শনিবার, ৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা
পরিচালক রফিক সিকদারের বিরুদ্ধে কলকাতার প্রিয়াঙ্কাকে মানসিকভাবে হেনস্তার অভিযোগ

“ হৃদয় জুড়ে ছবিটা সম্ভবত আর করা হচ্ছে না

ইকরাম উল করিম

“ হৃদয় জুড়ে ছবিটা সম্ভবত আর করা হচ্ছে না

বামের ছবিতে কলকাতার দৈনিকে ছাপা হওয়া খবর ও সিনেমার প্রমোশনাল পোস্টার। ডানে প্রিয়াঙ্কা সরকার

বেশ কিছুদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় শুরু করেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। এটিকে এ দেশের ছবিতে তার প্রথম কাজ বলা হলেও পরে জানা যায় এর আগেও বাংলাদেশের একটি ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। রফিক সিকদারের পরিচালনায় ক্রিয়েটিভ মিডিয়া ওয়ার্ল্ডের প্রযোজনায় ‘হৃদয় জুড়ে’ ছবিটির কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। ছবিতে প্রিয়াঙ্কার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নিরব। শুক্রবার কলকাতার একটি দৈনিকে প্রিয়াঙ্কার খবর ছাপা হয়। খবরের শিরোনাম ‘পরিচালকের সঙ্গে সমস্যা, বাংলাদেশের প্রজেক্ট থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন প্রিয়াঙ্কা।’ প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, ছবির পরিচালক রফিক সিকদার তাকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন। এর সমর্থনে পরিচালকের সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের কথোপকথনও ফেসবুকে ফাঁস করেছেন এই অভিনেত্রী। প্রিয়াঙ্কার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে সেগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয় প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেখুন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ছবির কাজ শুরু করেছিলাম। শুরু থেকেই প্রত্যাশার সঙ্গে কোনো কিছুর মিল পাচ্ছিলাম না। এরপরও কাজ চালিয়ে নিয়েছি। ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু একজন পরিচালক এমন অপেশাদারসুলভ আচরণ করবেন একদমই ভাবতে পারিনি। ফলে হৃদয় জুড়ে ছবিটা সম্ভবত আর করা হচ্ছে না আমার।’

এর পেছনে দায়ী কে? প্রিয়াঙ্কার আঙ্গুল সরাসরি পরিচালকের দিকেই। ‘কাজ শুরুর পরপরই আমার কাছে একটু খটকা লাগছিল। কারণ দিন পেরিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু কাজ এগোচ্ছিল না কোনোমতেই। আমার বাংলাদেশ শিডিউল শেষ হলেও চিত্রনাট্যের নির্ধারিত অংশের শুটিং শেষ করা সম্ভব হয়নি তখনো। ফলে আমার অংশের কাজ ফেলে রেখেই কলকাতায় ফিরে আসি।’ কলকাতার দৈনিককেও প্রায় একইভাবে নিজের কথা বলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ছবির প্রযোজক আমাকে জানান, জুন মাসে ফের ছবির শিডিউল শুরু করবেন। আপাতত এই অবধি কথা হয়ে রয়েছে। আমার তরফে কোনো ফল্ট ছিল না, এটুকু বলতে পারি।’ তবে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন পরিচালক। তার অভিযোগ, প্রিয়াঙ্কা অত্যন্ত অপেশাদার। তার খামখেয়ালিপনার জন্য অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে পরিচালকের এই ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য ফাঁস করলেন প্রিয়াঙ্কা। পরিচালক  প্রিয়াঙ্কাকে অস্বস্তিকর মেসেজ করতেন। প্রিয়াঙ্কার ভাষায়, ‘আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি উনার সমস্যা কী। বেশ কিছুদিন ধরে ছবির পরিচালক আমাকে মানসিকভাবে চাপে রেখেছেন। বারবার মেসেজ করছেন। এই মেসেজের কোনোটাই পেশাদার না। সময়ে-অসময়ে করা মেসেজগুলো ব্যক্তিগত। এমনকি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছেন। যেখানে তার সঙ্গে আমার পেশাদারিত্বের বাইরে কোনো সম্পর্কই নেই। ’

প্রিয়াঙ্কা আরও যোগ করে বলেন, ‘কলকাতায় ফেরার পর তার মেসেজের পরিমাণ বেড়ে যায়। বারবার বলছেন উনি নাকি আমাকে মিস করছেন! বিয়ের প্রস্তাব এমনকি উনি নাকি আমাকে একটা গাড়ি উপহার দিতে চান, সে কথাও মেসেজে লিখেছিলেন!’

এ প্রতিবেদককে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার চ্যাটের স্ন্যাপশটগুলো ভালো করে দেখার অনুরোধ করেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। জানিয়েছেন বাধ্য না হলে এগুলো প্রকাশ করতেন না তিনি। আপাতত ছবিতে আর কাজ না করার কথাই ভাবছেন তিনি। পরিচালকের মামলার হুমকি প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কার ভাষ্য, ‘আমার অবস্থান আমি তুলে ধরেছি। এমন অপেশাদার অবস্থায় কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পরিচালক আইনগত ব্যবস্থা নিলে আমি নিশ্চয়ই বসে থাকব না?’

 

 

“ শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করছিলেন প্রিয়াঙ্কা

ফেসবুকের স্ক্রিনশট ও অভিযোগ প্রসঙ্গে ‘হৃদয় জুড়ে’ সিনেমার পরিচালক রফিক সিকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘যেসব সামনে এসেছে সবই কিন্তু রিসেন্ট। এর আগে কিন্তু আমার অ্যাপ্রোচে এ ধরনের কিছুই ছিল না।’ তাহলে পরে কেন এমন হলো? সত্যি কি তিনি নায়িকার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন? রফিক সিকদারের ভাষায়- ‘ঠিক তা নয়। আসলে শুরু থেকেই প্রিয়াঙ্কা সরকার আমাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে আসছিলেন। কিন্তু প্রজেক্টের স্বার্থে কাজের স্বার্থে আমরা কিছুই বলিনি। কৌশলে সব টাকাও নিয়ে নিয়েছেন তিনি। এখনো ছবির অনেক কাজ বাকি। এই দফা ভারতে গিয়ে তিনি আর ফোন ধরছেন না। মনে হয়েছে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য তার ইনবক্সে এগুলো পাঠিয়েছিলাম। সেটার উল্টো মানে দাঁড়াল।’ কিন্তু মানসিকভাবে সুস্থ রাখার জন্য বিয়ের অফার করার ফর্মুলাটা এলো কোত্থেকে? প্রিয়াঙ্কা সরকারের আচার-আচরণ বা সম্পর্ক কি আপনাকে সেদিকে কিছু ইঙ্গিত করেছিল? ‘আমি আসলে তাকে বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের ইউনিটের সবার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করছিল সে। আবার কখনো কখনো বন্ধুসুলভ আচরণও করেছে। তার ডিভোর্স হওয়া, জেদের বশে বাবা-মার কাছ থেকে সরে আসা, এসব আমাকে বলেছে। আমার তখন এক প্রকার মায়াও হয়েছে। কিন্তু সর্বোপরি আমি চেয়েছিলাম ব্যক্তিগতভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে যদি কোনোভাবে কাজটা শেষ করা যায়।’ রফিক সিকদারের দাবি, কাজের স্বার্থেই তিনি প্রিয়াঙ্কার অপেশাদারি আচরণের কথা আগে থেকে কাউকে বলেননি। শিডিউল না দেওয়া খারাপ ব্যবহারসহ কোনো বিষয়েই মুখ খুলেননি। আর শেষে যেটা হলো এটাকে অপ্রত্যাশিত মানছেন তিনি। তবে কাজের স্বার্থে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার মতো হাস্যকর যুক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে।

 

অনিশ্চিত ছবির ভবিষ্যৎ

পরিচালক ও ভিনদেশি নায়িকার মধ্যকার সমস্যার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ছবির ভবিষ্যৎ। এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে ছবির প্রযোজনা প্রতিষষ্ঠান ক্রিয়েটিভ মিডিয়া ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে মনির হোসাইন যুবরাজ এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। তবে তিনি জানান, শিগগিরই পরিচালক রফিক সিকদার, চিত্রনায়ক নিরবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে বসবেন তিনি। কারণ অনেক টাকা লগ্নি হয়ে গেছে। সমস্যা নিরসনের পথ খোঁজার পরই নিজের অফিশিয়াল বক্তব্য প্রকাশ করতে চান তিনি।

সর্বশেষ খবর