শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

মঞ্চনাটকে দর্শক খরা কাটছেই না

শোবিজ প্রতিবেদক

মঞ্চনাটকে দর্শক খরা কাটছেই না

মঞ্চনাটকে দর্শক খরা কাটছেই না। মঞ্চ দলগুলোর নানাবিধ উদ্যোগের পরও এই খরা বাড়ছে। দর্শক খরার জন্য গাইড হাউস এবং মহিলা সমিতি মঞ্চ বন্ধ করে দেওয়াকে একসময় কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি মহিলা সমিতি খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কিছু নাটক মঞ্চস্থও হয়েছে। তবুও দর্শক আগ্রহের কোনো উন্নতি হয়নি। এ নিয়ে মঞ্চকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় দলগুলোর কিছু নাটক ছাড়া দর্শক সমাগম ঘটছে না খুব একটা। আগে যেখানে বড় দলগুলোর নাটক হলে উপচেপড়া দর্শক থাকত, আগে থেকে টিকিট বুকিং হতো, টিকিট না পেয়ে অনেকে হতাশ হতো— এই চিত্রগুলো দিনে দিনে সুদূর অতীত হয়ে যাচ্ছে। দর্শকরা কেন আসছেন না এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নাট্যকর্মীদের মনে। জমকালো ও বর্ণাঢ্য উৎসবের মধ্য দিয়ে নাটকের দলগুলো তাদের প্রযোজনাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করার পরও দর্শকদের উপস্থিতি আশানুরূপ বাড়ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে গর্ব করার এ অঙ্গনটি বিলুপ্ত হতে বেশি সময় লাগবে না বলেই ধারণা নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘যানজটের কারণেই নাটকের দর্শক কমে গেছে।’ এ কারণটির পাশাপাশি বর্তমান নাটকের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তার মতে, নাটকের দল ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও নাটকের মান এখন আর আগের জায়গায় নেই। যার কারণে দর্শকরা এখন আর মঞ্চনাটকের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ঝুনা চৌধুরী বলেন, ‘ট্রাফিক জ্যামের কারণে কর্মদিবসগুলোতে দর্শক কম থাকে, তবে শুক্র ও শনিবারসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে দর্শকদের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।’ তবে তিনি এও স্বীকার করেন, নানা ব্যস্ততায় দর্শকরা আগের মতো পরিবার-পরিজন নিয়ে নাটক দেখতে আসছেন না। আর মানসম্মত না হওয়ার কারণে অনেক নাটকে দর্শক সংকট থাকে বলেও তিনি মনে করেন।

ঢাকা ড্রামার অধিকর্তা ম. আবু হারুন টিটো বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘুরে-ফিরে একজাতীয় দলগুলো হল বরাদ্দ পাচ্ছে আর একই নাটক মঞ্চায়ন হচ্ছে বলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক দর্শক ফেরত যাচ্ছেন। কারণ একটি নাটক একবার দেখার পর একজন দর্শক সেই নাটকটি দ্বিতীয়বার দেখতে চাইবেন না। নাটকে নতুনত্ব নেই বলে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।’

বাংলাদেশ থিয়েটারের অধিকর্তা খন্দকার শাহ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুরে-ফিরে পুরনো দলগুলোই শুধু নাটক মঞ্চায়ন করছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ নাটকই দর্শকরা মহিলা সমিতি ও গাইড হাউস থেকে শুরু করে শিল্পকলা একাডেমির হলগুলোতে দেখেছে। বৈচিত্র্য নেই বলে অর্থাৎ নতুন প্রযোজনার সংখ্যা কম বলে দর্শক উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। টিভি চ্যানেলগুলোয় মঞ্চনাটকের প্রচার খুব কম বলে নাটকের ওপর সেই প্রভাবটা পড়ছে।’

বহুবচন থিয়েটারের তৌফিকুল হাসান বলেন, ‘যানজটের কারণে দর্শকরা এখন আর নাটক দেখতে আসছেন না। কারণ শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক দেখতে আসতে হলে দর্শকদের একদিন সময় বের করতে হয়। বর্তমান ব্যস্ততার যুগে এক দিন সময় বের করা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ যানজটের মধ্য দিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক দেখতে আসবেন না— এটাই স্বাভাবিক। দর্শকদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধু যানজটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানীর মতো জনবহুল এলাকাগুলোতে মঞ্চ তৈরি করা হলে দর্শকরা আগের মতো মঞ্চনাটক দেখা শুরু করবেন। এ ছাড়া বর্তমানে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর আধিক্যও মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। একুশটা চ্যানেলে নিয়মিত নাটক ও চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে বলে দর্শকরা মঞ্চের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আগে চ্যানেল কম ছিল বলে মঞ্চে দর্শক বেশি হতো, এখন চ্যানেল বৃদ্ধির কারণেও দর্শক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।’

দর্শক খরার জন্য মূলত ঢাকার যানজট, একই নাটক বারবার মঞ্চায়ন, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মঞ্চ না থাকসহ আরও কিছু কারণকে দায়ী করেছেন নাট্যকর্মীরা।

সর্বশেষ খবর