শিরোনাম
সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

গান বাড়লেও পাচ্ছে না জনপ্রিয়তা

গান বাড়লেও পাচ্ছে না জনপ্রিয়তা

সংখ্যার বিচারে বর্তমানে গান প্রকাশ পাচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। অনলাইনের কল্যাণে ঈদ বা কোনো উৎসব ছাড়াই প্রতি মাসে বাজারে আসছে নতুন-পুরনো শিল্পীদের নিত্যনতুন গান। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রকাশ হচ্ছে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও। তার মধ্যে কোন গানটা জনপ্রিয় হলো তা বের করা বেশ মুশকিল। অনেকেই হয়তো বলবেন, যে গানের ভিউ বেশি সেই গানটাই জনপ্রিয়। আসলেই কি জনপ্রিয় গানের সংজ্ঞা এমন? সাময়িক ভাইরাল হওয়া গানকে কী জনপ্রিয়তার তকমা দেওয়া যায়। এসব গান তো কিছু সময়ের জন্য উন্মাদনা ছড়িয়ে আবার বাতাসেই মিলিয়ে যায়। অস্থির এই গানের বাজারে কে বা কারা গান করছে অনেকেই হয়তো জানেন না। আমরা সংগীতাঙ্গনের কয়েকজন গুণী মানুষের মুখে জানার চেষ্টা করব এই বিষয় নিয়ে। আর বিষয়টি তুলে ধরেছেন-  আলী আফতাব

 

সাবিনা ইয়াসমিন

এখনকার ছেলেমেয়েদের গান শোনা হয়। ভালোই গাইছে। তবে সবাই খুব ভালো গাইছে তা বলতে পারছি না। এখন এত বেশি শিল্পী, কে কোন গান গাইছে, মনে রাখা মুশকিল। তবে কিছু কিছু গান ভালোই লাগে। কিন্তু ভালোলাগা গানের সংখ্যা কম। আমার কাছে আরও একটি বিষয় মনে হয়। আগে যে কোনো বিশেষ দিবসে শ্রোতারা অপেক্ষায় থাকত ভালো কিছু গানের জন্য। আর সেই সময় ভালো গানের অ্যালবাম প্রকাশের সংখ্যাটা ছিল বেশি। এখন অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু বাড়েনি গুণগত মানের গানের সংখ্যা।

আবার কেন জানি মনে হয় আমাদের মধ্যে ভালো শ্রোতাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর জন্য হয়তো আমরা নিজেরাও দায়ী। আমরা যদি শ্রোতাদের ভালো গান উপহার দিতে পারতাম তারা হয়তো আজও ভালো গানের জন্য অপেক্ষায় থাকত।

 

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

এখন তো সবকিছুই আধুনিক হয়ে গেছে। গানের মধ্যেও এই ছায়া পড়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গানেও পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন মানে মন্দ কিছু নয়। গান হচ্ছে মনের খোরাক। তাই পরিবর্তনের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেই তা মন্দ হয়ে যায়। আমি জনপ্রিয়তা মানে বুঝি, যে গান ঘরে পৌঁছবে, ঘরের প্রায় প্রতিটি মানুষ সে গানটি সম্পর্কে জানবে, আমি তাকে জনপ্রিয় বলব। এখনকার কয়টি গান আমাদের ঘরে পৌঁছয়। কয়টি গান মানুষের মুখে মুখে আছে। এখন অধিকাংশ গান কিছু সময়ের জন্য মানুষের মুখে থাকে তারপর হারিয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে, গানের কথায় জীবনবোধের অভাব, সুরের চেয়ে যন্ত্রের আধিক্য, দ্রুত উচ্চারণের ফলে গান এখন মানুষের কাছে দুর্বোধ্য। গান যদি মানুষের মনের কথা দিয়ে তৈরি হয় তবেই তা স্থায়িত্ব পাবে।

 

শহীদুল্লাহ ফরায়েজী

সংগীত হচ্ছে আত্মার খোরাক। মানুষের ভিতর যতদিন আত্মা ও হৃদয় থাকবে ততদিন সংগীত থাকবে। সত্যের কাছে অবস্থান করলে গানের মাঝে প্রাণের ছোঁয়া আসবে। যে গানে জীবনের নৈতিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে না, পরম সুন্দরের দিকে ধাবিত হওয়ার শক্তি দেয় না, আত্মিক শক্তিতে বলীয়ান হওয়া যায় না সেই গান অবশ্যই ক্ষণস্থায়ী। অমরত্বের জন্য গানকে হৃদয় ও আত্মার সঙ্গে সংযুক্ত করে রচনা করতে হবে। কারণ সংগীতেই সংগীতের প্রাণ আর ঐতিহ্য নিহিত। চলচ্চিত্রের গান একসময় ছিল জীবনমুখী ও নৈতিকতাপূর্ণ। গল্পের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত, মাখামাখিপূর্ণ। তাই চলচ্চিত্রের সেই গান মানুষের হৃদয়কে দোলা দিত, তাড়িত করত। সেই অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে চলচ্চিত্রের গানকে আবারও জীবন ও আত্মার কাছে নিয়ে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

 

সৈয়দ আবদুল হাদী

আমাদের সময় গান লিখতে রীতিমতো পড়ালেখা করতে হতো। যারা কাব্যচর্চা করতেন তারাই গান, গল্প লিখতেন। এখন ইচ্ছা করলেই যে কেউ গীতিকার হয়ে যেতে পারছেন। বিষয়টি যেন একেবারেই সহজ হয়ে গেছে। শ্রোতারা তো বোঝেনই না শিল্পীরা কী গান গাইছেন। এক কথায় এখনকার গানে জীবনবোধ, শিক্ষা এবং গভীরতা বলতে কিছুই নেই। ভালোলাগা তো পরের বিষয়।

এ ছাড়া আগে বিশেষ দিবসে অনেক ভালো ভালো গান প্রকাশ হতো। এখনো হয় কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে আগে ভালো গানের সংখ্যা বেশি ছিল আর এখন অনেক অডিও প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও ভালো গানের সংখ্যা কমে গেছে। একটি ভালো গানের জন্য ভালো কিছু কথার প্রয়োজন। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের ভালোবাসার কথা দিয়ে গান হয় না। গান হতে হবে সার্বজনীন।

 

খুরশীদ আলম

গান হচ্ছে গুরুমুখী বিদ্যা। সাধনার বিষয়।

দুই-একটি গান তুলতে পারলেই নিজেকে শিল্পী ভাবা শুরু করে। এখন গুরুর কাছেও কেউ দীক্ষা নেয় না। সাধনাও করে না। তাই গান প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। আগে একটি গান তুলতে কয়েক মাসও সময় লেগে যেত। কথা, সুর, গায়কি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতো। আর এখন মুহূর্তেই লেখা থেকে শুরু করে এক বসায়ই গেয়ে ফেলা হচ্ছে। তাই এসব গান আর প্রাণ ছুঁতে পারছে না। মানে আঁতুড়ঘরেই গানের মৃত্যু হচ্ছে। এখন একেবারেই যে ভালো গান হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। এর পরিমাণ নিতান্তই স্বল্প। এ স্বল্পতা দিয়ে এ দেশের ঐতিহ্য হিসেবে সংগীতকে ধরে রাখা যাবে না। ভালো গানের জন্য ভালো কথার প্রয়োজন। কিন্তু এখন কথা যাই হোক ভিডিও নির্মাণ হবে অনেক টাকা দিয়ে।

এ অবস্থার উত্তরণে ওই যে বললাম গুরুর দীক্ষা আর সাধনা অত্যন্ত জরুরি।

সর্বশেষ খবর