মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন বছরে কেমন চলচ্চিত্র চাই

নতুন বছরে কেমন চলচ্চিত্র চাই

গত বছর নানা অস্থিরতায় কেটেছে চলচ্চিত্র জগৎ। হামলা, মামলা, সংঘাত, বয়কটের মতো নানা নেতিবাচক ঘটনায় প্রায় অস্থিতিশীল ছিল  দেশি চলচ্চিত্র শিল্প। এসবের মধ্যেও হতেগোনা কয়েকটি চলচ্চিত্র দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। নতুন বছর চলচ্চিত্র জগেক কেমন দেখতে চান চলচ্চিত্রকার ও বোদ্ধারা, তাদের কথা তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আলো দেখতে পাচ্ছি না : ফারুক

নতুন বছরে চলচ্চিত্র জগেক অবশ্যই সুন্দর দেখতে চাই। তবে আমার মনে সংশয় রয়েছে। কারণ সবাই প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায়। একজন মানুষের পক্ষে সবকিছুর সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য তো মন্ত্রণালয় রয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে গেলে তারা পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আচরণ দেখে মনে হয় যেন তাদের নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে হবে। এভাবে চললে আশার আলো দেখব কীভাবে। আমাদের গল্প, নির্মাতা, শিল্পী, টেকনোলজি সবই আছে। নেই শুধু প্রদর্শনের ডিজিটাল প্রজেক্টর। জাজের যে প্রজেক্টর আছে তা কতটা যথাযথ জানি না। সরকার যদি প্রজেক্টরসহ সব ব্যবস্থা করে দেন তাহলে চলচ্চিত্র শিল্প পূর্ণতা পেত। ব্যাংক যদি অন্যসব ব্যবসার জন্য ঋণ দিতে পারে তাহলে সিনেমা হলের জন্য কেন নয়? সুদবিহীন ঋণ দিলে সিনেমা হলকে দর্শক উপযোগী করে সাজানো যাবে। সংস্কৃতি অঙ্গনকে আমলাদের ঝামেলামুক্ত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন কালচারাল রেভ্যুলেশনের ওপর আর কোনো রেভ্যুলেশন নেই। এ কথা সবাইকে শিরোধার্য করতে হবে।

 

সবাইকে এক জাহাজে উঠতে হবে : কাজী হায়াৎ

নতুন বছরে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে চলচ্চিত্রকারদের এক জাহাজে উঠতে হবে। ঐক্যের বিকল্প নেই। নানা বিভাজনের কারণে পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে না। ছবির অভাবে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিনেমা হল যদি না থাকে চলচ্চিত্র প্রদর্শন কোথায় হবে? এর ফলে চলচ্চিত্র শিল্প নিঃশেষ হয়ে যাবে এটিই বাস্তবতা। এ অচলাবস্থা কাটাতে সবাইকে সব বিভেদ ভুলে এক প্ল্যাটফর্মে উঠতে হবে। অবিলম্বে একটি সেমিনারের আয়োজন করতে হবে।

 

অবৈজ্ঞানিক চিন্তা পরিহার করতে হবে : রোবায়েত ফেরদৌস

নতুন বছরে চলচ্চিত্র শিল্পকে ইতিবাচক, উৎপাদনশীল এবং সৃষ্টিশীল দেখতে চাই। গত বছর ঢাকা অ্যাটাক, গহীন বালুচরসহ বেশকিছু ভালো ছবি আমরা পেয়েছি। এই পাওয়াকে অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য রুচিসম্মত প্রযোজক আর মেধাবী পরিচালক দরকার। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিনির্ভর ছবি নির্মাণ করতে হবে। আর বিশ্বের যত ভালো ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যদি ছোট পর্দায় বিদেশি ছবি দেখতে পারি তাহলে বড় পর্দায় প্রদর্শনে অসুবিধা কোথায়?  আমি উপমহাদেশীয় ছবি আমদানিতে প্রোটেকশনের বিরুদ্ধে। এসব পুরনো ধ্যান-ধারণা বাদ দেওয়া উচিত। সরকার দেশে অত্যাধুনিক সিনেমা হল নির্মাণে সহযোগিতা করবে। সিনেমা হল হচ্ছে গেটটুগেদারের অন্যতম স্থান। নতুন বছরে চলচ্চিত্রের জয়  হোক।

 

ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : শাকিব খান

এখন বিশ্বায়নের যুগ। আমরা যদি ঘরকুনো হয়ে বসে থাকি তাহলে সমৃদ্ধি আসবে না। দেশি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বিভেদ  ভুলে চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হবে। আমরা মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে প্রদর্শনের মাধ্যমে সফল হতে শুরু করেছি। এতে আমাদের দেশের পরিচিতি বহির্বিশ্বে বাড়ছে এবং সরকার রাজস্ব আয় করছে। এই ধারাকে ধরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের যেসব সমস্যা বা অপূর্ণতা রয়েছে সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে নিয়ে আমরা আবার গৌরবের পথে হাঁটতে পারব।

 

ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে : সুদীপ্ত দাস

নতুন বছরে আশাব্যঞ্জক কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। দুয়েক বছর পর দুয়েকটি ছবি যেমন আয়নাবাজি বা ঢাকা অ্যাটাক সফল হওয়ার মানে এই নয় যে, চলচ্চিত্রশিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সারা বছর লোকসান গোনে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। চলচ্চিত্র রপ্তানির বিপরীতে আমদানির ক্ষেত্রে অহেতুক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করে আশার আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। যৌথ প্রযোজনার ছবি ব্যবসা করতে দেখে একটি মহল নিয়ম না মানার অভিযোগ এনে তাও স্থবির করে দিয়েছে। এতে সামগ্রিক পরিস্থিতি হয়ে পড়েছে হতাশাব্যঞ্জক। এভাবে সিনেমা হলগুলোকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সীমিত আকারে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

প্রযোজক সমিতির নির্বাচন দিতে হবে : খোরশেদ আলম খসরু

গত বছর ৬৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ৩টি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছে। তার মধ্যে আবার দুটি যৌথ প্রযোজনার। মানে দেশি সফল ছবি মাত্র একটি। এটি হতাশাজনক। এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। একটি হল জরুরি ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মানসম্মত ছবি আমদানি করে সিনেমা হল বাঁচাতে হবে। দ্বিতীয়ত, চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির নির্বাচন দিতে হবে। এই সমিতি হলো চলচ্চিত্রের মাদার অর্গানাইজেশন। নির্বাচিত প্রযোজক সমিতি থাকলে সব বৈরিতা দূর হয়ে যাবে।

 

মানসম্মত ছবি চাই : নুসরাত ফারিয়া

চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে অবশ্যই মানসম্মত ছবি প্রয়োজন। মেধাবী নির্মাতা আর সময় উপযোগী গল্পই হলো মানসম্মত ছবির প্রধান উপকরণ। বছরে দুয়েকটি ভালো ছবি দিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। নতুন বছরে সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে ভালো ছবি নির্মাণে এগিয়ে আসে আর সিনেমা হলগুলোর পরিবেশ উন্নত করা যায়, তাহলে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরবেই।

সর্বশেষ খবর