বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালক

নির্মাণে আছেন কতজন

♦ প্রযোজক সমিতির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০০ জন। মাত্র ৫ থেকে ৮ শতাংশ কাজ করছেন।
♦ পরিচালক সমিতির সদস্য সংখ্যা ৩৭৩ জন। মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ কাজ করছেন।

আলাউদ্দীন মাজিদ

নির্মাণে আছেন কতজন

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উদ্বেগজনক হারে কমছে। এতে বেকার হচ্ছেন নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীরা। পর্যাপ্ত ছবির অভাবে ধারাবাহিকভাবে বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল। চলচ্চিত্রকারদের কথায় অশ্লীলতা, পাইরেসি, নকল, সিনেমা হলের বাজে পরিবেশ, টিভি চ্যানেলে অবাধে দেশি-বিদেশি ছবি আর সিরিয়াল প্রদর্শন, ছবি দেখার নানা ক্ষেত্র তৈরি ও মৌলিক গল্পের চলচ্চিত্রের অভাবে দর্শক দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হল বিমুখ হয়ে পড়েছে। এ কারণে লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় প্রযোজকরা এই অঙ্গন থেকে ক্রমেই দূরে সরছেন। চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সংগঠন হলো প্রযোজক সমিতি। চলচ্চিত্রকারদের কথায় চলচ্চিত্রশিল্পের সার্বিক অবস্থা নির্ভর করে এই সমিতির কর্মকাণ্ডকে ঘিরে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে আছে এটি। নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। নির্বাচন বন্ধ হয়ে আছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। এতে চলচ্চিত্রের অচলাবস্থা আরও ঘনীভূত হয়েছে। সত্তরের দশকে প্রথমে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি নামে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। মূলত চলচ্চিত্রকারদের স্বার্থ সংরক্ষণই হলো এই সমিতির কাজ। ১৯৯৭ সালে প্রযোজক সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবেশক সমিতি। তখন থেকে এর শিরোনাম হয় চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি। এই সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০০ জন। চলচ্চিত্রের অবস্থা মন্দ হওয়ায় এসব সদস্যের মধ্যে মাত্র ৫ থেকে ৮ শতাংশ কাজ করছেন। তাও আবার অনিয়মিত। নিয়মিত কাজ করছে একমাত্র জাজ মাল্টিমিডিয়া। অন্যদিকে, ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৩৭৩ জন। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র ব্যবসা মন্দা হওয়ায় লগ্নিকারকের অভাবে প্রায় পরিচালকের হাতে কোনো কাজ নেই। শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ পরিচালক কাজ করছেন। তাও আবার অনিয়মিত। প্রযোজক সমিতি অচল থাকায় যৌথ আয়োজনের ছবি, অন্য দেশের সঙ্গে ছবি বিনিময়সহ সবক্ষেত্রেই অনিয়ম ও অচলাবস্থা চলছে। দেশীয় ছবি নির্মাণে অপর্যাপ্ততা, মানহীনতা ইত্যাদি কারণে সিনেমা হল বন্ধসহ নানা নেতিবাচক প্রভাবে চলচ্চিত্রশিল্পের অস্তিত্ব গভীর সংকটে পড়েছে।

এ নিয়ে একটি অনলাইন পোর্টাল লিখেছে, ‘অনেক আগেই যৌবন হারিয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র। এখন হারিয়েছে জৌলুস। কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় নেই। যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছেন। প্রযোজক সমিতি  নামে আছে। অথচ চলচ্চিত্রের খারাপ সময়ে সবচেয়ে বড় অবদান এ সমিতিরই রাখার কথা ছিল। কিন্তু এই সমিতির ঘুম ভাঙছে না। চলচ্চিত্রের অন্যান্য সংগঠনের নির্বাচন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হলেও হচ্ছে না শুধু চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাচন। নির্বাচন না হওয়ার কারণ এ সমিতির নেতাদের মধ্যে চলে আসছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। চলচ্চিত্রের দুর্দশা শুরু হয়েছে অশ্লীল সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে। তখন যারা প্রযোজক ছিলেন তারাই চলচ্চিত্র ধ্বংস করে ছেড়েছেন। ধ্বংস করে অনেকেই ছেড়েছেন চলচ্চিত্র ব্যবসা। প্রযোজক সমিতির কোনো কার্যক্রম না থাকলেও নেতা আছেন। এসব নেতার অনেকেই এখন নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে প্রযোজক আসতেন পরিচালকের কাছে, এখন পরিচালক খুঁজে বেড়ান প্রযোজক। খুঁজে আনা প্রযোজক একটি ছবি করার পর আর নতুন করে বিনিয়োগ করতে চান না। কারণ লাভ দূরে থাক লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত আসে না। চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধস নামার পেছনে অন্যতম আর একটি কারণ হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। আশির দশক পর্যন্ত নির্মাতারা সরাসরি সিনেমা হল মালিকের কাছে ছবি নিয়ে যেতেন অথবা সিনেমা হল মালিকরা নির্মাতা থেকে সরাসরি ছবি নিতেন। নব্বই দশক থেকে মধ্যস্বত্বভোগী জন্ম নিলে তাদের দাপটে সিনেমা হল মালিক আর নির্মাতা ঊভয়েই ব্যবসায়িক ক্ষতির কবলে পড়েন। এখন ছবিপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যবসা মাত্র ৪০ লাখ টাকা। তা হলে কোটি টাকা ব্যয় করে একটি ছবি নির্মাণ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে কে আসবেন।

চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু জানান, প্রযোজক যদি মূলধনই ফেরত না পান তা হলে চলচ্চিত্র ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেন কেন। আগে হিট আর ফ্লপ বলে দুটি শব্দ ছিল। এখন বছরে একটি কি দুটি ছাড়া বাকি ছবি চলেই না। নকলের নৈরাজ্য আর পুরনো ফর্মুলা থেকে এখনকার নির্মাতারা বেরিয়ে আসতে পারছেন না। সিনেমা হলে ভালো পরিবেশ নেই। ডিজিটালের নামে চলছে প্রতারণা। সরকার, চলচ্চিত্রের ও সাধারণ মানুষ মিলে টার্গেট করতে হবে ২০ টাকা হারে প্রতি টিকিটে ১ কোটি মানুষ ছবি দেখবে। না হলে চলচ্চিত্র ব্যবসায় কেউ আর বিনিয়োগ করবেন না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর