সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ → জাকিয়া বারী মম

প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার আনন্দ নিতে শিখেছি

প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার আনন্দ নিতে শিখেছি

জনপ্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। দীর্ঘদিন ধরে উপহার দিয়ে যাচ্ছেন বৈচিত্র্যময় ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের নাটক-টেলিফিল্ম। বর্তমানেও বেশকিছু চলচ্চিত্রে কাজ করছেন তিনি। করোনা প্রভাবে সব শুটিং বন্ধ থাকায় আপাতত রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুঠোফোনে তার সঙ্গে কথা বলেছেন-  পান্থ আফজাল

 

কেমন আছেন?

আমি আছি, চলছে। সবাই যেমন আছে আমিও তেমন আছি।

 

এখন কি নিজের বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন?

এখন উত্তরায় আছি। শনিবার মায়ের বাসা থেকে এখানে এসেছি। উনি (শিহাব শাহিন) তো এখানে একা ছিলেন। তাই তার জন্য এই আসতে হলো।

 

মায়ের বাসায় কতদিন ছিলেন?

প্রায় ২১ দিন। করোনার কারণে মায়ের বাসা (এলিফ্যান্ট রোড) থেকে আর বের হতে পারিনি তখন।

 

দেখলাম শিহাব ভাইয়ের তৈরি করা রান্নার ছবিসহ ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন। সব কি তিনি একাই করেছেন?

রান্না তিনিই করেছেন আর আমি পুরো রান্নাঘর পরিষ্কার করেছি। তিনি রান্না করেছিলেন খিচুড়ি, ডিম ভুনা। আর সঙ্গে লেবু-মরিচের সালাদ। তবে সত্যি বলছি, রান্না কিন্তু অনেক টেস্টি হয়েছে।

 

বাসায় থেকে আর কি কি করছেন?

সময় কাটছে অনলাইনে আড্ডা মেরে। গান গেয়ে, গান শুনে বা কখনো কখনো ছবি এঁকে। খুব যে খারাপ সময় যাচ্ছে তা নয়। আবার মাঝে মাঝে সবাই একই মিউজিক ছেড়ে নাচানাচি করি।

এছাড়াও নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য বাসার কাজও করছি টুকটাক। বিকাল হলে বারান্দায় যাই। যদিও আমি ছবি আঁকতে পটু নই, তবুও সাংবাদিক, নার্স, চিকিৎসক, পুলিশ, পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত কর্মী এবং দিনমজুরদের সম্মান দেখাতে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই কিছুদিন আগে একটি ছবি এঁকেছিলাম। কয়েকদিন আগে একটি গানে অংশ নিয়েছিলাম অনলাইন প্লাটফর্মে। গানটির শিরোনাম ‘হার মানব না’।

এছাড়াও অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য হিসেবে ফান্ড সংগ্রহ করার কাজে ব্যস্ত আছি, মিটিং করছি সবাই ফোনে ও ভিডিও কলে। এছাড়াও বই পড়ছি, মুভি দেখছি, নামাজ আর ঘুম- এভাবে কেটে যাচ্ছে দিন।

 

জেনেছি বাসায় থেকে সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেসমূলক ভিডিও বানাচ্ছেন?

হ্যাঁ বানাচ্ছি। মানে নিজে নিজেই রেকর্ড করে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের প্লাটফর্মের জন্য করছি।

 

মানুষের পাশে কীভাবে দাঁড়াচ্ছেন?

বাসায় থেকেও সবার জন্য কাজ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। সামাজিকভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছি। সোশ্যাল অ্যাওয়ারনেস ভিডিও বানাচ্ছি। মানুষকে করোনা সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছি। শিল্পী হিসেবে যতটুকু করতে পারি, তাই করছি। আশা করি, দ্রুত এই ক্রান্তিকাল কেটে আসবে সুন্দর সকাল।

 

এই ক্রান্তিকাল নিয়ে আপনার কি উপলব্ধি?

সময়টা কঠিন। কিন্তু ধৈর্য ধরতে হবে। আর এ সময়টা আমার জীবনের অনেক বড় লার্নিং। এটা আসলে উপলব্ধির সময়। দায়িত্বশীল হওয়ার ও কমিটমেন্ট রক্ষা করার সময়। যা স্বাভাবিক জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর মানুষ হিসেবে মানবিক গুণের চর্চা করতে না পারলে যে ভয়াবহ বিপদ, তা প্রকৃতি বুঝিয়ে দিল।

 

মানুষ এই সময়ে কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আপনার কাছে বিষয়টি কতটা ভালো লাগার?

খুবই ভালো লাগছে। আর মানুষ একা বাঁচতে পারে না। মানুষ সামাজিক জীব। তাই নিজেকে নিজে সারাক্ষণ না ভেবে চারপাশের মানুষের কথা ভাবা উচিত। কারণ চারপাশ ভালো থাকলে মানুষ নিজেও ভালো থাকতে পারবে। আমি সবসময় বলি, ভালো থাকাটা সামগ্রিক, একা ভালো থাকা যায় না। ভালো থাকতে হলে ভালো রাখতে হয়।

 

সবাই আপনার খোঁজ নিচ্ছে।

আমাকে আমার পরিবার, বন্ধুরা, ইন্ডাস্ট্রির মানুষ, মিডিয়ার মানুষ অনেক পছন্দ করে। এটাই মনে হলো এ সময়। সবাই খোঁজ নিচ্ছেন। এ সময় সবার সঙ্গে যুক্ত থাকাটা মনে সাহস দেয়। আমি এক্টরস একুইটিকে ধন্যবাদ জানাই পাশে থাকার জন্য। আমিও আন্তরিকতার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

 

জীবনে কোনো আক্ষেপ রয়েছে?

না, নেই। প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার আনন্দ আমি নিতে শিখেছি। ওই যে বললাম উপলব্ধির কথা। তাই কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া  আমার আর কিছু বলার নেই। এই কৃতজ্ঞতা বেঁচে থাকার প্রতি, আমার বন্ধু, পরিবার ও প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি। আর মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি।

 

তাহলে জীবন পরিপূর্ণ বলা যায়...

হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি আসলে অভিনয় ছাড়া জীবনে কিছুই করতে চাইনি। এদেশের মানুষ, ইন্ডাস্ট্রি আমাকে সেই পরিচয়টাই দিয়েছে। ধন্যবাদ সবাইকে। বেঁচে থাকলে এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার চেষ্টা করব ভালো ভালো কাজ দিয়ে, ইনশাল্লাহ!

সর্বশেষ খবর