চলচ্চিত্রে এখন আইটেম গানের যুগ। বাণিজ্যিক বা ভিন্নধারার ছবি, আইটেম গান তার অপরিহার্য অঙ্গ। বলিউডি ঢঙে আইটেমকন্যা এখন ঢাকার ছবিতে আবশ্যক হয়ে পড়েছে। বুকিং এজেন্ট বা সিনেমা হল মালিকরা ছবি নেওয়ার আগে জানতে চান এতে আইটেম গান আছে কিনা। থাকলে আগ্রহ দেখান। তাদের কথায় আইটেম গান  হচ্ছে এখন ছবির প্রধান বাণিজ্যিক উপাদান।

বর্তমানে আইটেম গান বলিউড থেকে কপি করা হলেও ঢালিউডে আইটেমকন্যা বা আইটেম গান নতুন কিছু নয়। একেক সময় এটি একেক নামে প্রচলিত ছিল। ষাটের দশকে একে বলা হতো বাইজি নৃত্য। ছবিতে বাইজিপাড়ার রংমহলে একজন নৃত্যশিল্পী নেচে-গেয়ে খদ্দরের মন ভরাতেন। ষাটের দশকে প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এহতেশাম তার ‘এদেশ তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে প্রথম এ-জাতীয় নৃত্য-গীতের প্রচলন করেন। এ ছবিতে শেলী নামে একজন নৃত্যশিল্পী বাইজি নাচ নেচেছিলেন।

ঢালিউডে বাইজি থেকে আইটেম গার্ল পর্যন্ত যারা দর্শক মন রাঙিয়েছেন বা রাঙাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন শেলী, মঞ্জু দত্ত, শুভ্রা দে, কাবেরী, শর্বরী, কল্পনা, প্রিন্সেস লাকী, প্রিন্সেস জরিনা, প্রিন্সেস দীবা, প্রিন্সেস মায়া, নূতন, অঞ্জনা, চাঁদনী, মায়া, স্বপ্না, সুফিয়া, বীণা, ইয়াসমিন, শিউলী, মুনমুন, ময়ূরী, পলি, নাসরিন, সিন্ড্রি রাওলিন, বিপাশা কবির, নায়লা নাইম, সাদিয়া আফরিন, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, রুমা প্রমুখ।

ঢালিউডে আগে বাইজি নাচ, ক্যাবার ড্যান্সার, ডিস্কো ড্যান্সার থাকলেও ২০১০ সালে চালু হয় আইটেম নাচ। ওই বছর নোমান রবিন পরিচালিত ‘কমন জেন্ডার’ ছবির জন্য হলিউড থেকে আনা হয় আইটেম গার্ল সিন্ড্রি রাওলিনকে। এরপর ২০১২ সালে শাহীন সুমন পরিচালিত ‘ভালোবাসার রং’ ছবিতে আইটেম গার্ল হয়ে আসেন লাক্সতারকা বিপাশা কবির। এ ছবিতে তার দক্ষ পারফরম্যান্স ঢালিউডে তাকে আইটেমকন্যা হিসেবে স্থায়ী আসন তৈরি করে দেয়। এখন পর্যন্ত এ ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ছবিতে আইটেম গান হলেই প্রথম প্রস্তাব পান বিপাশা কবির।

নির্দিষ্ট আইটেমকন্যার পাশাপাশি গল্পের প্রয়োজনে মূল নায়িকারাও এখন আইটেম গানে অংশ নিচ্ছেন। এ তালিকায় অপু বিশ্বাস, ববি, মাহি, নিপুণ, পরীমণির মতো জনপ্রিয় নায়িকাদেরও অংশগ্রহণ রয়েছে।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমান বলেন, ছবিতে আইটেম গান নতুন কিছু নয়। শুধু ঢালিউডে নয়, টালিউড, বলিউডেও তা ছিল এবং এখনো আছে। তবে বর্তমানে যেভাবে আইটেম গান অপরিহার্য হয়ে পড়েছে আগে সেভাবে ছিল না। বিনোদনের জন্য গল্পের প্রয়োজনে ছবিতে নাচ-গান থাকবেই। কিন্তু তা যেন শালীনতার সীমা না ছাড়ায় সেদিকে নির্মাতাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।  না হলে অশ্লীলতার সময়ের মতো আবারও আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প বিতর্কের মুখে পড়বে। তাই বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের ভাবতে হবে।