শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

জাতীয় পুরস্কারে ভিন্নধারার ছবিই সেরা

♦ আজীবন সম্মাননা : শাবানা ও ফেরদৌসী রহমান ♦ সেরা নায়ক : শাকিব খান ও মাহফুজ ♦ নায়িকা : জয়া আহসান ♦ সেরা ছবি : ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ♦ সেরা নির্মাতা : রিয়াজুল মওলা রিজু [বাপজানের বায়স্কোপ] ও মোরশেদুল ইসলাম [অনিল বাগচীর একদিন] ♦ সর্বোচ্চ পুরস্কার : বাপজানের বয়স্কোপ [নয়টি]

আলাউদ্দীন মাজিদ

জাতীয় পুরস্কারে ভিন্নধারার ছবিই সেরা

বেশ কয়েক বছর ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভিন্ন ধারার ছবির জয়জয়কার চলছে। এবারের পুরস্কারের ২৫ ক্যাটাগরির মধ্যে সেরা ছবিসহ ১৭টি পুরস্কারই দখল করেছে ভিন্নধারার চলচ্চিত্র। বৃহস্পতিবার ঘোষিত ২০১৫ সালের জাতীয় পুরস্কারে সেরা ছবি হিসেবে সম্মাননা পায় যৌথভাবে দুটি ছবি। এগুলো হলো—‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’। দুটিই ভিন্নধারার ছবি। এর মধ্যে আবার এ দুই ছবির নির্মাতা যথাক্রমে রিয়াজুল মওলা রিজু ও মোরশেদুল ইসলাম যৌথভাবে সেরা নির্মাতার পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন। সেরা পার্শ্ব চরিত্রের জন্য নায়ক-নায়িকা দুজনই পেয়েছেন ভিন্নধারার ছবির জন্য পুরস্কার। তারা হলেন গাজী রাকায়েত [অনিল বাগচীর একদিন] ও তমা মির্জা [নদীজন]। ভিন্নধারার ছবির জন্য আরও যারা পুরস্কৃত হলেন তারা হচ্ছেন—শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : যারা যারিব (প্রার্থনা)। একই শাখায় একই ছবির জন্য বিশেষ পুরস্কার পাচ্ছেন প্রমিয়া রহমান। শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক : সানী জুবায়ের (অনিল বাগচীর একদিন)। শ্রেষ্ঠ গায়ক : যুগ্মভাবে সুবীর নন্দী (তোমারে ছাড়িতে বন্ধু, চলচ্চিত্র-মহুয়া সুন্দরী) ও এস আই টুটুল (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র-বাপজানের বায়স্কোপ)। শ্রেষ্ঠ গায়িকা : প্রিয়াঙ্কা গোপ [আমার সুখ সে তো, চলচ্চিত্র-অনিল বাগচীর একদিন]। শ্রেষ্ঠ গীতিকার : আমিরুল ইসলাম (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র-বাপজানের বায়স্কোপ), শ্রেষ্ঠ সুরকার : এস আই টুটুল (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র-[বাপজানের বায়স্কোপ],   শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার : মাসুম রেজা (বাপজানের বায়স্কোপ), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : যুগ্মভাবে মাসুম রেজা (বাপজানের বায়স্কোপ) ও মো. রিয়াজুল মওলা রিজু (বাপজানের বায়স্কোপ), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : হুমায়ূন আহমেদ (অনিল বাগচীর একদিন), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক : মেহেদী রনি (বাপজানের বায়স্কোপ), শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান : শফিক (জালালের গল্প)। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ সেরা ছবি ও সেরা নির্মাতাসহ নয়টি পুরস্কার ঘরে তুলেছে।

 

আরও কাজ বাকি আছে : ফেরদৌসী

একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী রহমান বলেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাওয়া মানে কাজ থেকে অবসর নেওয়া বা কাজ শেষ হয়ে যাওয়া নয়। নতুন করে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও দায়িত্ববোধের পরিসর বৃদ্ধি পাওয়া। এর আগে ১৯৭৭ সালে সংগীত পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। এ ছাড়া অসংখ্য সম্মাননা তো রয়েছেই। আসলে পুরস্কারের জন্য কেউ কাজ করে না। ভালো কাজ মানুষকে স্বীকৃতি পাইয়ে দেয়। আর এই স্বীকৃতিতে উজ্জীবিত হয়ে নতুন করে কাজে মনোনিবেশ করতে হয়। সংগীত জগেক পূর্ণতা দিতে আমার আরও কাজ বাকি রয়ে গেছে। সবার দোয়া চাই যাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি।

 

 

এই সম্মাননা আমার পূর্ণতা : শাবানা

১৯৬০ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তুমুল জনপ্রিয়তায় অভিনয় করে যাওয়া ঢালিউডের বিউটিকুইন-খ্যাত অভিনেত্রী শাবানা দীর্ঘ অভিনয় জীবনে একদিকে পেয়েছেন সব শ্রেণির দর্শকের অফুরন্ত ভালোবাসা এবং ১২ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী ১৯৯৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হলেও কিছুদিন আগে তিনি ঢাকায় এসেছেন। আর এখানে থাকা অবস্থায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননার প্রাপ্তির কথা জানতে পেরে বেশ আবেগাপ্লুত ও উচ্ছ্বসিত হন তিনি। তার কথায়—আমি অভিনয় করেছি দর্শকের আনন্দের জন্য, চলচ্চিত্র শিল্পের পূর্ণতার জন্য। আর এ ক্ষেত্রে কখনো ভাবিনি কী পেয়েছি। রাষ্ট্র আমাকে ১২ বার জাতীয় সম্মান দিয়েছে, বাচসাসসহ একাধিক সংগঠন অগণিত সম্মাননায় ভূষিত করেছে। সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল দর্শকের প্রাণঢালা ভালোবাসা। দর্শক গ্রহণযোগ্যতার কারণেই আমি অভিনেত্রী শাবানা হতে পেরেছি। রাষ্ট্র আমাকে এবার আজীবন সম্মাননা দিলো। এতে আমার অভিনয় জীবন পূর্ণতা পেল বলে আমি মনে করছি। আমি সরকার ও দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞ।

 

এই পুরস্কার সবার : শাকিব খান

তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব থান। তার কথায় এই পুরস্কার সবার। মানে আমার দর্শক, ভক্ত, নির্মাতা, সহশিল্পী, কলাকুশলী সবার আন্তরিক সহযোগিতার কারণে আমি আমার অভিনয় দক্ষতার সাক্ষর রাখতে পেরেছি এবং এর স্বীকৃতি হিসেবে সরকার আমাকে তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়েছে। আমি খুশি এ জন্য যে, আমি এ পর্যন্ত যেসব ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি সবগুলোই দর্শক দেখেছে। যে ছবি দর্শক দেখে না তাতে পুরস্কার পেলে খুশি লাগার কথা নয়। কারণ শিল্পীরা কাজ করে দর্শকের জন্য। এবারের পুরস্কারটি আমি আমার আদরের সন্তান আবরামকে উৎসর্গিত করলাম। আবরামের হাত দিয়েই পুরস্কারটি নিতে চাই।

 

এই প্রাপ্তি উৎসাহের : জয়া

তৃতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, এই পুরস্কার অবশ্যই উৎসাহের। দর্শকের ভালোবাসার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা কাজের প্রতি আগ্রহ আর উৎসাহ বাড়িয়ে তোলে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও সমৃদ্ধ কাজ দিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনার চেষ্টা করছি। আর এতে অনেকটা সফল হচ্ছি বলে ভালো লাগছে। আগামীতে আরও ভালো কাজ দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। দর্শক, যে ছবির জন্য পুরস্কার পেলাম তার নির্মাতা, সহশিল্পী, রাষ্ট্রসহ সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।

 

 

আমি কৃতজ্ঞ : মাহফুজ

দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেতা মাহফুজ বলেন, এই পুরস্কার আমার জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। কারণ এ ছবির একদিকে প্রযোজক আমি এবং অন্যদিকে অভিনেতাও আমি। দর্শক আমার এই ‘জিরো ডিগ্রী’ ছবিটি সাদরে গ্রহণ করেছে আর রাষ্ট্র আমাকে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় সম্মান দিয়েছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? আগামীতে আরও ভালো ছবি ও অভিনয় উপহার দিতে চাই। দর্শক আর রাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সুনির্মাণের জন্য নির্মাতা অনিমেষ আইচ ও এ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ায় জয়া আহসানকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

 

 

একনজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫

♦    আজীবন সম্মাননা : যুগ্মভাবে-অভিনেত্রী শাবানা ও সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।

♦    শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : যুগ্মভাবে ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’

♦    শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : যুগ্মভাবে ‘একাত্তরের গণহত্যা’ ও ‘বধ্যভূমি’

♦    শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক : যুগ্মভাবে মো. রিয়াজুল মওলা রিজু (বাপজানের বায়স্কোপ) ও মোরশেদুল ইসলাম (অনিল বাগচীর একদিন)

♦    শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র : যুগ্মভাবে শাকিব খান (আরো ভালোবাসবো তোমায়) ও মাহফুজ আহমেদ (জিরো ডিগ্রী)

♦    শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র : জয়া আহসান (জিরো ডিগ্রী)

♦    শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্র : গাজী রাকায়েত (অনিল বাগচীর একদিন)

♦   সেরা অভিনেত্রী : জয়া আহসান [জিরো ডিগ্রী]

♦    শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্র : তমা মির্জা (নদীজন)

♦    শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্র : ইরেশ যাকের (ছুঁয়ে দিল মন)

♦    শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : যারা যারিব (প্রার্থনা)। একই শাখায় একই ছবির জন্য বিশেষ পুরস্কার পাচ্ছেন প্রমিয়া রহমান।

♦   শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক : সানী জুবায়ের (অনিল বাগচীর একদিন)

♦    শ্রেষ্ঠ গায়ক : যুগ্মভাবে সুবীর নন্দী (তোমারে ছাড়িতে বন্ধু, চলচ্চিত্র-মহুয়া সুন্দরী) ও এস আই টুটুল (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র-বাপজানের বায়স্কোপ)

♦    শ্রেষ্ঠ গায়িকা : প্রিয়াঙ্কা গোপ (আমার সুখ সে তো, চলচ্চিত্র-অনিল বাগচীর একদিন)

♦   শ্রেষ্ঠ গীতিকার : আমিরুল ইসলাম (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র-বাপজানের বায়স্কোপ)

♦    শ্রেষ্ঠ সুরকার : এস আই টুটুল (উথাল পাথাল জোয়ার, চলচ্চিত্র-বাপজানের বায়স্কোপ)

♦    শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার : মাসুম রেজা (বাপজানের বায়স্কোপ)

♦    শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : যুগ্মভাবে মাসুম রেজা (বাপজানের বায়স্কোপ-মো. রিয়াজুল মওলা রিজু (বাপজানের বায়স্কোপ)

♦    শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : হুমায়ূন আহমেদ (অনিল বাগচীর একদিন)

♦    শ্রেষ্ঠ সম্পাদক : মেহেদী রনি (বাপজানের বায়স্কোপ)

♦   শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক : সামুরাই মারুফ (জিরো ডিগ্রী)

♦   শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : মাহফুজুর রহমান খান (পদ্ম পাতার জল)

♦    শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক : রতন কুমার পাল (জিরো ডিগ্রী)

♦   শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা : মুসকান সুমাইকা (পদ্ম পাতার জল)

♦    শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান : শফিক (জালালের গল্প)

সর্বশেষ খবর