শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
হানিফ সংকেত

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বলে ইত্যাদি

আলী আফতাব

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বলে ইত্যাদি

হানিফ সংকেত, যাকে বলা হয় মিডিয়া ম্যাজিশিয়ান। তার নির্মিত ইত্যাদি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে একযোগে প্রচার হবে ইত্যাদি। ইত্যাদি ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে—

 

টেলিভিশন অনুষ্ঠানকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে ধারণ শুরু করেছেন অনেক আগেই। যে কারণে ইত্যাদিকে বলা হয় শিকড় সন্ধানী এই বাইরে ধারণ করার চিন্তা করলেন কেন?

 

বৈচিত্র্যের জন্য এবং টিভি অনুষ্ঠানকে মুখে নয় বাস্তবে গণমুখী করতে। এক সময় টেলিভিশন অনুষ্ঠান স্টুডিওর চার দেয়ালে বন্দী ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি সেখান থেকে টিভি অনুষ্ঠানকে বাইরে নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদি ধারণ করতে এবং সেসব স্থানের পরিচিতি তুলে ধরতে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার করেছি পাবনায়।

 

এবার ইত্যাদি করেছেন পাবনার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সামনে, এর বিশেষ কোনো কারণ আছে কী?

অবশ্যই আছে। স্থান নির্বাচনেও আমাদের প্রচুর গবেষণা করতে হয়। ধারণ স্থানেরও বিশেষত্ব থাকতে হবে। যে কারণে আমরা এবার ধারণ করেছি পাবনা জেলার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে। আমাদের দেশের শতাব্দী পেরিয়ে আসা একমাত্র ইস্পাত নির্মিত সর্ববৃহৎ রেল সেতু ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। শুধু রেল চলাচলের জন্য ইস্পাত নির্মিত এত বিশাল সেতু সারা বিশ্বেই বিরল। পেছনে রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, সামনে সড়ক সেতু লালন শাহ ব্রিজ। প্রাচীন আর বর্তমানের দুই পাশাপাশি নিদর্শন এবং পাশে বহমান নদীর ধারা সব মিলিয়ে চমত্কার দর্শনীয় স্থান এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট।

 

এবার ইত্যাদি শুটিং করার সময় নাকি বৈরী আবহাওয়া ছিল?

হ্যাঁ, এবার পাবনাতে ইত্যাদি ধারণের দিন বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে সেদিন ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠান ধারণের সময়ও কখনো তুমুল বৃষ্টি, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ফলে মাঠ হয়ে যায় কর্দমাক্ত। এতসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাদা-পানিতে চেয়ারে বসে বৃষ্টিতে ভিজে হাজারো দর্শক দীর্ঘক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছেন ইত্যাদির নান্দনিক সব পর্ব।

 

অনেক চ্যানেল, হাজারো অনুষ্ঠান, তারপরও ইত্যাদির প্রতি দর্শকদের মনে অন্যরকম উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়, কেন?

 

সবই দর্শকদের ভালোবাসা। ৩০ বছরে ‘ইত্যাদি’র অর্জন। ব্যবসাকে মুখ্য না করে আমরা সব সময়ই দর্শকদের পছন্দকে গুরুত্ব দেই। তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও দর্শকরা আমাদের অনুষ্ঠানটি দেখতে বসেন, আমিও তাদের সেই সময়ের মূল্য দিতে চেষ্টা করি।

 

আপনি তো সব সময় সব বয়সের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। কেন?

তার আগে আমি আপনাকে প্রশ্ন করি— টেলিভিশন কি কোনো নির্দিষ্ট পেশার মানুষদের জন্য? টেলিভিশন তো সবার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। তাই ইত্যাদিতে উঠে আসে সবার কথা। দুই দশক আগে যখন স্যাটেলাইট চ্যানেল ছিল না তখন থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ইত্যাদি নির্মাণের চেষ্টা করেছি। আমরা আনন্দিত আমাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এখন অনুষ্ঠান করছেন।

 

টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান কাঙ্ক্ষিত মানের হচ্ছে না কেন?

প্রথমত মান নিয়ন্ত্রণ ও সুচিন্তার অভাব। বিষয়টা অনেকটা নির্বাচনকালীন ভোট দেওয়ার মতো।

আমার ভোট আমি দেব-যাকে খুশি তাকে দেব। কথাটি হওয়া উচিত দেখে-শুনে-বুঝে দেব। তেমনি টিভি চ্যানেলের অবস্থাও হয়েছে সেরকম— আমার চ্যানেল আমি চালাব যেমন খুশি তেমন চালাব। কথাটি হওয়া উচিত দেখে-শুনে-বুঝে চালাব। অবশ্য আজকাল অনেককে দেখি নিজের ঢোল নিজেরাই পেটান। সুতরাং দর্শক কি বলল তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।

 

উত্তরণের উপায় কী?

এখানেও প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, যোগ্য জায়গায় যোগ্য লোক।

 

ইত্যাদির প্রাপ্তি কী?

ইত্যাদির প্রধান প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা। কিছু অসহায় মানুষ ও তাদের পরিবারের মুখের হাসি। যখন দেখি ইত্যাদিতে দেখানো প্রচারবিমুখ মানুষগুলো রাষ্ট্রীয় সম্মান পান, ভালো লাগে। এদের কারও পুরস্কার পেয়ে দায়িত্ব বাড়েনি। বরং তারা দায়িত্ববান বলেই পুরস্কৃত হয়েছেন। ইত্যাদির প্রতিবেদন দেখে কেউ যখন অনুপ্রাণিত হয়ে জনকল্যাণে এগিয়ে আসেন, তখন আমরা আনন্দ পাই।  

 

 

সর্বশেষ খবর