বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ : আমিন খান

ভেজালের বিরুদ্ধে আমার এই অভিযান

ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। অকাল মৃত্যু ঘটছে তাদের। গর্ভজাত সন্তানরাও অসুস্থ হয়ে জন্মাচ্ছে

ভেজালের বিরুদ্ধে আমার এই অভিযান

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আমিন খান। শোবিজে কাজের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন তিনি। ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে চালিয়ে যাচ্ছেন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি। এসব বিষয়ে আজ তার ইন্টারভিউ নিয়েছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

দীর্ঘদিন ধরে জনসচেতনতামূলক কাজে সম্পৃক্ত আছেন, এ বিষয়ে কিছু বলুন।

আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরেই ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। অকাল মৃত্যু ঘটছে তাদের। গর্ভজাত সন্তানরাও অসুস্থ হয়ে জন্মাচ্ছে। বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে একসময় ভাবলাম একজন সেলিব্রেটি হিসেবে মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করার যথেষ্ট সুযোগ আর দায়িত্ব রয়েছে। এই বোধ থেকেই এ সচেতনতামূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। আসলে সরকারের একার পক্ষে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। দেশের প্রতিটি মানুষ যদি এমন নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে সুস্থ ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আর কোনো অন্তরায় থাকতে পারে না। আগে একটি গ্রামে একটি মাত্র ওষুধের দোকান দেখা যেত আর এখন পাড়া মহল্লায় মুদির দোকানের মতো অসংখ্য ওষুধের দোকান আর ডাক্তারখানা গড়ে উঠেছে। এর একমাত্র কারণ ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ নানা জটিল রোগে বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ চাইছি। তাদের পরামর্শে আরও উন্নত কাজ করতে চাই।

 

কতটা সফল হতে পারছেন বলে মনে হয়?

দেখুন, হয়তো স্বল্প সময়ে এই অবস্থার বিলোপ ঘটাতে পারব না। কিন্তু সচেতন করার মাধ্যমে প্রোটেকশন তৈরি করতে পারব এবং ধীরে ধীরে একসময় এ মারণঘাতী ভেজালের ভয়াবহতা থেকে এদেশের মানুষকে মুক্ত করতে পারব বলে আমি আশাবাদী।

 

বিষয়টি নিয়ে কীভাবে এগুচ্ছেন?

তিন বছর আগে এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। সংগঠনের নাম দিয়েছি ‘আমরা ভেজালমুক্ত খাদ্য চাই’। সংগঠনটি সরকারিভাবে স্বীকৃত। এ কর্মসূচির স্লোগান হলো- ‘ভেজালমুক্ত খাদ্যের দেশ হবে মোদের বাংলাদেশ’। এই স্লোগান নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের স্কুলে যাচ্ছি, ছাত্রছাত্রীদের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্ট করছি। তারা যেন তাদের মা, বাবা, অভিভাবকদের বোঝাতে পারে যে, তারা যদি খাদ্যে কেমিক্যাল ব্যবহার করে তাহলে সেই খাদ্য তো তাদের সন্তানরাও খাচ্ছে এবং অসুস্থ হচ্ছে। আমার ধারণা বাচ্চাদের দ্বারা তাদের বাবা-মাকে এভাবে সচেতন করা যাবে। বাচ্চারাও সচেতনভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। আমি চাই রুট লেভেলকে শক্তিশালী করে তুলতে। স্কুলে এ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। প্রতি ক্লাসে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান নির্ধারণ করে উদ্বুদ্ধকরণ পুরস্কার ও সার্টিফিকেট প্রদান করি। আমার মতে এই সার্টিফিকেটটি বাচ্চাদের মন-মানসিকতাকে ভেজালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উৎসাহ জোগাবে।

 

এতে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

এক কথায় অবর্ণনীয় সাড়া পাচ্ছি। যখন কাজটি শুরু করি তখন ২০-৩০ জন ছাত্রছাত্রী এতে অংশ নিত। আর এখন কয়েক হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, কৃষক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষকে এই সচেতনতামূলক কাজের আওতায় নিয়ে এসেছি। আজ নোয়াখালির সোনাইমুড়ি স্কুল ও এ মাসেই ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরে কর্মসূচি নিয়ে যাব। আমি বিশ্বাস করি ভেজালের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রম এক দিন একটি ভেজাল ও রোগমুক্ত সুখী বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।

সর্বশেষ খবর