সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

সৌভাগ্য হয়েছিল নায়করাজের সঙ্গে কাজ করার

সৌভাগ্য হয়েছিল নায়করাজের সঙ্গে কাজ করার

নব্বইয়ের দশকে শাবানা প্রযোজিত যৌথ আয়োজনের ‘আমি সেই মেয়ে’ ছবির মাধ্যমে ঢাকাই চিত্রজগতে পা রাখেন ঋতুপর্ণা। এরপর প্রায় একডজনের মতো ঢাকাই ছবিতে কাজ করেছেন এই টলি-কন্যা। আবারও এলেন তিনি। এবার অভিনেতা-নির্মাতা আলমগীরের ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে অভিনয় করছেন। ৯ সেপ্টেম্বর এফডিসিতে ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে তার বলা কথা তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আবার ঢাকার ছবিতে ফিরলেন, কেমন লাগছে?

বেশ ফুরফুরে লাগছে বলতে পারেন। লাগারই তো কথা। আমি যে এ দেশেরই মেয়ে, কলকাতা আর বাংলাদেশ; ভাষার মিল আমাদের এক সুতোয় গেঁথেছে। তাই সুযোগ পেলেই এখানে উড়ে আসি। এখানে আসতে শুধু ভালো লাগে না, সবাইকে বড় আপন মনে হয়। যেন নিজের বাড়িতে এসেছি। [হা...হা...হা...তৃপ্তির হাসি]

 

এবার অভিনেতা-নির্মাতা আলমগীরের নির্দেশনায় কাজ করছেন, এর আগেও কিন্তু এই চলচ্চিত্রকারের সঙ্গে আপনার কাজ করা হয়েছিল?

হ্যাঁ, সেটি ছিল ঢাকায় আমার প্রথম কাজ। যতদূর মনে পড়ে ১৯৯৫ সাল হবে। ঢাকার শাবানা ম্যাডাম আর কলকাতার অভিনেতা প্রসেনজিৎ প্রযোজিত ‘আমি সেই মেয়ে’ ছবিতে আলমগীর সাহেবের সঙ্গে কাজ করেছিলাম। ওই ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করি। তাতে আলমগীর সাহেব ছিলেন আমার বাবা। এবার তার নির্দেশনায় কাজ করছি। আগে তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তিনি যে একজন খুব উঁচু মাপের অভিনেতা সেই পরিচয়টা পেয়েছিলাম। এতে করে এবার তার নির্দেশনায় কাজ করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি।

 

একটি সিনেমার গল্প ছবির গল্প কেমন?

একজন মেয়ের জীবনের মর্মস্পর্শী গল্প এটি। গল্পটা আমাকে ছুঁয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে স্ক্রিপ্টটি তৈরি করেছেন তিনি। আমাকে যখন প্রস্তাব দিলেন আর স্ক্রিপ্ট পাঠালেন পড়ে দেখলাম চমৎকার একটি গল্প। সঙ্গে সঙ্গে এতে কাজ করব বলে মনস্থির করে ফেলি। এই গল্পের প্রধান চরিত্রেই অভিনয় করছি আমি।

 

এতে আপনার চরিত্রটি সম্পর্কে বলুন

একজন অভিনেত্রীর চরিত্র। মূলত এটি সিনেমার গল্প। আরিফিন শুভ একজন অভিনেতা। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্ম হয় নতুন নতুন সব ঘটনার। সাসপেন্স, ক্লাইমেক্সের টান টান উত্তেজনায় গল্প গড়িয়েছে বহুদূর। সেই সঙ্গে আমার চরিত্রটি লতিয়েছে গল্পের শিরায় শিরায়।

 

বর্তমান সময়ের ঢাকার ছবি সম্পর্কে ধারণা কেমন?

বেশ ভালো, কমার্শিয়াল এবং অফট্রেক, দুই ধরনেরই ভালো ছবি হচ্ছে। তা ছাড়া কলকাতার সঙ্গে ঢাকার যৌথ আয়োজনে অনেক ভালো ছবি হচ্ছে আর সেগুলো দুদেশে তো বটেই, ইন্টারন্যাশনালি রিলিজে ভালো রেজাল্ট করছে। এটি ঢাকার ছবির জন্য গর্বের কথা, শুধু ঢাকা কেন, ঢাকা আর কলকাতা দুই অঞ্চলেই বাংলা ছবির সফলতার সুবাতাস বইছে।

 

এ দেশের অনেক বড় মাপের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন, সেসব স্মৃতির কথা মনে পড়ে?

অবশ্যই মনে পড়ে, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল নায়করাজ রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে কাজ করার। তারই ছবির রিমেক ‘বাবা কেন চাকর’-এ তার সঙ্গে অভিনয় করি। সম্প্রতি তার প্রয়াণের খবরে খুবই কষ্ট পেয়েছি। অনেক বড়মাপের একজন শিল্পী ছিলেন তিনি। তার মতো শিল্পীর চলে যাওয়া মানে একটি যুগের অবসান হওয়া। তিনি এই শিল্পকে যা দিয়ে গেছেন, তা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বিশাল অবদান। তার কাছে আরও অনেক কিছু শেখার ছিল। তা ছাড়া হুমায়ুন ফরীদি (রাঙ্গাবউ), হেলাল খান ও আমিন খান (সাগরিকা), ইলিয়াস কাঞ্চন (চেয়ারম্যান), মান্নার (স্বামী ছিনতাই) সঙ্গেও উল্লেখিত ছবিতে কাজ করেছি। তাদের মধ্যে দুই শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি আর মান্না ভাইও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এটি চরম ক্ষতির কারণ, বড় কষ্টের ব্যাপার। [দীর্ঘ নিঃশ্বাস]

 

এ দেশের অনেক শিল্পী অনেকদিন ধরে কলকাতায় কাজ করছেন। তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

হ্যাঁ, ফেরদৌস ভাই তো আছেনই। তিনি তো দুই বাংলারই ছেলে। আর সম্প্রতি শাকিব খান, জয়া আহসান তো খুব ভালো করছেন। জয়ার সঙ্গে আমি পর্দা ভাগাভাগি করেছি ‘রাজকাহিনী’তে। নুসরাত ফারিয়াও আমাদের ওখানে কাজ করছে। তা ছাড়া সাবাও কাজ করেছেন। সবার কাজ ওখানে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

 

 

এবার ঢালিউডের নতুন প্রজন্মের নায়ক আরিফিন শুভর বিপরীতে কাজ করছেন। কেমন লাগছে?

ওর সঙ্গে মাত্র কাজ শুরু করলেও তার একটি ছবি কিছুদিন আগে কলকাতায় মুক্তি পেয়েছিল। ছবির নাম সম্ভবত ‘নিয়তি’। এর আগে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ শিরোনামের একটি ছবিও মুক্তি পেয়েছিল কলকাতায়। সেসব ছবিতে তাকে বেশ ভালো লেগেছে। হিরোইজম বলতে যা বোঝাায় তার পুরোটাই তার মধ্যে আছে। এখন তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখছি তার সম্পর্কে আমার ধারণা শার্প বলতে পারেন।

 

ইদানীং যৌথ প্রযোজনার ছবির নিয়ম-নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে, এ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কেমন?

দেখুন, যৌথ আয়োজন মানে দুদেশের ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্ককে শক্তিশালী করা। সংস্কৃতির আদান-প্রদান আরও জোরালো হওয়া। এখানে নিয়ম-নীতি অবশ্যই থাকবে এবং তা দুদেশের স্বার্থ রক্ষা করবে। এ নিয়ে যদি কোনো সমস্যা হয়, তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে। এতে  সমালোচনা হওয়াটা দৃষ্টিনন্দন মনে হয় না। যৌথ প্রযোজনার আবেদন কখনো ফুরাবার নয়।

সর্বশেষ খবর