বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সংকট কাটছে না চলচ্চিত্রে

চলচ্চিত্রশিল্প এখন মহাসংকটে। যৌথ প্রযোজনার নিয়মনীতি না মানার অভিযোগ। শিল্পী, নির্মাতা, গল্প ও মানসম্মত ছবির অভাব। সিনেমা হল বন্ধ রোধ সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হওয়া এ সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। কীভাবে এ অবস্থার উত্তরণ সম্ভব।  তা নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্রশিল্প  মুরব্বিশূন্য হয়ে পড়েছে

চলচ্চিত্রশিল্প বহুদিন ধরে মুরব্বিশূন্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে এই শিল্প দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকটে ভুগছে। বর্তমানে শিল্পকে ভালোবাসার চেয়ে নিজ স্বার্থকে অনেকে বড় করে দেখছে। ফলে সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।

আমি জানি না এই শিল্পের কী হবে। বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রের প্রতি বড়ই আন্তরিক। আমার বিশ্বাস সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় চলচ্চিত্র শিল্প

আবার ঘুরে দাঁড়াবে, সোনালি দিন ফিরে আসবে। চলচ্চিত্রশিল্পের এই অচলাবস্থায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা এক সময় পারিবারিক পরিবেশে কাজ করেছি। বড়দের শ্রদ্ধা আর ছোটদের স্নেহ করতাম। তখন যে ভুল বোঝাবুঝি হতো না তা কিন্তু নয়। সব সমস্যা থাকত চার দেয়ালের মধ্যে। আর এখন কী হচ্ছে?

 

নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে

চলচ্চিত্রর অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। নানা সংকটের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ভালো গল্প নেই, নির্মাণ নেই, যৌথ প্রযোজনার নামে নায়িকাদের স্বল্পবসনা করে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যা সত্যি লজ্জাকর এবং আমাদের সংস্কৃতি পরিপন্থী। শিল্পী সংকটের কথাও বলা হয়। আসলে শিল্পী সংকট কতটা আছে জানি না তবে তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেওয়ার অভাব আছে। এসব সংকটের কারণে এই  শিল্প থেকে অনেকদিন ধরে দূরে আছি। তবে আমি আশাবাদী হয়তো সুদিন ফিরবে। আর এই সুদিন ফেরাতে হলে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

নিজ দেশের চলচ্চিত্রকে নিজেদের ভাষায় নির্মাণ করতে হবে। তাহলে সুদিন ফিরবে।

 

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই শিল্পকে রক্ষা করতে হবে

একদিকে আমাদের চলচ্চিত্র ধ্বংসের অপচেষ্টা অন্যদিকে সিনিয়রদের কথা না মানা, উপরন্তু তাদের খাটো করে কথা বলা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই চলচ্চিত্রশিল্পের মর্যাদা রক্ষায় যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা চলচ্চিত্রপ্রেমীরা সদা প্রস্তুত। আমার কথা হলো দেশের সবচেয়ে বড় এই গণমাধ্যম যেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতায় ধ্বংস হয়ে না যায়। সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে, নিজের স্বার্থকে বড় করে না দেখে তাহলে সমস্যা থাকার কথা নয়।

নিজেদের গল্পে নিজের মতো করে ছবি বানাতে হবে। আমাদের শিল্পে শিল্পীর অভাব নেই। তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। আবারও বলছি সবাইকে এক হতে হবে। এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে বিভাজন কাম্য নয়

চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে বিভাজন কারও-ই কাম্য নয়। বর্তমানে এই বিভেদ শিল্পটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো একতা। যে কোনো কাজে ঐক্য না থাকলে তা উন্নত হতে পারে না। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে কখনো কখনো মতভেদ হবে, প্রতিবন্ধকতা আসবে, এটিই স্বাভাবিক। আর এসব জিইয়ে রেখে বসে থাকলে চলবে না। সব ভুলে একসঙ্গে শিল্পটিকে বাঁচানোর চেষ্টা  করতে হবে। সিনেমা হল বাড়লে ছবি নির্মাণ বাড়বে। আর হাইওয়েতে কমপক্ষে ১৫০ সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। সেখানে পর্যাপ্ত অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। সিনেমা হলে মহিলারা যাতে নিরাপদে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

চলচ্চিত্রশিল্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দুঃখজনক

চলচ্চিত্রশিল্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম কারও কাম্য নয়। বর্তমানে এই জগতে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে তা দূর হওয়া দরকার। যারা এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা নিজেদের ভুল বুঝে দুঃখ প্রকাশ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সরকার যদি  কঠোর হয় তাহলে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এই শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে না। ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দেশি চলচ্চিত্রশিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

আমাদের চলচ্চিত্র আমাদেরই গর্ব। এই গর্বের শিল্পকে নানা অজুহাতে ধ্বংস করে দেওয়া মানে নিজেদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে দেওয়া। যা কারও কাম্য হতে পারে না।

 

সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে হবে

চলচ্চিত্রশিল্পের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবগঠিত কমিটি এই ব্যাপারে খুবই সজাগ। চলচ্চিত্রের মতো একটি প্রধান গণমাধ্যমকে কোনো অদৃশ্য অপতৎপরতা বা ষড়যন্ত্রের কারণে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। আমরা যে কোনো অপশক্তি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত। আমার কথা হলো সিনিয়র আর জুনিয়ররা এক কাতারে দাঁড়িয়ে মিলেমিশে কাজ করলে কোনো সমস্যাই আর প্রতিবন্ধক হতে পারে না।

তাই বিভাজন নয়, ঐক্যের বিকল্প নেই। দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে আমরা শিল্পীরা প্রয়োজনে সিনিয়রদের কাছে যাব, তাদের পরামর্শ আর উপদেশ চাইব। যে করেই হোক চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাব।

 

আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই

আমরা কাজ করতে চাই। আমি অলরেডি বেশ কয়েকটি ছবির কাজ শেষ করে দিয়েছি। আমি চাই সবাই কাজ করুক, ঐক্যবদ্ধভাবে চলচ্চিত্রশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাক। এখানে বিভেদ সৃষ্টি করে কোনো লাভ নেই। দিনের শেষে আমরা চলচ্চিত্রকাররা সবাই এক। একসঙ্গে চলতে গিয়ে হয়তো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, তবে তা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে আবার হাসিমুখে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। কারণ তাদের কারণেই আজ আমি শিল্পী মিশা সওদাগর। আমি চাই না কাজের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে বিভাজন থাকুক। আমরা সবাই একটি পরিবার। এ কথা মনে রাখতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর