শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জয়ার সাতকাহন...

আলাউদ্দীন মাজিদ


জয়ার সাতকাহন...

জয়া আহসান। নিজ দেশে প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন। স্বমহিমায় জয় করেছেন দর্শকহূদয়। তারপর তার কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করা। ওপার বাংলাতেও জ্বলে উঠেছেন আপন দক্ষ কর্মযজ্ঞে। দেশে ‘গেরিলা’ আর ‘জিরো ডিগ্রী’ ছবি দুটো যখন তাকে জাতীয় সম্মান এনে দেয়, তখন তিনি পিছিয়ে নেই দাদাদের শহর কলকাতায়ও। টলিউডের ‘বিসর্জন’ ছবিতে অভিনয়ের করে অর্জনের ঝুলিতে পুরে নেন নামিদামি জি সিনে অ্যাওয়ার্ড। জয়া আমাদের বঙ্গললনা। এখন চলছে এই ললনার বিশ্ব জয়। শুক্রবার জয়া অভিনীত ‘পুত্র’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। ছবিতে জয়া অভিনয় করেছেন একজন স্কুল শিক্ষিকার ভূমিকায়। জয়া বলেন, ‘সমাজে অটিস্টিক শিশুদের বেড়ে ওঠা, ওই পরিবারের চ্যালেঞ্জ আর পারিপার্শ্বিক সমাজ ব্যবস্থায় একটি অটিস্টিক শিশুর জীবনযাপন কেমন হয়, সে কীভাবে বেড়ে ওঠে, সেসব দৃশ্যপট তুলে ধরা হয়েছে এ চলচ্চিত্রে।’ এ ছবিতেও জয়ার অভিনয়ে প্রশংসার ফুলঝুরি ঝরছে। জয়ার সাফল্যে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে আমাদের। কারণ ওই একটিই। জয়া এই বাংলার আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ে। এই বাংলাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেওয়ার মতো সক্ষমতা তার রয়েছে। বড় পর্দার আগে ছোট পর্দায় জয়া আহসানের দুর্দান্ত অভিনয়ের স্বাক্ষর আমরা দেখেছি নাটকে।

বিটিভির ‘এনেছি সূর্যের হাসি’ থেকে শুরু করে ‘শঙ্খবাস’, ‘লাবণ্যপ্রভা’ কিংবা ‘চৈতা পাগল’ অথবা ‘তারপরেও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’ থেকে আমাদের গল্প— সবখানেই জয়ার জয়-জয়কার। জয়ার দারুণ অভিনয় নিয়ে আলোচনা হয় নাট্যজগতের লোকজনের মধ্যেও। সেখান থেকেও তিনি পুরস্কার বগলদাবা করে নিয়ে যান ঘরে। সেলুলয়েডের রঙিন আলোয় তার অভিষেক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ব্যাচেলর’ ছবির মাধ্যমে।

জয়া আহসান নিজের ক্যারিয়ারে যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন ঢালিউডের বলিষ্ঠ একটি চলচ্চিত্রে। সব্যসাচী লেখক প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকের লেখা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘নিষিদ্ধ লোবান’ অবলম্বনে চিত্রিত ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রের বিলকিস চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর মর্যাদায় আসীন হন তিনি। মাঝে ‘ডুবসাঁতার’ আর ‘ফিরে এসো বেহুলা’ নামের দুটো সিনেমায় দেখা গিয়েছিল তাকে। ২০১১ সালে গেরিলাতে কাজ করে সবটুকু আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছিলেন জয়া। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলেছিলেন তিনি সেই ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে। বিলকিস বানু চরিত্রে সেই প্রতিবাদী গৃহবধূকে যারা দেখেছেন, কখনো তাদের ভোলার কথা নয় বঙ্গললনা জয়াকে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আরও দুবার জিতেছেন তিনি। চোরাবালি আর জিরো ডিগ্রী ছবিতে অভিনয় করে আবারও জাতীয় পুরস্কার অর্জনের ঝুলিতে পুরে নেওয়া। এ বিজয় অর্জন যেন শুধু জয়ার পক্ষেই সম্ভব। বাণিজ্যিক তকমার ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ও মাতালেন তিনি। এরপর ওপার বাংলায় তার মুগ্ধতার আলো ছড়ানো। ২০১৩ সালে কলকাতার বিখ্যাত পরিচালক অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের বড় পর্দায় আলো জ্বালানো শুরু জয়ার। এরপর থেকে নিয়মিত সেখানে কাজ করছেন এই গুণী শিল্পী। সৃজিত মুখার্জি, ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী, কৌশিক গাঙ্গুলীর মতো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে জয়ার। অরিন্দমের সঙ্গে তো একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। নন্দিতা-শিবপ্রসাদের প্রজেক্টেও রয়েছেন তিনি। কলকাতার শীর্ষ ১০ অভিনেত্রীর তালিকাতেও জয়ার অবস্থান একদম উপরের দিকে। বিসর্জন তো জিতে নিয়েছে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। এবার আপন দেশে জয়া আসছেন ‘বিউটি সার্কাস’ নিয়ে। মাহমুদ দিদার পরিচালিত এ ছবিটি সার্কাসকে উপজীব্য করে বেঁচে থাকা মানুষের গল্প নিয়ে তৈরি। এখানে জয়া ছবির মুখ্য চরিত্র ধারণ করতে গিয়ে কখনো হাতির পীঠে চড়েছেন, কখনোবা দড়ির উপর হাঁটতে গিয়ে নিজেই জীবনের ঝুঁকির পথে হেঁটেছেন। শিল্পী জয়ার সবচেয়ে বড় গুণ হলো সাহস। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন, নিজেকে ভাঙছেন, গড়ছেন— প্রতিটি ছবিকে নতুন আলোতে ভাসাচ্ছেন। এ বছর বাংলাদেশে জয়া অভিনীত নূরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’ এবং সরকারি অনুদান ও নিজের আংশিক প্রযোজনায় নির্মিত ‘দেবী’ হয়ে উঠবে এ প্রত্যয়ের প্রমাণ। কলকাতায় সৃজিত মুখার্জির ছবি ছাড়াও এ বছর তাকে দেখা যাবে বেশ কয়েকটি ছবিতে। এর মধ্যে সায়ন্তম মুখোপাধ্যায়ের ‘ঝরা পালক’ ছবিতে কবি জীবনানন্দ দাশের স্ত্রী ‘লাবণ্য’র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জয়া।

অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা ও শিশুদের প্রতি ভালো লাগা থেকে সম্প্রতি একটি স্কুলের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন সুঅভিনেত্রী জয়া আহসান।

ডুবসাঁতারের রেণু, গেরিলার বিলকিস, চোরাবালির নবনী, আবর্তের চারু, রাজকাহিনীর রুবিনা, ভালোবাসার শহরের অন্নপূর্ণা, বিসর্জনের পদ্মা এমন অনেক সফল চরিত্রে নিজের নামটি সফলতার রং তুলিতে এঁকে দুই বাংলার হূদয়ে কালজয়ী হয়ে আছেন জয়া। এ বিজয় অনন্তকালের। দিগ্বিজয়ী জয়ার কথায়—

‘যে কাজ মানুষকে জীবন সম্পর্কে ভাবায়, হাসি-কান্নার পাশাপাশি কিছু প্রশ্ন তুলে ধরে, তাতেই মানুষ অমরত্ব পায়। চিরদিনই এমন কাজ করতে চাই, যা দর্শকদের হাসাবে-কাঁদাবে এবং জীবন সম্পর্কে ভাবিয়ে তোলার পাশাপাশি রেখে যাবে কিছু প্রশ্ন...।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর