বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

রানু চরিত্রটা একটু জটিল

রানু চরিত্রটা একটু জটিল

দেবীর সংবাদ সম্মেলনে অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা ♦ ছবি : রাফিয়া আহমেদ

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। ব্যতিক্রমী নানা চরিত্রে অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন ভক্তদের হৃদয়ে। প্রথমবারের মতো প্রযোজক হিসেবে ১৯ অক্টোবর অনম বিশ্বাসের ‘দেবী’ নিয়ে বড় পর্দায় আসছেন। করেছেন রানু চরিত্রে অভিনয়ও। দেবী সিনেমা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন— পান্থ আফজাল

 

”হুমায়ূন আহমেদের যে কোনো চরিত্র নিয়ে কাজ করাটা অবশ্যই রিস্কের। কারণ এখানে সর্বোচ্চটা না দিলে ব্যাপারটা জঘন্য কিছু হয়ে যেতে পারে। আর তার গল্প-উপন্যাসগুলো পাঠক এত বেশি পড়েছে যে, রি-অ্যাকশনের একটা ভয় তো সব সময় থাকে। দেবী ছবিটাও তো হান্ড্রেড পার্সেন্ট রিস্কে ছিল।

 

রানু চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি কেমন ছিল?

রানু চরিত্রটাই তো একটু জটিল, একই সঙ্গে দুজন মানুষ বাস করছে তার ভিতরে। তবে হুমায়ূন আহমেদের রানু থেকে অনম বিশ্বাসের রানু একটু আলাদা, চরিত্রটা একটু অন্যভাবে অ্যাডাপ্ট করা। একদম সাহিত্যের মতো করে তো সিনেমা হবে না।

 

মিসির আলি চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন?

চারপাশে এত ব্যস্ততা, আর জাজমেন্ট করার মতো স্টেজে নেই যে কোনটা কতটা ভালো হচ্ছে। আমার দর্শক সত্তাটাই অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে এই ক’দিনে। যারা হলে গিয়ে দেবী দেখবেন, তাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম।

 

দর্শক যদি মিসির আলি বা রানুকে পছন্দ না করে...

তাহলে পিটুনি খেতে রাজি আছি! হা হা হা।

 

মজা করছেন নাকি সত্যিই?

একশ বার! আমি খুব স্পষ্ট এসব বিষয়ে। তবে ধরে মার দেওয়ার আগে বানানোর সাহসটা যে করেছি, এটির জন্য ধন্যবাদ আগে দিতে হবে।

 

ট্রেইলার দেখে অনেকেই বলেছেন কিছু বিষয় এর সঙ্গে যায় না...

অনম বিশ্বাস দেবীকে এভাবেই দেখাতে চেয়েছেন। যদি এটা আমি বানাতাম, আমি ডিরেক্টর হতাম, হয়তো অন্যরকম হতো, আপনি বানালে হতো আরেক রকম। পরিচালক হিসেবে এই স্বাধীনতাটা সবার আছে। এখানে জোর করে ভয় দেখানোর কোনো ব্যাপার নেই, তবে সিনেমাটা যেহেতু হরর থ্রিলার জনরার, সেখানে ভয় তো থাকবেই!

 

প্রচারণায়ও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে...

আমি হেল্প পাচ্ছি অনেক। চঞ্চল, অনিমেষ, ইরেশ বা শবনম ফারিয়া-সবাই তো করছেনই, এমনকি যারা আমাদের সিনেমার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তারাও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন, প্রশংসা করছেন। তবে আমি মনে করি, বিক্রির জন্য খুব ভালো কাচ্চি বানিয়ে যদি মানুষকে না জানালাম যে এখানে ভালো কাচ্চি পাওয়া যায়, তাহলে কীভাবে হবে?

 

এত প্রচারণার ভিড়ে হুমায়ূনের দেবী হারিয়ে যাচ্ছে না তো?

আমার জায়গা থেকে মনে করি, যারা এটা বলছেন তারা ভুল বলছেন। দেখুন, দেবী ছবিটার জন্যই আমি এই ধরনের প্রচারণায় যাচ্ছি, অন্য একটা ছবির জন্য হয়তো অন্য রাস্তায় হাঁটতাম। এটা পুরোটাই প্রচারণার একটা অংশ, কিন্তু কোনোটাই হুমায়ূন আহমেদকে ছোট করে নয়। দেবীর শাড়িটার কোথাও বিশ্বরঙ নেই, জয়া আহসানও নেই। সেখানে হুমায়ূন আহমেদ আছেন, মিসির আলি আছেন। আছে মিসির আলির লাইনগুলো, মিসির আলির উক্তি। এখন এই জিনিসগুলোর মাধ্যমে দেবী বা মিসির আলিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে তো একটা প্রচারণার আশ্রয় নিতেই হবে, এর বেশি কিছু নয়।

 

নতুন পরিচালক দিয়ে কেন এমন রিস্ক নিলেন?

এর আগে আমি অনেক প্রযোজকের কাছেই নতুন অনেক ডিরেক্টরের জন্য গিয়েছি। অনুরোধ করেছি যে তাকে ছবিটা দেন, তিনি ভালো পারবেন। তখন কিন্তু কেউ টাকা দেননি। খুব খারাপ লাগত তখন। সেই জেদে মাথায় এটা ছিল যে, কোনো দিন যদি ছবি বানাই, নতুন কারও সঙ্গেই কাজ করব। আর অনম নিজে হুমায়ূন আহমেদের বিশাল ভক্ত, তাই ব্যাটে-বলে মিলে গেছে সবকিছু।

 

সিনেমার এ দুর্দিনে প্রযোজক হওয়ার ইচ্ছাটা কেন হলো?

ওভাবে চিন্তাভাবনা করে তো আসিনি, তবে ইচ্ছাটা ছিল প্রযোজনা করার। ভাবছিলাম, কখনো হয়তো নিজেই কিছু একটা করব। সেটা এখনই করতে হবে, বা দেবী-ই যে করব— এরকম কিছু প্ল্যান করে করা হয়নি।

 

প্রযোজক হিসেবে সিনেমা মুক্তির পূর্ব অভিজ্ঞতাটা কেমন?

এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। সেরা কাজটাই দর্শককে দিতে চেয়েছি, তাই টাকার সঙ্গে আপস করার কথাটা ভাবিনি খুব একটা। একবার তো পুরো এডিটিংটা ফেলে দিয়ে নতুন করে করিয়েছি। আর দেখুন, ছবিটার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ স্যার ও মিসির আলি চরিত্রটি বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে। আমি চেয়েছি মানুষ যাতে ভালো একটা এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে হল থেকে বেরোতে পারে।

 

একসঙ্গে অভিনেত্রী ও প্রযোজক, বাড়তি চাপ অনুভব করছেন?

এখনো বুঝতে পারছি না। প্রযোজক টার্মটা নিয়ে আমি নিজেই মজা করি, আমার নিজের কাছেই কেমন যেন লাগে, এর চেয়ে আর্টিস্ট কত কমফোর্টেবল! সিনেমাটাকে ঠিকঠাক মতো দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই আমি খুশি।

 

প্রযোজক হিসেবে দেবী নিয়ে প্রত্যাশা কতটুকু?

প্রথমত আমি একজন অভিনেত্রী, তারপর প্রযোজনায় এসেছি। অবশ্যই চাই আমার ছবি লাভ করুক। এটা কে না চায় বলুন? এই টাকা দিয়ে দামি একটা গাড়ি কিনতে পারতাম। সেগুলো না করে আমি ছবি বানিয়েছি। এই জিনিসটা না একটা পোকার মতো, মাথার ভিতরে একবার ঢুকে গেলে আর বেরোতে চায় না। লাভ-লোকসান এগুলো তখন আর মাথায়ও থাকে না। আমি চাই জয়া আহসানকে বা তার অভিনয় নিয়ে যতটা না আলোচনা হয়, তার চেয়ে বেশি আলোচনা যাতে ছবিটা নিয়ে হয়। দর্শক যাতে ছবিটা দেখে পছন্দ করেন, এটাই আপাতত চাওয়া।

 

দেবী সিনেমা নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে?

আছে। যার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত, সেই হূমায়ুন স্যার আজ বেঁচে নেই। তাকে সিনেমাটা না দেখাতে পারার আক্ষেপ থাকাটা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

 

হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে কাজ করাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ কি?

হুমায়ূন আহমেদের যে কোনো চরিত্র নিয়ে কাজ করাটা অবশ্যই রিস্কের। কারণ এখানে সর্বোচ্চটা না দিলে ব্যাপারটা জঘন্য কিছু হয়ে যেতে পারে। আর তার গল্প-উপন্যাসগুলো পাঠক এত বেশি পড়েছে যে, রি-অ্যাকশনের একটা ভয় তো সব সময় থাকে। দেবী ছবিটাও তো হান্ড্রেড পার্সেন্ট রিস্কে ছিল। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোকে এতই আপন করে নিয়েছে মানুষ, তাদের ভালো না লাগলে পিটুনিই খেতে হবে। তাই এই কাজগুলো করার সাহসটা দেখানোও কিন্তু বিশেষ কিছু।

 

দেবী সিনেমা নিয়ে হুমায়ূনপত্নী শাওনের অভিব্যক্তি কী?

দেবী সিনেমা নিয়ে বরাবরই শাওন পজিটিভ। ট্রেইলার দেখার পর তো আরও বেশি পজিটিভ তিনি। মিসির আলির চরিত্রের গেটআপ থেকে শুরু করে সবই তার অনেক পছন্দ হয়েছে। নুহাশও অনেক এপ্রিসিয়েট করেছে।

 

যারা দেবী পড়েছে, সিনেমা হলে কি প্রত্যাশা নিয়ে যাবে?

আমরা কিন্তু হুবহু বইয়ের মতো করে দেবী বানাইনি। আমি এটা একদম স্পষ্ট করে দিতে চাই। সব জায়গায় বইয়ের দেবীর সঙ্গে পুরোপুরি মিলবে না, কিন্তু এটা বলতে পারি যে, দর্শকের কাছে সেটা অবাস্তব মনে হবে না।

 

দেবীর গল্পটা যে ধরনের, সেখানে গানগুলো হয়তো সিনেমার মূল আবহটা নষ্ট করতে পারে...

অনুপমের যে গানটা, দু-মুঠো বিকেল, সেটা একদমই সিচুয়েশন ডিমান্ড। চরিত্রগুলোর বন্ধনটা দেখানোর জন্যই গানটা।

মমতাজ আপার গানটা তো আমরা শুধু প্রমোশনের জন্যই ব্যবহার করছি, এটা কিন্তু সিনেমায় নেই। জানি অনেকে গান দেখার জন্যও হলে যাবেন, কিন্তু আমাকে এই লোভটা সামলাতে হয়েছে। যত কিছুই হোক, আমরা গল্পের প্রতি ইনজাস্টিস করব না— এটাই ছিল আমাদের কথা।

 

ফেস্টিভ্যালগুলোতে দেবী মুক্তি দেওয়া নিয়ে কিছু ভাবছেন?

এখনো কিছুই ভাবিনি। ছবিটা আগে দর্শক দেখুক। আমার ফেস্টিভ্যাল নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই। তবে অস্ট্রেলিয়ায় রিলিজটা নিশ্চিত হয়েছে। নিউইয়র্কেও মুক্তি পাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর