মামুনুর রশীদ (সভাপতি, টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)
আমাদের এই সংকট তো আজকের নয়, দীর্ঘদিনের। টিভি নাটকে পেশাদারিত্ব মানে আমি বুঝি, অভিনয়ে গুণগত মানের উৎকর্ষ সাধন। যথাসময়ে ঠিকঠাকমতো কাজ করা, সময় মেনে শুটিংয়ে আসা, কথা দিয়ে কথা ঠিক রাখা আর পরিশেষে কাজের পরিধি, ক্ষেত্র ও দক্ষতা অনুযায়ী সম্মানী পাওয়া— আমার কাছে এগুলোই হলো টিভি নাটকে পেশাদারিত্ব। যা আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনুপস্থিত। এসব ঠিক করতে পারলে এই মাধ্যম আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
এস এ হক অলিক (সাধারণ সম্পাদক, ডিরেক্টরস গিল্ড)
এটা সত্য বিষয়। আমাদের মধ্যে এখনো পেশাদারিত্ব তৈরি হয়নি। টিভি নাটকের আজকের এই পরিস্থিতির জন্য ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ নেই, সময়মতো শুটিংয়ে না আসা, ঠিকমতো নিয়ম মেনে শুটিং না করা, শিল্পী সম্মানীর অসামঞ্জস্যতা, স্ক্রিপ্ট ছাড়া শুটিং, পারস্পরিক সৌহার্দ্যের অভাব, পে-চ্যানেল বাস্তবায়ন না করা, বাজেট স্বল্পতা, শিল্পী নির্বাচনে নির্মাতাদের স্বাধীনতাহীনতাই দায়ী। সব সংকট মিটলেই পেশাদারিত্ব সংকট কেটে যাবে।
আহসান হাবীব নাসিম (সাধারণ সম্পাদক, অভিনয়শিল্পী সংঘ)
অনেক সমস্যাই রয়েছে। এরমধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি তো আমরা মিলে বাস্তবায়নই করতে পারলাম না! করতে পারলে অনেক সমস্যা শেষ হয়ে যেত। আরও কিছু সমস্যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই, ন্যূনতম সম্মানী নির্ধারণ হয়নি, বিজ্ঞাপন প্রচারে ভারসাম্যহীনতা, মান নিয়ন্ত্রণে চ্যানেলের উদাসীনতা, নাটকের মূল্য কমে যাওয়া, চরিত্রাভিনেতাদের হারিয়ে যাওয়া, নির্মাণে নিম্নমুখী প্রতিযোগিতা, ভুয়া টিআরপি সিস্টেম তো আছেই। পে-চ্যানেল নেই এদেশে; থাকা উচিত বলে মনে করি।
এজাজ মুন্না (সাধারণ সম্পাদক, নাট্যকার সংঘ)
টিভি নাটকে পেশাদারিত্ব যদি না থাকে তাহলে এই পেশা কেন, কোনো পেশাই আর টিকে থাকবে না! পেশাদারিত্ব ছাড়া টিভি সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করা যাবে না। আর টিভি নাটককে শিল্প ঘোষণা করতে হবে। আমাদের প্রধান দুইটি সমস্যা রয়েছে— সৃজনশীল সমস্যা আর নৈতিক সমস্যা। আর কি লিখব, কি লিখব না, তা বোঝা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা ইতিমধ্যে মিটিং করেছি যে, পাণ্ডুলিপি ছাড়া নাটক কেউ করতে পারবে না।
আফরোজা বানু (অভিনেত্রী)
যখনই টেলিভিশন নাটকের শুটিংয়ে ডাকবে, তখনই হাজির হওয়া যাবে না। আমাদের কাজের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকতে হবে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকতে হবে। পরিবারকে সময় না দিলে পরিবার টেকানো সম্ভব নয়।
আজাদ আবুল কালাম
(নাট্যকার, নির্মাতা ও অভিনেতা)
এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, অথচ এগুলোতে কী চলবে আর কী চলবে না, সে বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। এর দায় কর্তৃপক্ষের। সবাইকে কেন টেলিভিশন চ্যানেল খোলার অনুমতি দিতে হবে? অন্যদিকে আমরা অভিনয়শিল্পীরা নিজেকে দক্ষ করে তোলার বদলে একে অন্যকে দোষারোপ করছি আর ভিখিরির মনোভাব নিয়ে টিভি কর্তৃপক্ষের কাছে ধরনা দিচ্ছি। মন্দের ভালো খুঁজতে খুঁজতে আমরা মন্দের ভিতরে ডুবে গেছি।
মোশাররফ করিম
(অভিনেতা)
অনেক কাজ করলেও আমি আসলে তৃপ্ত নই। অনেক টাকা রোজগার করি, কিন্তু তা একটা ভালো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে চাই। নাটকের পেছনে যারা কাজ করছেন, তাদের যথাযথ সম্মানী দিতে হবে। আর এ জন্য নাটকের বাজেট বাড়াতে হবে।
চঞ্চল চৌধুরী (অভিনেতা)
চ্যানেল বা এজেন্সির লেজুড়বৃত্তি না করে নিজেদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত একজনও কাজ করব না, সে রকম মনোভাব থাকতে হবে। নিজেদের শিরদাঁড়া টানটান করে কাজ করতে হবে।
শাহরিয়ার নাজিম জয় (অভিনেতা ও নির্মাতা)
অভিনয়শিল্পীদের আজকের এ অবস্থা বদলাতে টেলিভিশনের ওপর থেকে নিভর্রশীলতা কমাতে হবে। ভেবে দেখতে হবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কথা। সেখানে অনেক বাজেট নিয়ে অপেক্ষা করছেন উদ্যোক্তারা।