সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুত্রের পাশে বাবা শাকিব

আলাউদ্দীন মাজিদ

পুত্রের পাশে বাবা শাকিব

অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই একাগ্রতা আর দক্ষতা দেখিয়ে ঢালিউডের শীর্ষ নায়কের আসনে উপবিস্ট হয়ে আছেন শাকিব খান। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে প্রেমের ক্ষেত্রেও বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। অপুকে বধূ করে ঘরে তুলে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন। অপুও স্বামী শাকিবের প্রতি সর্বদা আনুগত্য দেখিয়ে ভালোবাসায় অবিচল ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে খুনসুটি হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। অন্য দশটি সংসারের মতো শাকিব-অপুর সংসারেও বিরহ বিচ্ছেদের ঝড় উঠেছিল। তারপরও দুজনই কিন্তু সন্তানের মঙ্গল কামনায় সেই ভাঙা সংসারের ছায়া আদরের ধন একমাত্র শিশুপুত্র জয়ের ওপর পড়তে দেননি। নিজেদের মনোমালিন্য দূরে ঠেলে দিয়ে দুজনই সমানভাবে জয়ের পাশে ছায়া হয়ে রয়েছেন। জয়কে স্কুলে ভর্তি করাতে গত সপ্তাহে শাকিব আর অপু একসঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে জয়কে ভর্তি করিয়েছেন তারা। গত চার দিন ধরে জয় জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছে। শাকিব সারাক্ষণ জয়ের খবরাখবর রাখছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে ফোন দিয়ে অপুর কাছ থেকে জয়ের শারীরিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। জয়ের সঙ্গেও কথা বলছেন। সান্ত্বনা দিচ্ছেন জয়কে। জয়ও বাবাকে কাছে পেতে পাপা পাপা বলে কাঁদতে থাকে। শাকিব পুত্রকে দেখতে ছুটে আসছেন। অপু জয়কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে দিনরাত ছুটছেন। জয়ের আপডেট জানাচ্ছেন শাকিবকে। সন্তানের ওপর যাতে নিজেদের পোড়-খাওয়া সম্পর্কের নেতিবাচক ছায়া না পড়ে সে জন্য অপুও সব কষ্ট বুকে পাথরচাপা দিয়ে জয়কে নিয়ে শাকিবের পাশে হাঁটছেন। অপু বলেন, শাকিবের সঙ্গে আমার সম্পর্কের দূরত্ব যতই দীর্ঘ  হোক না কেন, জয়ের স্বার্থে এই দূরত্ব সব সময় ঘুচিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। না হলে জয় যখন একসময় বুঝতে শিখবে তখন বাবা-মায়ের ভাঙা সম্পর্ক তার মনকে বিষিয়ে দেবে। তার মানসিকতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে। এটি আমি যেমন চাই না, তেমনি শাকিবও চান না। তাই জয়ের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা দুজন একসঙ্গে তার পাশে থাকছি। শাকিবও পিতা হিসেবে সন্তানের মঙ্গল কামনায় তার সব ধরনের টেককেয়ার করছেন। সন্তানের জন্য মা-বাবার এমন ত্যাগ দেখে এখন চলচ্চিত্রকার আর তার ভক্তরা বলছেন, দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপড়েন থাকেই। অনেক সময় দেখা যায়, মা-বাবার দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি বা বিচ্ছেদ হলে তারা সন্তানের দিকে নজর না দিয়ে পরিবেশ বিষিয়ে তোলে। সন্তানের কর্তৃত্ব দাবি করে আইন-আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়। শাকিব-অপু তা করেননি। এ জন্য তাদের নির্ধিদ্বায় এপ্রিসিয়েট করা যায়। তারা অন্য দশটি ভাঙা পরিবারের জন্য আজীবন মডেল হয়ে থাকবেন। আলাদা থেকেও এবং বিবাহবিচ্ছেদের পরও কীভাবে সন্তানের মঙ্গল কামনায় হাসিমুখে একসঙ্গে হাঁটা যায় তা শাকিব-অপুর কাছ থেকেই  শিখা যায়। চলচ্চিত্রে যেমন শাকিব-অপু সুনামের সঙ্গে সেরা জুটি হয়ে ছিলেন তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও তারা বেশ ভদ্র-সভ্য এবং মহানুভব ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে রইলেন এবং সবার বিশ্বাস আগামীতেও এভাবে থাকবেন। 

২০০৬ সালে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে গিয়ে মনের আদান-প্রদান হয় শাকিব-অপুর। মনের টানে ২০০৮ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। দুটি মন-প্রাণ এক হয়েছিল উত্তাল ভালোবাসার ঢেউয়ে। এরপর ২০১৬ সালে সন্তান। যে কোনো দাম্পত্য সম্পর্কে ঝড়-বৃষ্টি থাকে। আলো-আঁধারির খেলা চলে। বিরহের অন্ধকার দীর্ঘস্থায়ী হয় না। নিকষ কালরাতের শেষে রক্ত রাঙা রবি ভোরের উজ্জ্বলতা আনে। শাকিব-অপুর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। দুদিকে ফেরানো দুটি মুখ এখন আবার মুখোমুখি হয়েছে। বিচ্ছেদেও বেজে উঠেছে মিলনের সুর। সম্পর্কের ভাঙা-গড়ার খেলার নেপথ্য কারিগর তাদের আদরের ধন একমাত্র শিশুপুত্র জয়। জয়ের টানে শাকিব বার বার ছুটে এসেছেন অপুর নীড়ে। অপুও জয়ের স্বার্থের কথা ভেবে ছুটে যাচ্ছেন শাকিবের ভালোবাসার উঠানে। সবার কথা, জয়ই পারবে ঢালিউডের অন্যতম এই সেরা জুটি, মানে তার মা-বাবাকে আবার এক করে দিতে। বিচ্ছেদের পর শাকিব-অপুর জীবনে আবার মিলনের শানাই বেজে ওঠা এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার, বলছেন শাকিব-অপুর ঘনিষ্ঠজনরা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর