শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কেমন মঞ্চনাটক চাই

কেমন মঞ্চনাটক চাই

স্বাধীনতার পর দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে আমরা কিছু শিল্পসমৃদ্ধ প্রযোজনা পেলেও পরবর্তী সময় সেই-ধারা বজায় থাকেনি। একাধিক খ্যাতিমান নাট্যকার, নির্দেশক আমাদের মঞ্চনাটকের চর্চাকে সমৃদ্ধ করেছেন। পরবর্তীকালে আমরা পেয়েছি তারুণ্যদীপ্ত কিছু নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা-অভিনেত্রী। আমাদের মঞ্চনাটকে গুণগত পরিবর্তন এলেও রয়েছে কিছু সংকট। নতুন বছরে আমরা কেমন মঞ্চনাটক চাই তা জানতে কিছু গুণী মঞ্চকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন— পান্থ আফজাল

 

আলী যাকের (নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়) : মঞ্চনাটক হচ্ছে সংস্কৃৃতির বিকাশ। এটা নিজের থেকেই হয়। আবার এটা নির্ভর করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলকে মাথায় রেখে। ২০১৮ সাল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ সময়। ১৬ ফেব্রুয়ারি আমরা নাগরিকের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন করব। সেই সঙ্গে ১৯৭৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম দর্শনের বিনিময়ে মঞ্চনাটক প্রদর্শনীর ৪৫ বছরও উদযাপন করা হবে। সবকিছুর পরিকল্পনা হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত ৪০-৪২টি নাটকের ৫ হাজারের মতো শো করেছি। এর মধ্য থেকে ৯টি ভালো নাটক বেছে একটি কোলাজ তৈরি করা হচ্ছে। পুরনো নাটকের পাশাপাশি নতুন কিছু নাটকও মঞ্চে আসবে। আর এ বছর নতুন দলগুলো নতুন কিছু ভালো নাটক আনবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

মামুনুর রশীদ (আরণ্যক নাট্যদল) : নতুন নতুন মঞ্চনাটক চাই; তার চেয়ে বেশি বেশি চাই মঞ্চ। আমাদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ ঢাকা শহরের একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি, বনানী গুলশান কিংবা নারায়ণগঞ্জে তেমন মঞ্চ নেই, যেখানে কোনো দল নাটকের শো করতে পারে। কিছুদিন আগে বিমানবন্দরের রাস্তায় জ্যামে ৭ ঘণ্টার মতো সবাই আটকে ছিল। এসব জায়গা থেকে শিল্পকলায় আসতে-যেতে তো ৬ ঘণ্টার বেশি সময় চলে যায়। বড় দল থেকে ছোট দলের কিন্তু সমস্যার অন্ত নেই! সারা মাসে বড় দলগুলোই মাত্র ২টা ডেট পায়। একটি দলকে মাসে মিনিমাম ৮টা শো করতে দেওয়া উচিত। মঞ্চে অনেক ভালো ভালো নাটক নামলেও মঞ্চের অভাবে করতে পারছে না।

 

শহীদুজ্জামান সেলিম (ঢাকা থিয়েটার) : মঞ্চে বেশি বেশি কাজ  হোক। কাজ হলেই ভালো নির্দেশক, নাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী বাড়বে। প্রচুর ভালো নাটক চাই এই সময়ে। অন্যদিকে এই নাটক দেখার জন্য চাই দর্শক। আমার মতে, এ ব্যাপারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা মুখ্য নয়, দরকার সবার মিলিত প্রচেষ্টা।

 

আহমেদ গিয়াস (সুবচন নাট্য সংসদ) : নতুন বছরে সময়ের সঙ্গে মিল রেখে এবং দর্শক যে ধরনের নাটক চায় তাই আমার চাওয়া। চাই মানসম্মত নাটক। অন্যদিকে আমাদের মঞ্চের অভাব বেশি। ঢাকার ৩ কোটি মানুষের জন্য একটা জায়গায় মঞ্চ! শিল্প-সাহিত্য চর্চার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জোনভিত্তিক মঞ্চ দরকার। শহরে অন্তত চারটি স্পটে মঞ্চ থাকা জরুরি।

 

শতাব্দী ওয়াদুদ (প্রাচ্যনাট) : অনেক এক্সপেরিমেন্টাল কাজ চাই; যেন দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায়। মৌলিক কাজের পাশাপাশি দরকার সাহিত্যনির্ভর বেশি বেশি কাজ। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে দরকার সবার সম্মিলিত চেষ্টা ও পরিকল্পনা। তবে প্রথমে যা প্রয়োজন, শিল্পকলার খোলা জায়গায় শো করার সময় বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রাখা। শোর সময় এই নাচ-গানের অনুষ্ঠানে দর্শক চলে যায়। এই দর্শকের অন্তত ১০% এলেই কিন্তু আমাদের শো হাউসফুল হয়। তাই এদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

 

মুক্তনীল (বাতিঘর থিয়েটার) : সমসাময়িক নাটক চাই। সময়ের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাটক দরকার। জাতিসত্তার যত আগ্রাসন আছে তার আলোকে আরও নতুন নতুন মঞ্চনাটক হওয়া উচিত-যেটি প্রথম থেকেই বাতিঘর থিয়েটার করে আসছে। শিল্পকলা না হলে দর্শক তৈরি হবে না— এই ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আস্যতে হবে। আমরা আশাবাদীদের দলে। রাষ্ট্র শিল্প ও সংস্কৃতির্চচার জন্য অনেক কিছুই করেছে। কিন্তু আমরাই সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। দর্শক বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।

 

মো. ফখরুজ্জামান চৌধুরী (নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়) : নতুন বছরে প্রতি শো-ই হাউসফুল দেখতে চাই। আমাদের কিন্তু হলের অভাব নেই। প্রচুর অভিনেতা আছেন কিন্তু দর্শক নেই। দর্শক কীভাবে ফিরে আসতে পারে সে বিষয়ে ভাবতে হবে। আমাদের সব দলের মঞ্চনাটক যেন দর্শকপ্রিয়তা পায় সেটাই আমার প্রত্যাশা।

 

সর্বশেষ খবর