো ইচ্ছা তার নেই। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন তিনি।

 

জয়শ্রী কবির যুক্তরাজ্যে

জয়শ্রী রায় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের মাধ্যমে অভিনয়ে আসেন। ১৯৭০ সালে অভিনয় করেন সত্যজিৎ’র ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিতে। ১৯৬৮ সালে তিনি মিস ক্যালকাটা উপাধি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে ঢাকার ‘সূর্য কন্যা’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এই ছবির পরিচালক আলমগীর কবিরকে বিয়ে করে এ দেশে থেকে যান। প্রায় এক যুগের মতো তিনি এ দেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। আশির দশকের মধ্যভাগে আলমগীর কবিরের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি কলকাতায় পাড়ি জমান। আলমগীর কবির ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি মারা গেলে একমাত্র সন্তান লেনিন সৌরভ কবিরকে নিয়ে জয়শ্রী চলে যান লন্ডনে। লন্ডনের সিটি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষাদান শুরু করেন। এখনো সেখানে রয়েছেন তিনি।

 

রোজিনা যুক্তরাজ্যে

অভিনেত্রী রোজিনার প্রকৃত নাম রওশন আরা রেনু। তার জন্ম রাজবাড়ীতে। ছাত্র অবস্থাতেই ঢাকায় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সত্তরের দশকে প্রথমে একটি জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞাপনে মডেল হন। ১৯৭৬ সালে কালিদাসের ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে অভিষেক ঘটে তার। টানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। অর্জন করেছেন দুবার জাতীয় পুরস্কারসহ বেশ কয়েকবার বাচসাস, প্রযোজক সমিতি ও পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ড। আশির দশকে প্রযোজক ফজলুর রশিদ ঢালির সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর নব্বই দশকের শুরুতে লন্ডন প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে ১৯৯৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু তার। এই অভিনেত্রীও প্রায় সময় ঢাকায় আসেন।

 

অঞ্জু ঘোষ কলকাতায়

চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী ১৯৮২ সালে অঞ্জু ঘোষকে চলচ্চিত্রে আনেন। প্রথম ছবি ‘সওদাগর’ হিট হওয়ার পর এফ কবির চৌধুরী অঞ্জুকে অভিনয় করালেন নরম গরম, আবেহায়াত, পদ্মাবতী ইত্যাদি চলচ্চিত্রে। এরপর অভিনয় করেন বড় ভালো লোক ছিল, আশীর্বাদ, রাই বিনোদিনী, আয়না বিবির পালা, আশা নিরাশা, রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রক্তের বন্দী, পদ্মগোখরা ইত্যাদি নানা গল্প ও চরিত্রের সফল চলচ্চিত্রে। ১৯৮৯ সালে এলো অঞ্জুর বড়মাপের সাফল্যের মাহেন্দ্রক্ষণ। মুক্তি পেল ‘বেদের মেয়ে জোছনা’। ঢালিউডের ইতিহাসে এর ব্যবসায়িক রেকর্ড এখনো কোনো চলচ্চিত্র অতিক্রম করতে পারেনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, তাকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে ‘নেশা’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রের নির্মাণ শুরু করেন তিনি। কিন্তু বিভিন্ন নির্মাতা ও স্থানীয় মাস্তানদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে অঞ্জুর ওপর। তারা তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করলে ১৯৯৬ সালে বাধ্য হয়ে সপরিবারে কলকাতা চলে যান অঞ্জু ঘোষ। কলকাতায় মাঝেমধ্যে যাত্রাপালায় অভিনয় করেন। থাকেন সল্ট লেক এলাকায়। দেশে খুব একটা আসা হয় না তার।

সর্বশেষ খবর