বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদার ইন্ডিয়া’র অজানা যত কথা

মাদার ইন্ডিয়া’র অজানা যত কথা

নার্গিস

হিন্দি ছবির শতবর্ষের মাইলফলক খ্যাত ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিটির মুক্তির ৬০ বছর পূর্ণ হলো চলতি বছর। এখনো সমান জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে এই নারীবাদী ছবিটি। ছবিটির নানা অজানা কথা নতুন করে তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

বড় পর্দায় ‘মাদার ইন্ডিয়া’

‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৭ সালের ২৫ অক্টোবর। অ্যাপিকধর্মী এই ছবিতে অভিনয় করেন নার্গিস, রাজকুমার, সুনীল দত্ত ও রাজেন্দ্র কুমার। ‘বলিউড-মোগল’ মেহবুব খানের এই ছবি শুধু নার্গিসের ক্যারিয়ারে সর্বশ্রেষ্ঠ কাজই নয়, হিন্দি ছবির শতবর্ষের ইতিহাসেরও এক মাইলফলক। ছবিটি ইতিহাস সৃষ্টি করে। নার্গিসের জীবনে এটি বয়ে আনে প্রভূত সম্মান ও সাফল্য। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক  কোনো পুরস্কারই প্রায় বাদ থাকে না। সুনীল দত্ত, রাজকুমার ও রাজেন্দ্র কুমারের ক্যারিয়ারও গতি পায় এই ছবির বদৌলতে।

 

ছবির গল্প

‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির গল্প আবর্তিত হয় রাধা নামে এক দরিদ্র ভারতীয় নারীর জীবনকে ঘিরে। রাধা এক গ্রামীণ গৃহবধূ। দরিদ্র হলেও তার সুখের সংসার। স্বামী শামু (রাজকুমার) এবং চার সন্তানকে নিয়ে তার জীবন। কিন্তু কৃষক শামু দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়লে তার জীবনে অমানিশা ঘনিয়ে আসে। নিজের পঙ্গুত্বকে সংসারের বোঝা বলে মনে করে এক দিন গৃহত্যাগ করে শামু। স্বামী পরিত্যক্তা সুন্দরী রাধার দিকে  লোভের হাত বাড়ায় গ্রামের ধনী মহাজন। শত অভাব, অনাহার সত্ত্বেও মহাজনের কুপ্রস্তাবে রাজি হয় না রাধা। তার ছোট দুটি সন্তানের অকাল মৃত্যু ঘটে। দুই কিশোর ছেলে রামা ও বিরজুকে নিয়ে কৃষিকাজ চালিয়ে যায় রাধা। দুই ছেলে বড় হয়। রামা (রাজেন্দ্র কুমার) শান্ত ও বাধ্য হলেও প্রতিবাদী বিরজু (সুনীল দত্ত) হয়ে ওঠে ডাকাত। অন্যায়ের প্রতিবাদে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ডাকাত সন্তানের সঙ্গে সংঘাত বাধে নীতিনিষ্ঠ মায়ের। শেষ পর্যায়ে বিরজুকে নিজের হাতে গুলি করে মারেন মা রাধা।

 

কেন ছবিটি নির্মাণ হলো

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দেশপ্রেমমূলক ছবি তৈরির হিড়িক পড়ে বলিউডে। প্রযোজক-পরিচালক মেহবুব খান পরিকল্পনা করেন তিনি ভারত-মাতা বা দেশমাতৃকার রূপ তুলে ধরবেন রূপকের মাধ্যমে। তিনি যখন শ্বাশত ভারতীয় নারীর আত্মত্যাগ ও মহিমা রুপালি পর্দায় চিত্রিত করার পরিকল্পনা করেন তখন নার্গিস ছিলেন হিন্দি ছবির জগতে শীর্ষস্থানীয় নায়িকা। স্বাভাবিকভাবেই তাই ছবির  কেন্দ্রীয় চরিত্র রাধার ভূমিকায় তার নামই প্রস্তাবিত হয়।

