সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলা ছবি জয় করছে বিশ্ব

আলাউদ্দীন মাজিদ

বাংলা ছবি জয় করছে বিশ্ব

বাংলাদেশি ছবির শুটিং মানেই এখন বিদেশে উড়াল দেওয়া। গল্প আর দৃশ্যের প্রয়োজন হোক বা না হোক বিদেশে ছবির দৃশ্য ধারণ করলেই যেন ছবিটি দর্শক লুফে নেবে, এমন ধারণা অনেক নির্মাতার। কিন্তু পরবর্তীতে ছবির ব্যর্থতা এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিদেশে চিত্রায়িত ছবি দেখে গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যতার কারণে দর্শক মুগ্ধতায় ভাসে। বিদেশে দেশি ছবির চিত্রায়ণ নিয়ে নানা কারণে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশি ছবি হিসেবে সর্বপ্রথম বিদেশে শুটিং হয় ১৯৮২ সালে ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’ ছবিটির। সিঙ্গাপুরে শুটিং হওয়া এ ছবিটির নামই বলে দেয় বিদেশে ছবিটির চিত্রায়ণ যথাযথ। যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ আরম্ভ হলে দর্শকরা ধীরে ধীরে বিদেশি লোকেশনে আসক্ত হয়ে পড়েন। এহতেশামের যৌথ প্রযোজনার ‘দূরদেশ’ ছবিটির অংশীদার ভারতের লোকেশনের পাশাপাশি চমক হয়ে আসে আরেক অংশীদার কানাডার লোকেশন। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ছবির শুটিং বিদেশে করে থাকে জাজ মাল্টিমিডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শুটিং হয় ১৯৯২ সালে মহসিন পরিচালিত ‘লাভ ইন আমেরিকা’র। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের যৌথ প্রযোজনায় চিত্রনায়িকা শাবানার এসএস প্রোডাকশন্স নির্মাণ করেন ‘ঝড়তুফান’। নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত নাদিম-শাবানা জুটির শেষ ছবি ছিল এটি। যুক্তরাজ্যে প্রথম শুটিং হয় ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের যৌথ ছবি আফতাব খান টুলু পরিচালিত-প্রযোজিত ‘দুনিয়া’। চিত্রনায়িকা রোজিনা তার প্রযোজিত ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নাদিমের বিপরীতে।  মাহিয়া মাহি-অঙ্কুশ অভিনীত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘রোমিও জুলিয়েটে’র শুটিং হয়েছিল ইংল্যান্ডে। একই প্রযোজকের ছবি ‘আশিকী’, ‘শিকারী’, ‘বাদশা দ্য ডন’-এর শুটিং হয়েছিল দেশটিতে। তানিয়া আহমেদ পরিচালিত ‘গুড মর্নিং লন্ডন’ ছবির নামের সার্থকতা রাখতে শুটিং হয়েছিল লন্ডনে। পরে ছবিটির ইংরেজি নাম বদলে ‘এ কেমন ভালোবাসা’ রাখা হয়েছিল। অতিসম্প্রতি মাহি ও সোহম যৌথ প্রযোজনার একটি ছবির শুটিং করলেন লন্ডনে। ছবিটির নাম রাখা হয়েছে ‘তুই শুধু আমার’। অসংখ্য ঢাকাই ছবির শুটিং হয়েছে এবং হচ্ছে থাইল্যান্ডে। এখন সেখানে ‘আমি নেতা হবো’ ছবির শুটিং করছেন উত্তম আকাশ নায়ক শাকিব খানকে নিয়ে। নেপাল প্রথম শুটিং হয় ১৯৮৬ সালে নির্মিত ইকরাম বিজু পরিচালনায় ‘হিমালয়ের বুকে’ ছবিটির। ১৯৯১ সালে নির্মিত শফি বিক্রমপুরীর পরিচালনায় ‘লেডি কমান্ডো’ ইত্যাদি বাংলাদেশ-নেপালের যৌথ বিনিয়োগের ছবি। এসব ছবিগুলোতে নেপালের লোকেশন পাওয়া যায়। আজিজুর রহমান বুলির ‘নেপালি মেয়ে’ ছবিতেও নামের সার্থকতা রাখতে নেপালেই সিংহ ভাগ শুটিং হয়েছিল। শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘দোলনা’র শুটিং হয়েছিল নেপালের পাদদেশে। রাজু চৌধুরী পরিচালিত ‘গ্যাংস্টার’ (২০০৪), আজাদী হাসনাত ফিরোজ পরিচালিত ‘তুমি আমার মনের মানুষ’,  বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত ‘রাজনীতি’, অনন্য মামুনের ‘আমি তোমার হতে চাই’ এবং ‘বন্ধনে’, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালো থাকো’র গানের শুটিং হয় নেপালে।

১৯৭২ সালে ভারতে প্রথম যৌথ প্রযোজনার রাজেন তরফদারের পালংক, ১৯৮৮ সালে শিবলী সাদিকের ‘ভেজা চোখ’,

২০০০ সালে ‘মনের মাঝে তুমি’র আগে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’সহ এখনো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশি ছবির শুটিং হচ্ছে। সম্প্রতি রাশেদ রাহার ‘নোলক’ ছবির শুটিং হয়ে গেল হায়দরাবাদে। শ্রীলঙ্কায় প্রথম শুটিং হয় ১৯৮৫ সালে মধুমিতা মুভিজের ছবি ‘মিস লঙ্কা’ ছবির। ১৯৮৮ সালের ‘বলবান’, ১৯৮৯ সালে ‘প্রতারক’ ছবিতে। ২০১৫ সালে শাহাদাত হোসেন লিটন পরিচালিত ‘তুমি আমার প্রিয়তমা’ ছবির শুটিং হয় শ্রীলঙ্কায়। অস্ট্রেলিয়ায় আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ আর জাহিদ রেজওয়ানের ‘মৃত্যুপুরী’ ছবির শুটিং হলো। ১৯৮৯ সালে তিনটি যৌথ প্রযোজনার ছবির মধ্যে অন্যতম পারভেজ মালিক ও জিয়াউদ্দিন আসলাম পরিচালিত ‘গুনাহ’। এ ছবির শুটিং হয়েছিল তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। আশির দশকে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়েছিল। শক্তি, মিস লঙ্কা, হিমালয়ের বুকে, আপোস, দুনিয়া, বাপের বেটা, বলবান, গুনাহ, জীবন পরীক্ষা, লেডি কমান্ডো, ঝড়তুফান ইত্যদি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানেই এসব ছবির শুটিং হয়। ২০১১ সালে নির্মিত স্বপন আহমেদ পরিচালিত ‘লাল টিপ’ ছবির শুটিং হয়েছিল ফ্রান্সে। এই পরিচালকের পরের ছবি ‘পরবাসিনী’র শুটিংও ফ্রান্সে করা হয়। ২০০৮ সালে নির্মিত নারগিস আকতার পরিচালিত ‘মেঘের কোলে রোদ’ ছবির শুটিং করেছিলেন মালয়েশিয়ায়। এ ছবিটির আগে যৌথ প্রয়াসের ছবি ‘মনের মাঝে তুমি’র গানের শুটিং হয়েছিল মালয়েশিয়ায়। প্রযোজক অনন্ত জলিল ‘দ্য স্পিড’ ছবির শুটিং করেছিলেন মালয়েশিয়ায়। ২০১৩ সালে নির্মিত সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ ছবির শুটিং হয়েছিল সেখানে। একই নির্মাতা ‘ফাঁদ’ ছবিরও শুটিং করেন সেখানে। যে সিঙ্গাপুরে সূচনা হয়েছিল বিদেশে দেশি ছবির শুটিং, সিঙ্গাপুরে ২০১৩ সালে রকিবুল আলম রকিব নির্মাণ করেন ‘প্রেমিক নাম্বার ওয়ান’।

সিঙ্গাপুরে শুটিং ব্যয়বহুল বলে সেখানে কোনো শুটিং ইউনিট খুব একটা যায় না। বাংলাদেশি ছবির বিদেশি লোকেশনে শেষ সংযোজন সুইজারল্যান্ড। ইউরোপের অপরূপ সৌন্দর্যের এই দেশটিতে গত বছর শাকিব-ববুলী অভিনীত নতুন ছবি ‘রংবাজে’র শুটিং হলো।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর