শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

যে কারণে ব্যর্থ কলকাতার ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

যে কারণে ব্যর্থ কলকাতার ছবি

এপার বাংলায় ব্যর্থ কলকাতার ছবি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘জিও পাগলা’ আর ২৬ জানুয়ারি ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’। দুটো ছবিই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে চরম হতাশ ছবি আমদানিকারক ও প্রদর্শকরা। আর এই ব্যর্থতার জন্য সরকারি নিয়মনীতিকে দুষলেন আমদানিকারকরা।

এ দেশে কলকাতার ছবির ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা চলছে ২০১২ সাল থেকে। বাংলাদেশে ছবি নির্মাণ কমে যাওয়া এবং মানসম্মত ছবি নির্মাণ না হওয়ায় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি-২০১০ সালে ভারতীয় ছবি আমদানির উদ্যোগ নেয়। এতে হিন্দি এবং বাংলা দুই ভাষার ভারতীয় ছবি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়। ২০১২ সালে প্রথম কলকাতার বাংলা ছবি হিসেবে আমদানি করা হয় জোর, বদলা এবং সংগ্রাম। প্রদর্শক সমিতির দেওয়া তথ্য মতে এ পর্যন্ত প্রায় দুই ডজন কলকাতার বাংলা ছবি বাংলাদেশের সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়েছে। প্রদর্শকরা বলছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, একটি ছবিও সাফল্য পায়নি। বাংলাদেশে কলকাতার ছবির কেন এই  ব্যর্থতা? এজন্য আমদানিকারকরা সরকারের নীতিকে হয়রানিমূলক আখ্যায়িত করে এই ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি নিয়মনীতির পরিবর্তন চাইছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক জিৎ। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দুই বাংলায় একসঙ্গে ছবি মুক্তি পাচ্ছে না বলেই এই ব্যর্থতা। দুই দেশের সরকার সংশ্লিষ্ট  নিয়মনীতিকে কেন সহায়ক করছে না বুঝতে পারছি না। উভয় দেশের সরকারের কাছে  আমার অনুরোধ, বিশ্বে বাংলা ছবির সাফল্যের স্বার্থে এ ক্ষেত্রে থাকা নিয়মকানুনকে সহজ করে দিন। না হলে বাংলা ছবির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও কলকাতার ছবির অন্যতম আমদানিকারক ইফতেখার নওশাদ বলেন, এই ব্যর্থতার কারণ হলো প্রথমত যেসব ছবি আমদানি করা হয় তার সিলেকশন সঠিক নয়। যাচ্ছেতাই ছবি আনা হচ্ছে। আর কলকাতার ছবিকে এ দেশে সফল করতে হলে দুদেশে একসঙ্গে ছবিটি মুক্তি দিতে হবে। কলকাতার ছবি আমদানির ক্ষেত্রে সরকারি যে নিয়মনীতি রয়েছে তা অনুসরণ করতে গিয়ে এই আমদানি দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ে। এতে কলকাতায় ছবিটি মুক্তির পর কয়েক মাস পর সেটি এখানে মুক্তি পায়। এ সময়ের মধ্যে ছবিটি কলকাতার টিভি চ্যানেল, ইউটিউব, সিডি, ডিভিডিতে চলে আসে, তা ছাড়া পাইরেসিও হয়ে যায়। এতে করে দেখা ছবিটি দর্শক আবার সিনেমা হলে গিয়ে দেখবে কেন? চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, প্রথমত কলকাতার ছবি বেশির ভাগই তামিল তেলেগু ছবির কপি। যা সেখানেই চলে না। দ্বিতীয়ত, কলকাতায় মৌলিক গল্পের যে ছবি নির্মাণ হয়, অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ছবির ধারাবহিকতায় বর্তমানে গৌতম ঘোষ, সৃজিত মুখার্জিসহ এই ধারার অন্য নির্মাতাদের ভিন্নধারার ছবিগুলো মূলত সিনেপ্লেক্সেই চলে। কলকাতায় প্রায় ২০টি সিনেপ্লেক্স রয়েছে। সেখানে এসব ছবি চালিয়ে কমপক্ষে নির্মাণ ব্যয় তুলে আনা যায়। এসব ছবির দর্শকও আমাদের দেশে সিনেপ্লেক্সভিত্তিক। এ ধরনের ছবি এনে হাতে গোনা সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শন করে ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশে সিনেপ্লেক্সের বাইরে ঢাকার মধুমিতা, বলাকা, শ্যামলী সিনেমা হল ছাড়া এসব ভিন্নধর্মী ছবি দেখতে সিনেমা হলে দর্শক আসেন না। তৃতীয়ত, কলকাতায় ছবি মুক্তির পর রপ্তানির বিনিময়ে আমদানি করতে গেলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্রের প্রয়োজন হয়। এরপর এলসির মাধ্যমে আমদানি, বিমানবন্দর ও সেন্সর ছাড় করাতে গিয়ে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ততদিনে ছবিটি কলকাতায় মুক্তি পেয়ে টেলিভিশনে প্রদর্শন আর ইউটিউব এবং সিডি-ডিভিডিতে চলে আসে। একই সঙ্গে পাইরেসিও হয়ে যায়। ফলে এখানকার দর্শক স্থানীয় সিনেমা হলে মুক্তির আগেই ছবিটি দেখে ফেলে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি দেখতে তারা আর সিনেমা হলে যায় না। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে আমদানিকারক ও সিনেমা হল মালিকরা। এ অবস্থার উত্তরণে বিনিময়ের আওতায় ছবি আমদানির ক্ষেত্রে সরকার যে নতুন কঠোর শর্ত আরোপ করেছে তা সহজ করতে হবে। রপ্তানির বিপরীতে আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সুদীপ্ত কুমার দাশ আরও বলেন, মূলত আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি ৪৯(গ) ধারায় যুক্ত করেন। কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা নতুন শর্ত আরোপ করে এই উদ্দেশ্যকে বানচাল করে দিয়েছে। দেশীয় ছবির স্বার্থ রক্ষার নামে এরা মূলত ভারতবিরোধী ভূমিকা পালন করছে। এসব অযাচিত বাধা দূর করা না গেলে প্রদর্শন ব্যবসায়  চূড়ান্ত ধস নেমে আসবে। তখন এসব বিরোধিতাকারীকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, বাংলাদেশে কলকাতার ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য পেতে দুদেশে একসঙ্গে ছবি মুক্তি দেওয়ার বিকল্প নেই। আর যৌথ প্রযোজনার বর্তমান যে নীতিমালা প্রণীত হয়েছে তাও ব্যবসায়িক সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক।

সরকারি প্রতিকূল নিয়মনীতির কারণে লোকসান গুনে ছবি নির্মাণ বা আমদানি কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন আমদানিকারকরা যদি তাদের সমস্যার কথা যৌক্তিকভাবে তুলে ধরে আবেদন করে তাহলে অবশ্যই তা বিবেচনা করা হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর