সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিজয়ের মাসে চলচ্চিত্রে আশার আলো

দর্শক গ্রহণযোগ্যতায় ‘হালদা’ ও ‘অন্তরজ্বালা’

আলাউদ্দীন মাজিদ

বিজয়ের মাসে চলচ্চিত্রে আশার আলো

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্রে খরা চললেও বিজয়ের মাসে মুক্তি পাওয়া দুটি ছবি যেন বছরের শেষপ্রান্তে এসে আশার আলো জ্বালিয়ে দিল। এ মাসে দুই ছবির সাফল্য নির্মাতাদের নতুন করে চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহিত করছে। এমনটাই জানালেন ১ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘হালদা’ ছবির প্রযোজক জাহিদ হাসান অভি ও পরিচালক তৌকীর আহমেদ এবং ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘অন্তরজ্বালা’ ছবির পরিচালক মালেক আফসারী ও প্রযোজক অভিনেতা জায়েদ খান। ‘হালদা’ সবশ্রেণির দর্শক সাদরে গ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমাসহ অন্য হলগুলোতে অনেক দিন পর দর্শকের ঢল নেমেছে। টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে অনেক দর্শককে ফিরে যেতে হয়েছে। ব্ল্যাকেও টিকিট বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঢাকাই চলচ্চিত্রের এই খরাকবলিত সময়ে কী এমন ছিল ‘হালদা’ ছবিতে যা দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো সিনেমা হলে টেনে নিয়ে গেছে? এমন প্রশ্নে প্রযোজক জাহিদ হাসান অভির কথায়, ছবিতে দেশের মাটির গল্প, মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র ছিল। ‘হালদা’ হলো দেশের একমাত্র মত্স্য প্রজনন কেন্দ্র। এ নদীকে ঘিরে মত্স্যজীবীদের বিশাল একটি অংশের জীবনের হাসি-কান্না, স্বপ্ন আর সাধ, সুখ-দুঃখ জড়িত। হালদা নদী ও তার সঙ্গে যুক্ত মানুষের প্রাকৃতিক জীবনচিত্র হুবহু তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। তাই দর্শক যখন ছবিটি দেখতে গেছেন তখন তারা এতে তাদের দেশের মাটির গন্ধ ও আশপাশের জীবনচিত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এখানেই ‘হালদা’ ছবির সার্থকতা। সিনেমা হল মালিকদেরও একই কথা। রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম আর চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমা হলের আবদুল কাদের জানালেন, আমাদের দেশের দর্শক ছবিতে নিজের দেশের জীবনঘনিষ্ঠ চিত্র দেখতে চান। আর তা যখন পান তখনই তারা তা সাদরে গ্রহণ করেন। এর প্রমাণ ‘হালদা’ ছবিটি। এ ছবিতে ‘নদী ও নারীর’ জীবনবোধ জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ছবিটির সাফল্যে সফল হয়েছেন এই ছবির নির্মাতা, শিল্পী আর কলাকুশলীরা। একই সঙ্গে দেশীয় চলচ্চিত্র ভাণ্ডারে যোগ হয়েছে নতুন একটি সার্থক ছবি। এমন ছবি পেলে সিনেমাহল ব্যবসায় আবার প্রাণের সঞ্চার হবে।

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সিনেমা হলে ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে মালেক আফসারী পরিচালিত ‘অন্তরজ্বালা’ ছবিটি। অভিনেতা জায়েদ খান প্রযোজিত প্রথম ছবি এটি। ১৭৫টি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটির গড় ওপেনিং কালেকশন ছিল শতকরা ৯০ ভাগ, যা বর্তমান সময়ে ঢাকাই ছবির মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন জোয়ার এনে দেওয়ার মতো একটি ঘটনা। ঢাকাসহ প্রতিটি সিনেমা হলে প্রথম শো থেকেই চলছে উপচেপড়া ভিড়। পূরবী সিনেমাহল কর্তৃপক্ষের কথায়, গত ঈদের পর এত বড়মাপের সেল আর কোনো ছবিতে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার প্রতিটি শো ছিল হাউসফুল। শনিবার বিজয় দিবসের জন্য ১টার শোতে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের ছবি। বাকি তিনটি শো ছিল ‘অন্তরজ্বালা’কে ঘিরে দর্শকপূর্ণ। সনি সিনেমা হলের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অপ্রত্যাশিত দর্শক আসছেন ছবিটি দেখতে। অনেক দিন পর সিনেমা হলে জোয়ার এলো। বর্তমান সময়ে দুই ঈদ ছাড়া সিনেমাহল প্রায় ফাঁকা থাকে। ‘অন্তরজ্বালা’ সেই চিত্র পাল্টে দিল। আসলেই অনেক দিন মনে রাখার মতো গল্পের একটি ছবি হয়েছে এটি। একদিকে মালেক আফসারীর মতো দক্ষ নির্মাতা অন্যদিকে জায়েদ আর পরীর মনকাড়া অভিনয় দর্শকদের বার বার হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে। আর এতেই সফল হয়েছে ‘অন্তরজ্বালা’সহ এ ছবির পুরো টিম। এমন ছবি পেলে সিনেমা হলের দুর্দশা অচিরেই কেটে যাবে। ঢাকার একমাত্র স্টার সিনেপ্লেক্স ছাড়া ২৭টি হল আর দেশজুড়ে ‘অন্তরজ্বালা’র একই সফলতার চিত্র চলছে। ছবির নির্মাতা মালেক আফসারী বলেন, ছবিতে আমি আমার দেশের একটি খণ্ড জীবনচিত্র তুলে ধরতে চেয়েছি। যে চিত্রে রয়েছে বাস্তবতার ছোঁয়া। যেখানে দর্শক খুঁজে পেয়েছেন তাদের পারিপার্শ্বিকতার ছবি। সঙ্গে সুস্থ বিনোদনের সব উপকরণ তো রয়েছেই। ছবিটি নিয়ে আমার প্রাণান্তকর পরিশ্রম সফল হয়েছে। দর্শক এবং ছবির পুরো টিমকে সাধুবাদ জানাই। ছবির প্রযোজক অভিনেতা জায়েদ খান বলেন, ছবিটি জনপ্রিয় নায়ক প্রয়াত মান্না ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্মাণ করেছি। মান্না ভাইয়ের একজন ভক্তের জীবনের করুণ কাহিনী ছবিতে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মাতা আফসারী ভাই। আর এমন বলিষ্ঠ নির্মাণ আর গল্পের ছবিটি পেয়ে দর্শকও এখন মুগ্ধতায় ভাসছে। এখানেই আমার প্রথম প্রযোজনার সার্থকতা। দর্শকের সঙ্গে যখন সিনেমা হলে বসে ছবিটি দেখছি তখন ছবির গল্পের নায়ক আলালের কষ্টে দর্শকের সঙ্গে আমিও কেঁদেছি। ছবি দেখে বের হওয়ার সময় দর্শকরা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। চলচ্চিত্র জীবনে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি বলতে আমার আর কিছু নেই। এ ছবিতে পরীমণি তার অভিনয় জীবনের সেরা কাজটি দিয়েছে। ছবিতে অন্য এক পরীকে দেখতে পেয়ে দর্শক মুগ্ধ।

এদিকে বিজয়ের মাসের শেষ শুক্রবার অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ‘গহীন বালুচর’ ছবিটি। এটিও জীবনবোধের গল্পে নির্মিত হয়েছে। তাই এ ছবিটিকে ঘিরেও বিপুল দর্শক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায় বিজয়ের মাসে ঢাকাই চলচ্চিত্রকে ঘিরে আবার আশার আলো জ্বলে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর