বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্ব তখন দুই ভাগে বিভক্ত

সৈয়দ হাসান ইমাম

বিশ্ব তখন দুই ভাগে বিভক্ত

এক অনন্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সালেহ আহমেদ নামে সংবাদ পাঠ করতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনেও তার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তার সঙ্গে কথা বলেছেন— পান্থ আফজাল

 

স্বাধীনতা আন্দোলনে ‘স্টপ জেনোসাইড’ এবং ‘রূপান্তরের গান’-এর ভূমিকা কতখানি?

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দলিল ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ এবং স্টপ জেনোসাইড’ নির্মিত হয়। আমাদের ‘স্টপ জেনোসাইড’ দেখে অনেক বিপক্ষ দেশের জনগণ উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তখন মুক্তিকামী শিল্পী সংস্থায় আমিসহ ছিল ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন এবং মুস্তাফা মনোয়ার। আমরা যুবকদের নিয়ে স্কোয়াড গঠন করেছিলাম। ১৯৪৭-’৭১ এর পটভূমিতে করা ‘রূপান্তরের গান’-এর ধারাবর্ণনা তখন আমি করতাম। রচনায় ছিল শাহরিয়ার কবির। রূপান্তরের গান নিয়ে তখন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম।

 

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’-এর অবদান কী ছিল?

১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় শিল্পীদের প্রতিবাদী সংগঠন ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ।’ আমরা সবাই তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বর্জন করি। গণআন্দোলনের চাপে পাকিস্তানি সরকার ৮ মার্চ থেকে বেতার টেলিভিশনের দায়িত্ব বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ২৫ মার্চের পর আমি মুজিবনগরে চলে যাই এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নাট্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হই। আমি তখন মুজিবনগর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালেহ আহমেদ নামে বাংলা সংবাদ পাঠ করতাম। আমি ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংবাদ পাঠের দায়িত্ব পালন করি। তখন আমরা ২টি কমিটি করে বেতার-টেলিভিশনের প্রচার চালাই। পাকিস্তানের প্রচার মাধ্যম আমাদের কাজে ব্যবহার করি। এরপর প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে স্বাধীন সরকার গঠন করলাম। যারা বেতার-টেলিভিশন থেকে ভারতে চলে গিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে এনে ২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার শুরু করলাম।

 

কোন কোন দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছিল?

সারা পৃথিবী তখন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য সরকারগুলো তখন আমাদের বিপক্ষে ছিল আর সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত এবং পূর্ব ইউরোপ আমাদের পক্ষে ছিল। তবে মজার ব্যাপার হলো, যেসব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের বিপক্ষে ছিল তাদের জনগণ কিন্তু আমাদের সমর্থন করেছে তখন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শিল্পী, বিশেষ করে বিটলসের শিল্পীরা আমাদের সমর্থন করেছে, পাশে থেকেছে। চাঁদা তুলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাজে সহায়তা করেছে।

 

যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাধীনতা অজির্ত হয়েছে সেটা কি সফল হয়েছে?

অনেক কিছুই হয়েছে আবার অনেক কিছুই হয়নি। তবে সাম্প্রদায়িক উত্থান, মৌলবাদীর উত্থান বর্তমানে কমেছে। আমি মনে করি, সব মানুষ সমান। সব ধর্েমর, সব সম্প্রদায়ের মানুষের সমান অধিকার দরকার। বিশেষ করে রাজনৈতিক অধিকার থেকে সামাজিক অধিকার বেশি দরকারি। 

 

বর্তমানে নিজেকে কী কী কাজে ব্যস্ত রেখেছেন?

আমি এখন যতটুকু পারছি কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক আন্দোলন, মৌলবাদী আন্দোলন এবং বিভিন্ন গণআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বয়স তো আর কম হলো না। ৮১ বছর পার করেছি। এখন তারপরও নতুন ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তাদের সঙ্গে গঠনমূলক কাজ করে যাচ্ছি। নাটক, চলচ্চিত্র, সিরিয়াল ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজে নিজেকে যুক্ত করছি।

 

জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী?

দেশকে স্বাধীন করেছি, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ব্যক্তির কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, আকাঙ্ক্ষা বা কোনো হতাশাও নেই।

সর্বশেষ খবর