 

দিলীপ কুমারের অভিনয়ের কথা ছিল

বিরজুর ভূমিকায় প্রথমে দিলীপ কুমারের কথা ভাবা হয়। কিন্তু দিলীপ কুমার এর আগে অন্য ছবিতে নার্গিসের বিপরীতে রোমান্টিক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। দর্শক হয়তো মা-ছেলে রূপে তাদের  দেখতে চাইবে না। তাই আনকোরা ও অপরিচিত অভিনেতা সুনীল দত্তকে বেছে নেওয়া হয়। আর এই ছবির মাধ্যমেই স্টার হয়ে ওঠেন পাঞ্জাবের ছেলে সুনীল দত্ত।

 

স্মরণীয় দুর্ঘটনা

সিনেমার শুটিং চলছে একটি গ্রামের ভিতর। খড়ের গাদায় আগুন লেগেছে। জ্বলছে পুরো গ্রাম। সেই আগুনের ভিতর দিয়ে ছুটে আসছেন সিনেমার প্রধান অভিনেত্রী নার্গিস। ক্যামেরায় যখন এই দৃশ্য ধারণ হচ্ছে তখন হঠাৎ করেই বাতাসের গতি পাল্টে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রধান অভিনেত্রী আটকে পড়েন আগুনের বৃত্তে। হৈচৈ পড়ে যায় ইউনিটে।  কেউ সাহস পান না তাকে উদ্ধার করার। এমন সময় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছবিটির অন্যতম প্রধান অভিনেতা সুনীল দত্ত। বাঁচান নার্গিসকে। কিন্তু নিজে আহত হন। হাসপাতালে  যেতে হয় তাকে। কৃতজ্ঞ নার্গিস সেবা করেন তার। তারপর দুজনের মধ্যে জন্ম নেয় প্রেম। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির শুটিংয়ে এ ঘটনা ঘটে। যে সিনেমায় তারা অভিনয় করেছিলেন মা ও ছেলের ভূমিকায়।

এই ছবির একটি স্মরণীয় দৃশ্য হলো, গরুর পরিবর্তে ভারবাহী পশুর মতো রাধা নিজেই লাঙ্গল টানার মুহূর্তটি।

 

নার্গিস-সুনীলের প্রেম

সুনীল দত্ত পরবর্তীকালে এক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে জানান, প্রথম দেখাতেই নার্গিসের প্রেমে পড়েন তিনি। ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবির শুটিংয়ের সময় আগুন লাগার  সেই ঘটনায় জীবন বাজি রেখে তাকে উদ্ধার করায় সুনীল দত্তর প্রতি আকৃষ্ট হন নার্গিস। আহত সুনীল দত্তের অনেক সেবাও করেন তিনি। সে সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর প্রেম থেকে পরিণয়।

 

নির্মাতার অনুরোধে গোপনে প্রেম

ছবি মুক্তির আগে প্রেমে জড়ালেও মেহবুব খানের অনুরোধে বিষয়টি তারা গোপন রাখেন। কারণ পর্দায় মা-ছেলের ভূমিকায় যারা অভিনয় করছেন তাদের মধ্যে প্রেম চলছে এমন গুজব ছবির দর্শকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারত। ছবি মুক্তির পরের বছর ১৯৫৮ সালেই সুনীল দত্তকে বিয়ে করেন নার্গিস।

 

যত পুরস্কার

মাদার ইন্ডিয়া ছবিটি শুধু সুপার ডুপার ব্যবসা করেনি, চলচ্চিত্র জগতের জন্য বয়ে এনেছে অসংখ্য সম্মাননা। সর্বভারতীয় ম্যারিটে সেরা ছবি, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা ছবি, সেরা অভিনেত্রী নার্গিস এবং সেরা নির্মাতা মেহবুব খান, প্রথম কোনো ভারতীয় ছবি হিসেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা বিদেশি ভাষার ছবির সম্মাননা লাভ।

সর্বশেষ খবর