বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

হুমায়ূন আহমেদের নাটক-চলচ্চিত্র-গান

হুমায়ূন আহমেদের নাটক-চলচ্চিত্র-গান

হুমায়ূন আহমেদ একই সঙ্গে নাট্যকার, গীতিকার, পরিচালক এবং নন্দিত সাহিত্যিক। তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় নাটক, গান ও চলচ্চিত্র। তাঁর সঙ্গে নাটক, চলচ্চিত্র এবং গানে কাজ করেছেন অনেকেই। আমরা তাঁদের কাছ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম পুরনো সেই দিনগুলোর কথা।  প্রয়াণের ছয় বছর উপলক্ষে কাছের কিছু মানুষের কথা তুলে ধরেছেন— আলী আফতাব

 

সুবর্ণা মুস্তাফা

একদিন হুমায়ূন আহমেদ আমার বাসায় এলেন। বললেন, ‘আপনি যদি মোনা চরিত্রটি করেন, তবেই আমি ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকটি করব।’ টিভিতে তাঁর শঙ্খনীল কারাগার ধারাবাহিকেও আমি অভিনয় করেছি। পরে তিনি এই নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন।  হুমায়ূন আহমেদ ভালো ভালো ছবি বানিয়ে নিজের একক প্রচেষ্টায় প্রেক্ষাগৃহে দর্শক এনেছেন। টিভির দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন। অনেকে আজ তাঁর হাত ধরে প্রকাশক হয়েছেন।

 

সুবীর নন্দী

হুমায়ূন আহমেদের ‘অয়োময়’ নাটকে আমি প্রথম গান করি। আমি তাঁকে বলব একজন সফল গীতিকবি। গানের মধ্যে তিনি যে ধরনের রূপক ব্যবহার করতেন, যা বাংলা গানে খুব কম খুঁজে পাওয়া যায়। এটি ছিল তার মুন্সিয়ানা। গানের যে ভাব সেটিও খুব পরিষ্কার এবং সহজ-সরল ছিল। যার জন্য তার গান সব মানুষকে স্পর্শ করত। আর গান যখন লিখতেন, একবারে লিখে ফেলতেন।

 

জাহিদ হাসান

হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে একেক সময়ে একেক রকম সম্পর্ক ছিল আমার। কখনো পিতা-পুত্রের মতো, কখনো বন্ধুর মতো আবার কখনো বা বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মতো। ১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। তখন আমরা সবুজছায়া নাটকটির শুটিং করছি গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। রাতে সাপের প্রচণ্ড ভয়। হুমায়ূন ভাই বুদ্ধি দিলেন পায়ে লাইফবয় সাবান মেখে ঘুমাতে। পায়ে সাবান কেন? হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘সাবানে কার্বলিক অ্যাসিড থাকে। পায়ে সাবান মাখলে সাপ আর ধারেকাছে ঘেঁষবে না।’ যে-ই বুদ্ধি সে-ই কাজ এবং বুদ্ধিটা বেশ কাজেও দিল। এমন অনেক মজার মজার স্মৃতি আছে স্যারকে ঘিরে।

 

মাহফুজ আহমেদ

স্যার আমাদের মধ্যে নেই আজ ছয় বছর হলো। তার শূন্যতার জায়গা কেউ পূরণ করতে পারবে না। স্যার সর্বশেষ যেবার দেশে এসেছিলেন আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন কথা প্রসঙ্গে মৃত্যু প্রসঙ্গ এসেছিল। আমি তাঁকে কথা দিয়েছিলাম, যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে আমি প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে কিছু বলব না। এটাই আমার স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা।

 

ফেরদৌস

আমি প্রথম অভিনয় করেছি স্যারের চন্দ্রকথা ছবিতে। এরপর ‘আমার আছে জল’ ছবিতে। এ ছবিটির কাজ করতে গিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায়। আমার বউ লন্ডন থেকে আমার জন্য একটা চেয়ার এনেছিল। শুটিংয়ে আমি ওই চেয়ারেই বসি। একদিন সকালে দেখি, স্যার চেয়ারের ওপর পা তুলে বসে স্ক্রিপ্ট ঠিক করছেন। তখন শাওন এসে স্যারকে বললেন, ‘জানো, তুমি কার চেয়ারে বসেছ?’ স্যার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন, এটা কার চেয়ার?’ শাওন বললেন, ‘এটা হিরোর চেয়ার’। বিষয়টি আমার বউকে ফোন করে বলি। ও স্যারের জন্য ঠিক একই রকম আরেকটি চেয়ার নিয়ে আসে। স্যার ওই চেয়ার দেখে অবাক। বললেন, ‘কী ব্যাপার, এক রাতের মধ্যে চেয়ারের বাচ্চা হয়ে গেল!’

 

সেলিম চৌধুরী

স্যার হাসন রাজার গান পছন্দ করতেন। তিনি আমাকে যখনই ডেকেছেন আমি চলে গিয়েছি। অনেক মজা করে গান শুনেছি। স্যার আমার প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কত সময় কাটিয়েছি তার হিসাব নেই। তাঁর লেখা গানগুলো কেন যেন খুব দরদ দিয়ে গাইতে পারতাম আমি। যা হুমায়ূন সাহেবের অদ্ভুত ভালো লাগত। তার গানের কারণেই সেলিম চৌধুরী শ্রোতাদের এতটা কাছাকাছি যেতে পেরেছে।

 

এজাজুল ইসলাম

হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে শুটিং করতে গিয়েছিলাম বনুর গল্প নাটকের। স্যার বললেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা একটা সুন্দর বাগানবাড়ির। তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, তুমি সব করবে।’ শুরু করলাম জায়গা খোঁজা। অবশেষে বাড়ির জায়গা পেয়ে গেলাম। স্যার দেখতে এলেন। পুরো জায়গা দেখার পর স্যার আমাকে কাছে ডাকলেন, ‘তুমি আমার জীবনের একটা বড় স্বপ্ন পূরণ করে দিলে।’ আমার চোখে তখন পানি।

 

ফারুক আহমেদ

হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন ধরে কাজ করি। হঠাৎ মনে হলো হুুমায়ূন ভাই আমাকে কোনো বই উৎসর্গ করেননি। একদিন স্বাধীন খসরু ফোন করলেন, ‘হুমায়ূন স্যার আপনাকে একটা চমৎকার বই উৎসর্গ করেছেন।’ কথাটা শুনেই আমি তুমুল রোমাঞ্চিত।  খোঁজ নিয়ে দেখলাম হুমায়ূন ভাই আমাকে তাঁর লিলুয়া বাতাস বইটি উৎসর্গ করেছেন।

সর্বশেষ খবর