সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আলবিদা শ্রীদেবী...

আলবিদা শ্রীদেবী...

বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীদেবীর অকাল এবং অনাকাঙ্ক্ষিত প্রয়াণ হলো। তার অসময়ের এই চিরবিদায়ে শুধু বলিউড বা ভারত নয়, সারা দুনিয়ার মিডিয়াজগৎসহ সর্বত্র নেমে এসেছে নিকষ কালো শোকের অন্ধকার। এই নজরকাড়া চিরসুন্দরী অভিনেত্রীর আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

অন্ধকারে ডুবে গেল বলিউড

বলিউডের সবচেয়ে সুশ্রী আর খ্যাতিমান অভিনেত্রী এবং প্রথম নারী সুপারস্টার  শ্রীদেবী চিরবিদায় নিয়েছেন। এই বিদায় অনাকাঙ্ক্ষিত। ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি নক্ষত্রের পতন ঘটল। যে উজ্জ্বল তারাটি আর বলিউডপাড়ায় কখনো আলো ছড়াবে না। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুবাইয়ে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। শ্রীদেবীর মৃত্যুর সংবাদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার স্বামীর ছোট ভাই সঞ্জয় কাপুর। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দুবাই আসেন শ্রীদেবী। তার সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও ছোট মেয়ে। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন শ্রীদেবী। চিকিৎসকরা জানান, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যৃ হয়েছে তার। চিত্তাকর্ষক চোখ, মায়াবী হাসি, রুপালি পর্দায় তুখোড় অভিনয়দক্ষতা সহজেই শ্রীদেবীকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। হিন্দি ছবির পাশাপাশি তামিল, তেলেগু ও মালয়ালম ছবিতেও সমানতালে কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে।

 

অজানা শ্রীদেবী...

জন্ম : ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট।

নাম :  শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়াপ্পন। মাতৃভাষা ছিল তামিল।

বাবা, মা : শ্রীদেবীর বাবা আয়াপ্পন একজন তামিল আইনজীবী এবং মা রাজশ্রী ছিলেন তেলেগু।

অভিনয়ে অভিষেক : মাত্র চার বছর বয়সে অভিনয় জগতে পা রাখেন। সাল ১৯৬৭।

প্লেব্যাক : সদমা, চাঁদনিসহ আরও বেশ কিছু ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেছিলেন।

 

অন্তরালের যত ঘটনা

১. ‘চালবাজ’ ছবির ‘না জানে কাঁহা সে আয়ি হ্যায়’ গানটির শুটিংয়ের সময় তার ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ছিল।

২. ১৩ বছর বয়সে ‘মনদ্রি মুদিচু’ ছবিতে শ্রীদেবী রজনীকান্তের সত্মার ভূমিকায় অভিনয় করেন।

৩. স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘জুরাসিক পার্ক’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

৪. আব্বাস মাস্তানের সুপারহিট ছবি ‘বাজিগর’ ছবিতে তাকেই প্রধান নায়িকা হিসেবে পছন্দ করা হয়েছিল।

৫. মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে শ্রীদেবীর  গোপনে বিয়ে হয়েছিল।  যদিও সে বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। পরবর্তীতে তিনি পরিচালক-প্রযোজক বনি কাপুরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন।

যেভাবে বলিউড সুপারস্টার হয়ে উঠেছিলেন শ্রীদেবী

১৯৭৮ সালে ‘সদমা’ ছবির মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল মায়াবী চোখ আর মিষ্টি হাসির নায়িকা শ্রীদেবীর। শুধু হিন্দি নয়, তামিল তেলেগুসহ ভারতীয় নানা ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তরুণ থেকে বৃদ্ধের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। এভাবেই ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রথম নারী সুপারস্টারে পরিণত হন তিনি। প্রায় পাঁচ দশকে অভিনয় করেছিলেন দেড়শ সিনেমায়।

যার মধ্যে রয়েছে বক্স অফিস কাঁপানো মিস্টার ইন্ডিয়া, চাঁদনী, চালবাজ, আখেরি রাস্তা, খুদা গাওয়া, তোফা, হিম্মতওয়ালী, ইনকিলাব, সদমাসহ জনপ্রিয় সব সিনেমা। তার বিখ্যাত সিনেমা মিস্টার ইন্ডিয়া। বহুমাত্রিক এই অভিনেত্রী মাঝে একবার অভিনয় থেকে বিরতিও নিয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে বনি কাপুর প্রযোজিত ‘জুদাই’ ছবিটি নির্মাণের সময় বিবাহিত বনির সঙ্গে এরপর বিয়ে। পুনরায় ফেরেন ২০১২ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবির মাধ্যমে। ২০১৩ সালে তাকে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করে ভারত সরকার।

 

শ্রীদেবীর প্রয়াণে শোকবার্তা

বলিউডের সবচেয়ে সুশ্রী ও অন্যতম দক্ষ অভিনেত্রী শ্রীদেবীর অকাল প্রয়াণের কথা যেমন কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না তেমনি তার এই মৃত্যু কেউ মেনেও নিতে পারছেন না। তারপরও চিরসত্য এই মৃত্যুর খবরে শোকে স্তব্ধ বলিউড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে অনেকেই শোকবার্তা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি : হঠাৎ শ্রীদেবীজির এই অকাল মৃত্যুর খবর পেলাম। চলচ্চিত্র জগতে একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ : শ্রীদেবীজির চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের। তার ফ্যানদের জন্য এটা খুবই খারাপ খবর। বহু অভিনেতা, অভিনেত্রীর কাছে তিনি মাইলস্টোন।

অমিতাভ বচ্চন : জানি না কেন এত অসহায় লাগছে।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া : আমার বলার কোনো ভাষা নেই। শ্রীদেবীকে যারা ভালোবাসতেন, সবার প্রতি সমবেদনা। আজ একটা কালো দিন।

প্রীতি জিনতা : আমার অলটাইম ফেবারিট শ্রীদেবী নেই শুনে আমি শকড। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

 

জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ : শ্রীদেবী, আমরা একজন আইকনকে এত তাড়াতাড়ি হারালাম!

আদনান সামি : শেষ রাতে শ্রীদেবীর খবরটা শুনে আমি আর কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। অসাধারণ প্রতিভা। রেস্ট ইন পিস।

সুস্মিতা সেন : আমি শুনলাম শ্রীদেবী ম্যাম চলে গেছেন। কান্না থামাতে পারছি না।

এ আর রহমান : আমি মর্মাহত। তার পরিবারের সবার প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

আনুশকা শর্মা : আমি  শোকাহত। কী বলব, কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

রজনীকান্ত : আমি আমার একজন বন্ধুকে হারালাম। ইন্ডাস্ট্রি হারাল একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে।

শ্রেয়া ঘোষাল : শ্রীদেবীজি নেই এটা অবিশ্বাস্য। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

রাহাত ফতে আলি খান : বনি কাপুর ও তার পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।

কাজল : আমি শোকাহত। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। তার কাছ থেকে অনেক শিখেছি।

 

অভিনয় দেখে কেঁদেছিলেন জাপানি প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী

দীর্ঘ বিরতির পর ২০১২ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবি দিয়ে বলিউডে ফিরেছিলেন অভিনেত্রী শ্রীদেবী। এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি ফিল্ম ফেয়ার ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ছবিটি ভারতের মতো জাপানেও খুব প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি জাপানের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর চোখে পানি চলে আসে ছবিটি দেখে।

 

শ্রীদেবীর সেরা দুই নায়ক

পাঁচ দশকের অভিনয় জীবনে শ্রীদেবী অনেক অভিনেতার সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন। তবে তার কথায় তার সেরা জুটি ছিলেন অমিতাভ বচ্চন ও জিতেন্দ্র। বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে মাত্র চারটি ছবিতে অভিনয় করেন শ্রীদেবী। অন্যদিকে শ্রীদেবী সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন জিতেন্দ্রর সঙ্গে।

 

একনজরে শ্রীদেবী...

১৯৬৭ সাল। শ্রীদেবীর বয়স সবে ৪। যে বয়সে একটা শিশু ঠিকমতো কথা বলাও শেখে না, সেই বয়স থেকেই তার অভিনয় জীবন শুরু। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন তামিল, তেলেগু, মালয়ালম, হিন্দি ও কন্নড় ভাষার ছবিতে। শ্রীদেবী অভিনীত প্রথম ছবি ছিল ‘এম.এ’। শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে তার অভিষেক হয় ১৯৭৫ সালে ‘জুলি’ ছবিতে। পরের বছরই মাত্র ১৩ বছর বয়সে তামিল ছবি ‘মনদ্রি মুদিচু’ ছবিতে তিনি নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। নায়িকা শ্রীদেবীর বলিউডে অভিষেক হয় ১৯৭৮ সালে ‘সোলভা সাওয়ান’ ছবির মাধ্যমে। দর্শকপ্রিয়তা পান ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হিম্মতওয়ালা’ ছবির মাধ্যমে। টানা অভিনয় করেছেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। ৮বার ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডেও ভূষিত হন তিনি। অভিনয় দিয়ে নিজেকে তিনি তখন নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। যেখানে এর আগে  কোনো বলিউড অভিনেত্রী পৌঁছতে পারেননি। তার সময়ে অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র ও অনীল কাপুরের মতো সুপারস্টার নায়কদের ছড়াছড়ি থাকলেও, ছিলেন কোনো নারী সুপারস্টার। যার কারণে, শ্রীদেবীকেই বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর ১৯৯৭ সাল থেকে দীর্ঘ ১৫ বছর বিভিন্ন কারণে অভিনয় থেকে দূরে থাকেন নায়িকা। পরে ২০১২ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবির মাধ্যমে আবারও কামব্যাক করেন তিনি। ২০১৩ সালে ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ লাভ করেন শ্রীদেবী। শুধু তাই নয়, ওই একই বছর ভারতীয় সিনেমার শত বছর পূর্তি দিবসে সিএনএন ও আইবিএনের বিচারে তিনি শতাব্দীর সেরা অভিনেত্রী নির্বাচিত হন। গত বছর তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি ‘মম’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সুপারস্টার শ্রীদেবীর জন্ম হয়েছিল ১৯৬৩ সালে তামিলনাড়ুতে। ১৯৮৫ সালে শ্রীদেবী ভালোবেসে প্রথম বিয়ে করেছিলেন হিন্দি ও কলকাতার বাংলা ছবির অন্যতম সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীতে। ১৯৮৪ সালে রাকেশ রোশন পরিচালিত ‘জাগ উঠা ইনসান’ ছবির সেটে একে অন্যের প্রেমে পড়ে যান তারা। পরের বছরই গোপনে বিয়ে সেরে ফেলেন।  সে সময় একটা ফান ম্যাগাজিন তাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট প্রকাশ করে দিলে প্রকাশ্যে আসে সুপারস্টার এ জুটির বিয়ের খবরও। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি তাদের  সে সংসার। ১৯৮৮ সালে ডিভোর্স হয়ে যায় মিঠুন ও শ্রীদেবীর। আট বছর একা থাকার পর ১৯৯৭ সালে ভারতের বিখ্যাত প্রযোজক বনি কাপুরকে বিয়ে করেন শ্রীদেবী। জাহ্নবী কাপুর ও খুশি কাপুর নামের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে নায়িকার। দীর্ঘ ২১টা বছর বেশ সুখেই কাটিয়েছেন বলিউডের বিখ্যাত এই অভিনেত্রী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর